বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোেষর কনভয়ে হামলার প্রতিবাদে কোচবিহারে মশাল মিছিলে বিজেপি নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয় ও রাহুল সিংহ। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব
অন্য দিনের মতো বৃহস্পতিবারও সকাল থেকে প্রচার চলছিল। বেলা যত বাড়ছিল, ততই তার সুর চড়ছিল। কোন পথে সভায় লোক আনা হবে, তার ‘ব্লু প্রিন্ট’ও তৈরি। আচমকাই বিজেপির যাবতীয় উৎসাহে যেন জল ঢেলে দিল কলকাতা হাইকোর্টের রায়। রথযাত্রা আপাতত স্থগিত করে দেওয়ার কথা শুনেই দৃশ্যত হতাশ দলের কর্মী-সমর্থকেরা। চিন্তায় কৈলাস বিজয়বর্গীয়, দিলীপ ঘোষের মতো নেতারা। আইনি লড়াই তো তার মতো চলবে, এর মধ্যে কর্মীদের চাঙ্গা রাখা যাবে কী ভাবে, সেই ভাবনাই উদ্বিগ্ন রেখেছে তাঁদের।
রায় শোনার পরে কোচবিহারের একটি হোটেলে বসে বিচলিত কণ্ঠে কৈলাস বলছিলেন, ‘‘আমরা ডিভিশন বেঞ্চে যাব। তার পরে দেখা যাক।’’ ঠিক সেই সময়ে ঝিনাইডাঙার মাঠে হাজির বিজেপি কর্মী অধীর বর্মণ বলেন, ‘‘ঠিক বুঝতে পারছি না, কী হবে। সবাই কেমন জানি চুপ করে গেলেন। রাতে থাকব, নাকি বাড়ি ফিরে যাব, সেটাই ভাবছি।’’
দিনহাটার যাদব বর্মণ, মাথাভাঙার গোবিন্দ দাসদের অবস্থাও একই রকম। যাদব বলেন, ‘‘অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে, সাহস নিয়ে এখানে এসেছি। এখন যদি সভাই না হয়, তা হলে তো মহা মুশকিল!’’ গোবিন্দের কথায়, ‘‘রোজ কত হুমকি সহ্য করতে হয়। এখন সভা না হলে তো বাড়িই ফিরতে পারব না।’’
(বাঁ দিকে) ঝিনাইডাঙায় মাঠে দুপুরে কাজ দেখতে গিয়েছেন দিলীপবাবু। (ডান দিকে) হাইকোর্টের রায়ে রথযাত্রা স্থগিত হয়ে যাওয়ার পরে সন্ধ্যায় দিলীপবাবু। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব
শুক্রবার ঝিনাইডাঙা থেকে বিজেপির রথযাত্রা শুরু হওয়ার কথা। একই সঙ্গে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহের সভা করারও কথা। এই উপলক্ষকে সামনে রেখে কোচবিহারে নেতৃত্বের তারকা সমাবেশ ঘটিয়ে ফেলেছিল বিজেপি। এক দিকে রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ থেকে সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক রাহুল সিংহ, অন্য দিকে রাজ্যে দলের কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয় থেকে সাংসদ রূপা গঙ্গোপাধ্যায়, সকলেই হাজির। গত কয়েক দিনের যাবতীয় উৎসাহ যেন বদলে গিয়েছে উৎকণ্ঠায়। অমিত আসবেন কিনা থেকে শুরু করে সভা হবে কিনা— সব প্রশ্নের জবাবেই খুব সাবধানে জবাব দিচ্ছেন নেতারা। সভা হবে কিনা, এর জবাবে যেমন কৈলাস বলেন, “যা বলার সভার দিনই বলব।”
অথচ বিকেল অবধি বিজেপি শিবির ছিল সরগরম। সভার চারদিক গেরুয়া কাপড় দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে। ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের দু’পাশে বিজেপির পতাকা, ফেস্টুন, হোর্ডিংয়ে ভরিয়ে দেওয়া হয়েছে। অবশ্য, একই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রয়েছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের পতাকাও। বিজেপি সূত্রের খবর, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি এবং নমনি অসম থেকে লোক আনার পরিকল্পনা ছিল দলের। সব মিলিয়ে ৩০০টির বেশি গাড়ি বুকিং করা হয়েছে। এ ছাড়াও ভুটভুটি, টেম্পোও ভাড়া করে প্রচুর।
বিজেপি নেতৃত্বের কাছে জানা গিয়েছে, তাঁদের হিসেব অনুযায়ী পড়শি দুই জেলা মিলিয়ে দশ হাজারের বেশি কর্মী-সমর্থক যোগ দেবেন সভায়। নমনি অসম থেকে আসবেন কম করে পাঁচ হাজার। বাকি কর্মী-সমর্থকরা যোগ দেবেন কোচবিহার থেকেই।
এ দিন রাতেই কোচবিহারের একটি বড় অংশের সমর্থক মাঠে যাওয়ার কথা। তাঁদের জন্য রাতে খিচুড়ি ও নিরামিষ তরকারি খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু সেই উৎসাহ এখন উৎকণ্ঠার চাপে অনেকটাই ফিকে।
তার সঙ্গে যোগ হয়েছে রথ নিয়ে ঢাক ঢাক গুড় গুড়। রথ এখন কোথায়, কখন সেটা এসে কোচবিহারে পৌঁছবে, তা-ও কর্মীদের কাছে স্পষ্ট নয়। বিজেপির কোচবিহার জেলা সভানেত্রী মালতী রাভা বলেন, “সকালে কলকাতা থেকে রথ রওনা