কোথায় খুন জসিমউদ্দিন, ধন্দ তা নিয়েও

সংঘর্ষ হয়েছে সিরশিট্টায়। আর বিজেপি কর্মী শেখ জসিমউদ্দিনের দেহ উদ্ধার হয়েছে চৌমণ্ডলপুর গ্রামের ধানজমি থেকে। রবিবার পাড়ুইয়ের এই দুই গ্রামের মধ্যে কোথায় খুন হয়েছে চৌমণ্ডলপুরের পশ্চিমপাড়ার বাসিন্দা, ১৭ বছরের জসিমউদ্দিন, তা নিয়ে অবশ্য ধন্দ দেখা দিয়েছে। এবং ওই ঘটনা নিয়ে শুরু হয়েছে বিজেপি-তৃণমূল চাপানউতোর। বিজেপির দাবি, চৌমণ্ডলপুরে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা গুলি করে মেরেছে ওই ছেলেটিকে।

Advertisement

মহেন্দ্র জেনা ও দয়াল সেনগুপ্ত

পাড়ুই শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:০৬
Share:

জসিমউদ্দিনের দেহ মেলার খবর পেয়ে চৌমণ্ডলপুরে পুলিশের অভিযান। রবিবার। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী

সংঘর্ষ হয়েছে সিরশিট্টায়। আর বিজেপি কর্মী শেখ জসিমউদ্দিনের দেহ উদ্ধার হয়েছে চৌমণ্ডলপুর গ্রামের ধানজমি থেকে।

Advertisement

রবিবার পাড়ুইয়ের এই দুই গ্রামের মধ্যে কোথায় খুন হয়েছে চৌমণ্ডলপুরের পশ্চিমপাড়ার বাসিন্দা, ১৭ বছরের জসিমউদ্দিন, তা নিয়ে অবশ্য ধন্দ দেখা দিয়েছে। এবং ওই ঘটনা নিয়ে শুরু হয়েছে বিজেপি-তৃণমূল চাপানউতোর।

বিজেপির দাবি, চৌমণ্ডলপুরে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা গুলি করে মেরেছে ওই ছেলেটিকে। যদিও সিরশিট্টা গ্রামের তৃণমূল এমনকী, বিজেপি কর্মীদেরও একাংশের দাবি, এ দিন সকালে ওই গ্রামে হামলা চালাতে গিয়ে খুন হয়েছে সে। পরে বিজেপি-র লোকজনই তার দেহ সরিয়ে নিয়ে যায় চৌমণ্ডলপুরে। বীরভূম জেলা পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়াও বলেন, “চৌমণ্ডলপুরে এ দিন কোনও রাজনৈতিক সংঘর্ষ হয়নি। সে ক্ষেত্রে ওই ছেলেটির দেহ কী ভাবে ওখানে এল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

Advertisement

রবিবার সকাল থেকেই সিরশিট্টা গ্রামে বিজেপি আশ্রিত বহিরাগত সশস্ত্র দুষ্কৃতীরা হামলা চালায় বলে তৃণমূলের অভিযোগ।

এক সময় এলাকায় চাউর হয়ে যায়, চৌমণ্ডলপুরের ধানজমিতে পড়ে রয়েছে শেখ জসিমউদ্দিনের নিথর দেহ। সেই খবর পেয়ে পুলিশ বাহিনীও সেখানে যায়। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ধানজমিতে জসিমউদ্দিনের রক্তাক্ত দেহ পড়ে রয়েছে। বুকে গুলির ক্ষতচিহ্ন। মাথার ডান দিকেও আঘাতের চিহ্ন। পুলিশ এসে ওই বিজেপি সমর্থকের দেহ উদ্ধার করে।

সে সময় জসিমউদ্দিনের দেহের পাশে ছিলেন তাঁর বাবা একরামুল হক, কাকা আব্দুল মান্নান ও স্থানীয় কয়েক জন বাসিন্দা। পুলিশ তাঁদের ঘটনাস্থলেই মারধর করে ও আটক করে পাড়ুই থানায় নিয়ে যায় বলে বিজেপি-র অভিযোগ। পুলিশের মারে তাঁর ডান হাত ভেঙেছে বলেও অভিযোগ করেছেন একরামুল। পরে অবশ্য তাঁদের ব্যক্তিগত জামিনে ছেড়ে দেওয়া হয়। এ দিন পাড়ুই থানার সামনে দাঁড়িয়ে একরামুল অভিযোগ করেন, “আমরা বিজেপি করি। ছেলে আর আমি এক সঙ্গেই সকালে ধান কাটতে গিয়েছিলাম। আমি একটু দূরের জমিতে ছিলাম। সেই সময়ই গ্রামে হামলা চালায় তৃণমূলের মাস্কেট বাহিনী। ছেলে গুলি খেয়েছে, খবর পেয়েই দৌড়ে যাই। ততক্ষণে সব শেষ!” তাঁর আরও ক্ষোভ, “ছেলেকে হারিয়ে গোটা পরিবারে যখন শোক, তখন পুলিশ হামলাকারীদের না ধরে উল্টে আমাদেরই ধরল! মারধর করে আমার হাতও ভেঙে দিল!”

নিহত জসিমউদ্দিনের মা জেবউন্নিসা বিবি এ দিন কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “পশ্চিমপাড়ার মাঠে ছেলেকে নিয়ে আমার স্বামী আর দেওর ধান কাটতে গিয়েছিল। দু’জন পড়শিও ওদের সঙ্গে ছিলেন। সাড়ে ১০টা নাগাদ ওদের জন্য খাবার নিয়ে মাঠে যাওয়ার আগেই খবর পেলাম, তৃণমূলের লোকজন গোলাপবাগের দিক থেকে গ্রামে ঢুকছে। তখনই মনটা কু-ডেকেছিল গো! ওরা মাঠের মধ্যেই আমার ছেলেকে গুলি করে মারল। ও আর খেতে পেল না!”


পাড়ুই থানা থেকে বেরিয়ে জখম হাত দেখাচ্ছেন জসিমউদ্দিনের বাবা একরামুল হক। —নিজস্ব চিত্র

নিহতের পরিবার এই দাবি করলেও সিরশিট্টা গ্রাম সূত্রে অন্য খবর জানা যাচ্ছে। এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ জানিয়েছেন, বিজেপির হামলার প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন এলাকার তৃণমূল কর্মীরাও। আর সেই প্রতিরোধের প্রথম ধাপেই গুলি খেয়ে যায় পাড়ুইয়ের বিজেপি নেতা সদাই শেখের সম্পর্কিত ভাইপো জসিমউদ্দিন। গ্রামেরই এক বিজেপি মহিলা সমর্থকের দাবি তিনি গোটা ঘটনা নিজে দেখেছেন। তিনি বলেন, “তৃণমূলের গুলি খেয়ে ছেলেটা আমার চোখের সামনেই লুটিয়ে পড়ল।” গ্রামের তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের দাবি, তাঁদের প্রতিরোধের মুখে পড়ে যখন বিজেপির হামলাকারীরা আলপথ ধরে পিছু হটছে, সেই সময়েই তারা সঙ্গে নিয়ে যায় জসিমউদ্দিনকেও। গ্রামের তৃণমূল সমর্থক ইউসুফ মোল্লা, বাপি মোল্লা, কাবিল মোল্লারা বলেন, “দেখলাম, হামলাকারীরা ওই ছেলেটাকে তুলে নিয়ে বড় বাঁধের পাড় ধরে চলে গেল।” তৃণমূলের পাড়ুই থানা কমিটির চেয়ারম্যান মুস্তাক হোসেনও দাবি করেছেন, “প্রকাশ্য দিবালোকে পলাশির পথ ধরে চৌমণ্ডলপুরে ওই ছেলেটার দেহ নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অনেকেই তা দেখেছেন।” তাঁর দাবি, দেহ নিয়ে গিয়ে ধানের খেতে ফেলা হয়েছে। আর তার পরে বলা হচ্ছে, তৃণমূলের হামলায় চৌমণ্ডলপুরে খুন হয়েছে সে। তৃণমূলের সঙ্গে ওই ঘটনার কোনও যোগ নেই বলেও দাবি মুস্তাকের।

বিজেপি নেতৃত্ব অবশ্য এই তত্ত্ব উড়িয়ে দিয়েছেন। দলের বোলপুর ব্লক সভাপতি বলাই চট্টোপাধ্যায় বলেন, “পাড়ুই অঞ্চলে আমাদের প্রভাব বাড়ছে প্রায় দিন দিন। এলাকায় গেলেই দেখা যাবে, গ্রামের পর গ্রামে বিজেপি-র পতাকা। দেখে তৃণমূলের সহ্য হচ্ছে না। সে কারণেই তারা

খুন-জখমের রাজনীতিতে নেমেছে।” তিনি দাবি করেন, চৌমণ্ডলপুরে ধানের জমিতে কাজের সময়েই জসিমউদ্দিনকে গুলি করে মেরেছে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন