আউশগ্রামে রবিবার তৃণমূল কার্যালয়ে বিস্ফোরণ আবার সামনে এনে দিয়েছে সেই চেনা বাস্তবকে। কী বাম, কী ডান—গদিতে যারাই থাকুক না কেন, বর্ধমান-বীরভূমের এক বিস্তীর্ণ তল্লাট বরাবর রয়ে গিয়েছে দুষ্কৃতীদের মুক্তাঞ্চল হিসাবেই।
কোন তল্লাট? বর্ধমানের নানুর, লাভপুর এবং অধুনা পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রাম, মঙ্গলকোট ও আউশগ্রাম। রাজ্য পুলিশের এক কর্তা বলছেন, ‘‘ওই অঞ্চলে বোমা বানানো আসলে কুটির শিল্পের মতো। ক্ষমতা যে দিকে, বোমা বাঁধার কারিগরেরা সে দিকেই ঝুঁকে পড়ে। ক্ষমতায় থাকতে সব দলই তাদের কাজে লাগায়।’’
পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক ইতিহাস বলছে, পরস্পর লাগোয়া ওই ব্লকগুলি ঐতিহ্যগত ভাবেই অস্ত্রের রাজনীতি দেখতে অভ্যস্ত। সিপিএম যখন ক্ষমতায়, তখন তাদের সঙ্গে তৃণমূলের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ দেখেছেন এই অঞ্চলের মানুষজন। এখন সিপিএম কার্যত নেই। তাতেও থামছে না বোমা-গুলির যুদ্ধ। অভিযোগ, সিপিএমের জায়গা নিয়েছে তৃণমূলই! তা ছাড়া, বর্ধমান, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ—তিন জেলার সীমানা ঘেঁষা হওয়ায় এক এলাকায় দুষ্কর্ম করে অন্যত্র পালিয়ে যাওয়াও বেশ সহজ। পঞ্চায়েত ভোট যত এগোবে, ততই এই তল্লাট রক্তাক্ত হবে বলে আশঙ্কা বিরোধীদের।
কিন্তু, কেন এমন পরিস্থিতি?
মূলত রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের লক্ষ্যেই এখানে এত রক্ত ঝরে—অভিমত নানুর থানায় দীর্ঘদিন কাজ করে যাওয়া এক অফিসারের। তাঁর মতে, কোথাও অজয় নদের বালিঘাটের দখল, কোথাও বা পঞ্চায়েতের বখরা, আবার কোথাও নিছক এলাকা দখল ঘিরে বরাবর উত্তপ্ত থেকেছে দুই জেলার এই অঞ্চলের রাজনীতি।
আউশগ্রাম বিস্ফোরণ-কাণ্ডের আগেই গত মাসের শেষেই লাভপুরের দরবারপুরে বালিঘাটের দখল ঘিরে লড়াইয়ে বোমা বাঁধার সময় তা ফেটে প্রাণ যায় ৯ জনের। মৃতেরা তৃণমূল কর্মী হিসাবেই পরিচিত। তৃণমূল সিপিএমের দিকে অভিযোগের আঙুল তুললেও বারবার উঠে এসেছে এলাকার দুই তৃণমূল নেতার নাম।
একই ভাবে আউশগ্রামের ঘটনাতেও সমাজবিরোধী পোষার অভিযোগ শুনতে হচ্ছে তৃণমূলকে। রবিবার বিকেলে পিচকুড়ির ঢালে তৃণমূল অঞ্চল পার্টি অফিসে বিস্ফোরণ হয়। ধুলিসাৎ হয়ে যায় শাসকদলের পাকা কার্যালয়। বিরোধীদের অভিযোগ, তাদের আক্রমণ করার উদ্দেশ্যেই পার্টি অফিসে বোমা মজুত করেছিল শাসকদল। কোনও ভাবে তা ফেটে যায়। সোমবার বিকেলে সিআইডি-র বম্ব স্কোয়াড এলাকায় যায়। কিছু লোহার পাইপের টুকরো, ফাঁকা কীটনাশকের শিশি, চার-পাঁচটি সুতলি বোমা ছাড়া বিশেষ কিছু অবশ্য সেখানে মেলেনি।
মঙ্গলকোট, কেতুগ্রাম ও আউশগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত বীরভূমের তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের দাবি, সিপিএমের দষ্কৃতীদের ছোড়া বোমায় ওই ঘটনা। যদিও বিস্ফোরণের পরে পার্টি অফিসের যা চেহারা হয়েছে, তাতে সেই দাবি ধোপে টিঁকছে না।
তৃণমূলের বিড়ম্বনা বাড়িয়ে ঘটনার এনআইএ তদন্ত দাবি করেছে বিজেপি। দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের মতে, এই বিস্ফোরণ কোনও সামান্য ঘটনা নয়। রাজ্য পুলিশ বা সিআইডি-র পক্ষে এর রহস্য উদ্ঘাটন করা কঠিন। সেই কাজটা পারবে এনআইএ।