সাংবাদিক বৈঠকে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ।
রাজ্যে বিজেপি-র উত্থানে ভয় পেয়ে গিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই রথযাত্রায় অনুমতি দেয়নি তাঁর সরকার। কিন্তু ঘোষিত তিনটি রথযাত্রা তাঁরা করবেন। এবং প্রত্যেকটি রথযাত্রার সূচনায় তিনিই থাকবেন। শুক্রবার নয়াদিল্লিতে দলীয় সদর কার্যালয়ে বসে সাংবাদিক সম্মেলনে এমনটাই বললেন বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ।
বিজেপি-র পূর্ব ঘোষিত ‘গণতন্ত্র বাঁচাও যাত্রা’ কর্মসূচির আওতায় তিনটি রথযাত্রা হওয়ার কথা ছিল। কোচবিহার থেকে প্রথম রথযাত্রার সূচনা হওয়ার কথা ছিল এ দিন। সেই সূচনা অনুষ্ঠানে থাকার কথা ছিল অমিত শাহের। কিন্তু, প্রশাসন ওই রথযাত্রার অনুমতি দেয়নি। এর পর বিজেপি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হলেও কোনও সুরাহা মেলেনি। আজ ওই বিষয়ে ফের শুনানি চলছে ডিভিশন বেঞ্চে। এই পরিস্থিতিতে কোচবিহারের রথযাত্রা স্থগিত করে বিজেপি। অমিত এ দিন বলেন, ‘‘আমরা ২৯ অক্টোবর চিঠি দিয়ে অনুমতি চেয়েছিলাম। তার পর বারংবার মনে করানো হয় রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিব এবং পুলিশের শীর্ষ কর্তাদের। কিন্তু, অনুমতি মেলেনি। আমরা স্পষ্ট ভাবে জানাচ্ছি, রথযাত্রা স্থগিত করা হয়েছে। বাতিল করা হয়নি। বাংলায় রথযাত্রা নিশ্চিত হবে। এবং সব ক’টার সূচনায় আমিই থাকব।’’
পশ্চিমবঙ্গে একের পর রাজনৈতিক সংঘর্ষের উদাহরণ তুলে ধরে এ দিন অমিত একহাত নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। এ ভাবে যে বিজেপিকে আটকানো যাবে না, সে বিষয়ে সরাসরি মমতাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন অমিত শাহ। তাঁর দাবি, সাত বছর ধরে রাজ্যে তৃণমূলের অপশাসন চলছে। গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে। সমস্ত বাধা অতিক্রম করে পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে সাত হাজারের বেশি আসনে জিতেছে বলে দাবি করেন অমিত। এর পরেই তাঁর মন্তব্য, “সেই কারণেই মমতা এবং তৃণমূল ভয় পেয়ে মরিয়া হয়ে উঠেছে বিজেপির রথযাত্রা আটকাতে।” প্রয়োজনে এই রথযাত্রা ইস্যুতে যে তাঁরা সুপ্রিম কোর্টে যাবেন, তা-ও এ দিন জানিয়েছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি। স্পষ্ট করে জানান, রথযাত্রার কর্মসূচি থেকে তাঁরা সরে আসবেন না। প্রশাসন অনুমতি না দেওয়ায় বিজেপি আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে। অমিতের দাবি, আদালতকে নথি দিয়ে তাঁরা প্রমাণ দেবেন যে রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে কোথাও কোনও অশান্তি হয়নি।
অমিত এ দিন রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কঠোর সমালোচনা করেন। বিভিন্ন অপরাধমূলক সূচকে পশ্চিমবঙ্গ যে জাতীয় স্তরে শীর্ষে রয়েছে, সে কথাও বলেন তিনি। অভিযোগ করেন, গোটা রাজ্যে মাফিয়া রাজ চলছে। পরিসংখ্যান তুলে ধরে জানান, সারা দেশের মধ্যে রাজনৈতিক হত্যায় শীর্ষে বাংলা। দেশের ৫৪ শতাংশ মানুষ পাচার হয় বাংলা থেকে। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে অস্ত্র কারখানার হদিশ মেলার ঘটনায় পুলিশ-প্রশাসনের গাফিলতিকেই দায়ী করেছেন অমিত। তিনি বলেন, “বাংলায় আজ বোমার আওয়াজে রবীন্দ্রসঙ্গীত চাপা পড়ে গিয়েছে।” সামগ্রিক অপরাধের পরিসংখ্যানেও উত্তর প্রদেশ এবং বিহারের উপরে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ বলে দাবি করেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি।
আরও পড়ুন: ‘জেনে কথা বল’, বললেন মমতা, ‘জেনেই বলছি’, পাল্টা সুফিয়ান
আরও পড়ুন: ডিএ-র দাবিতে ক্ষোভ সর্বত্র, বদলি হওয়া কর্মীদের অভ্যর্থনা নতুন অফিসে
গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় রাজ্যে যে বিজেপির কর্মীরা খুন হয়েছেন, সেই তদন্ত কত দূর এগলো? এ দিন সে প্রশ্নও তোলেন অমিত। আইনশৃঙ্খলার পাশাপাশি দুর্নীতির প্রসঙ্গ তুলে বলেন, ‘‘বাংলায় মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হতে গেলে ১৫ লাখ ঘুষ দিতে হয়। কলেজে ভর্তি হতে গেলে ৬০ হাজার টাকা।’’ এমনকি এক এক বিষয়ের জন্য এক এক রকম রেট-ও রয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন তিনি। বিজেপি সভাপতির অভিযোগ, রাজ্য প্রশাসনের রাজনীতিকরণ করা হয়েছে মমতার আমলে। দুর্গাপুজোর বিসর্জন বা রাম নবমী, কোনও উৎসবেই প্রশাসন অনুমতি দেয় না বলে অভিযোগ তোলেন অমিত। মমতাকে হুঁশিয়ারি দিয়ে অমিত বলেন, ‘‘রথযাত্রা রুখে বা অনুমতি না দিয়ে বাংলার মানুষকে আটকে রাখা যাবে না। এতে মানুষের রাগ আরও বাড়িয়ে দিচ্ছেন। এর জবাব মানুষ ২০১৯-এর নির্বাচনে দেবে।”
তবে কি তাঁরা পশ্চিমবঙ্গে রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবি জানাবেন? অমিত বলেন, ‘‘রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসনের কোনও প্রয়োজন নেই। কারণ আমরা নিশ্চিত, বাংলার মানুষ ভোট দিয়ে পরিবর্তন আনবেন। তাঁরা পরিবর্তনের জন্য মুখিয়ে রয়েছেন। আগামী নির্বাচনেই রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় আসবে।”
(বাংলার রাজনীতি, বাংলার শিক্ষা, বাংলার অর্থনীতি, বাংলার সংস্কৃতি, বাংলার স্বাস্থ্য, বাংলার আবহাওয়া - পশ্চিমবঙ্গের সব টাটকা খবর আমাদের রাজ্য বিভাগে।)