মুসলিমে ‘না’, অন্যদের স্বাগত সঙ্ঘ ও বিজেপির

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ব্যাখ্যা, উদ্বাস্তু নিয়ে সঙ্ঘ পরিবারের একটি পুরনো তত্ত্ব আছে। অমুসলিমদের ক্ষেত্রে ‘শরণার্থী’ এবং মুসলিমদের ক্ষেত্রে ‘অনুপ্রবেশকারী’ শব্দ দু’টি ব্যবহার করে তারা সাম্প্রদায়িক বিভাজন তৈরি করতে চায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০১৮ ০৪:২১
Share:

প্রতীকী ছবি।

বাংলাদেশ থেকে আসা উদ্বাস্তুদের ক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িক বিভাজন রেখা টেনে দিল বিজেপি এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। উভয়েই বুধবার জানিয়ে দিল, বাংলাদেশ থেকে আসা মুসলিমদের কোনও ভাবে এ দেশে থাকতে দেওয়া হবে না। তবে হিন্দু, বৌদ্ধ-সহ অন্যরা এলে তাঁদের নাগরিকত্ব দিতে হবে।

Advertisement

বিজেপি দেশের শাসক দল এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদ হল সঙ্ঘ পরিবারের শাখা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ব্যাখ্যা, উদ্বাস্তু নিয়ে সঙ্ঘ পরিবারের একটি পুরনো তত্ত্ব আছে। অমুসলিমদের ক্ষেত্রে ‘শরণার্থী’ এবং মুসলিমদের ক্ষেত্রে ‘অনুপ্রবেশকারী’ শব্দ দু’টি ব্যবহার করে তারা সাম্প্রদায়িক বিভাজন তৈরি করতে চায়। এ দিনের বক্তব্যের পরেও তাই বিভিন্ন মহলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। বিরোধীরা বিষয়টিকে গেরুয়া শিবিরের ‘নির্বাচনী চক্রান্ত’ ও ‘চেনা কৌশল’ বলে ব্যাখ্যা করেছে। সমালোচনা করেন বিশিষ্ট জনেরাও।

বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ আগেই অভিযোগ করেছিলেন, সংখ্যালঘু ভোট ব্যাঙ্ক অটুট রাখতে অনুপ্রবেশকারীদের জায়গা করে দিচ্ছে রাজ্য সরকার। এ দিন বিশ্ব হিন্দু পরিষদের ক্ষেত্রীয় সংগঠক সম্পাদক শচীন্দ্রনাথ সিংহ সাংবাদিক সম্মেলন করে দাবি করেন, অসমের পর পশ্চিমবঙ্গেও নাগরিকপঞ্জি হওয়া উচিত। তাঁর বক্তব্য, ‘‘বাম আমলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলতেন, সিপিএম অনুপ্রবেশকারীদের ভোটার কার্ড পাইয়ে দিয়ে ভোটের রাজনীতি করছে। অথচ সেই নেত্রীই এখন সরব কারণ, ক্ষমতায় এসে তিনি সংখ্যালঘু তোষণের রাজনীতি শুরু করেছেন।’’ শচীনবাবুর অভিযোগ, অসম থেকে পশ্চিমবঙ্গে অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা অসমের চেয়েও বেশি।

Advertisement

কার্যত শচীনবাবুর সুরেই এ দিন আসানসোলে রাজ্য বিজেপির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু বলেন, ‘‘বাংলাদেশ থেকে বহু হিন্দু, বৌদ্ধ অত্যাচারিত হয়ে এ-দেশে আসছেন। তাঁরা শরণার্থী। প্রয়োজনে নাগরিক অধিকারের আইন সংশোধন করে তাঁদের নাগরিকত্ব দিতে হবে। কিন্তু সংখ্যালঘুদের কোনও ভাবেই এ দেশে থাকতে দেওয়া হবে না।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, বাংলাদেশ থেকে যাঁরা এ-দেশে এসেছেন, তাঁদের অনেকরই থাকার বৈধ অধিকার নেই, তাঁদের বার করে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

গেরুয়া শিবিরের এ দিনের বক্তব্যের নিন্দা করে তৃণমূল নেতা তথা মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের মন্তব্য, ‘‘ঝুলির বেড়াল বেরিয়ে পড়েছে। নাগরিকপঞ্জি যে কত বড় প্রহসন, তা এখন পরিষ্কার। এই বিভাজনটাই বিজেপির রাজনীতি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তা হতে দেবেন না।’’

বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘দিলীপ ঘোষেরা প্রমাণ করে দিচ্ছেন, তাঁরা বাংলা এবং বাঙালির বিরোধী। ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব এ দেশের সংবিধান মেনে নেয় না। তেমন কোনও চেষ্টা হলে মানুষই রুখবেন।’’ বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান বলেন, ‘‘সঙ্ঘ পরিবারই মানুষকে ধর্ম, জাতপাতের ভিত্তিতে ভাগ করতে চায়। এই বিভাজনের চক্রান্ত কখনও সফল হবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন