খতিয়ান: রবিবার কাঁথি ব্লাড ব্যাঙ্কে মজুত রক্তের তালিকা। নিজস্ব চিত্র
রাজ্য জুড়ে রক্তের আকাল। কলকাতা থেকে জেলা— হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কগুলোয় ভাঁড়ার শূন্য। এই সঙ্কটে ব্যতিক্রমী চিত্র কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে।
পূর্ব মেদিনীপুরের এই হাসপাতালে রোজ যথেষ্ট রক্তের জোগান থাকছে তা-ই নয়, নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে তারা রক্ত পাঠাচ্ছে অন্যত্র, এমনকী কলকাতার হাসপাতালেও।
গত ২৬ এপ্রিল থেকে প্রতিদিন কাঁথি ব্লাড ব্যাঙ্কে ৭৫০-৯০০ ইউনিট রক্ত মজুত রয়েছে। রবিবার সকালে মজুত ছিল ৭৫০ ইউনিট রক্ত। আর গত বৃহস্পতিবার সকালে কাঁথি ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে ৭০ ইউনিট রক্ত পাঠানো হয়েছে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। মেডিক্যাল কলেজের ব্লাড ব্যাঙ্কের প্রধান কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘গোটা রাজ্য থেকে রোগীরা আসেন। আমাদের এখানে তাই রক্তের চাহিদা বেশি। গরমে চাহিদা আরও বেড়েছে। তাই কাঁথি থেকে রক্ত আসায় খুবই সুবিধা হয়েছে।’’
এই সাফল্যের কারিগর কাঁথি ব্লাড ব্যাঙ্কের পাঁচ কর্মী— দেবব্রত পণ্ডিত, উত্তমকুমার বেরা, শেখ মফিজউদ্দিন, শেখ এনামুল মিঞা ও রাহেদ হোসেন মিঞা। অসম্ভবকে সম্ভব করছেন তাঁরাই। ঘটনা হল, আর পাঁচটা সরকারি অফিসের মতো এখানেও না-এর তালিকা দীর্ঘ। ২০১২ থেকে এই ব্লাড ব্যাঙ্কে কোনও মেডিক্যাল অফিসার নেই। নেই নার্স ও করণিক। যে পাঁচজন কাজটা করে চলেছেন, তাঁদের মধ্যেও চারজন অস্থায়ী। তাও কাজকে ভালবেসে দায়িত্ব পালনের তাগিদেই গোটা রাজ্যে নজির হয়ে উঠেছেন এই পাঁচকর্মী। দেবব্রতবাবু বলছিলেন, “রক্তদানের গুরুত্ব আমরা বুঝি। তাই জীবন বাঁচনোর তাগিদে সকলের সাহায্য নিয়ে এই কাজ করছি।’’
কিন্তু কী করে করছেন?
আরও পড়ুন: রাতের শহর তবু বেপরোয়া
উত্তমবাবু, মফিজউদ্দিনরা জানালেন, প্রতি গরমে রক্তের টান পড়ে মূলত রক্তদান শিবির কম হওয়ায়। তাই শিবির করার আগাম পরিকল্পনা ছকে ফেলেন তাঁরা। গত চার বছরে বিভিন্ন রক্তদান শিবিরের উদ্যোক্তাদের তালিকা ব্লাড ব্যাঙ্কের রেজিস্টার থেকে সংগ্রহ করেন। তারপর তালিকা ধরে সেই সব উদ্যোক্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে শিবির করার অনুরোধ জানান। বহু ক্ষেত্রে নিজেরাই গিয়ে শিবিরের দিনক্ষণ ঠিক করে দেন। তাতেই সুফল মিলেছে।
কৃতিত্বটা যে কর্মীদের তা মানছেন হাসপাতাল কতৃর্পক্ষও। কাঁথি ব্লাড বাঙ্কের ইনচার্জ তথা হাসপাতাল সুপার সব্যসাচী চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘ওই পাঁচকর্মীর কাজের প্রতি ভালবাসা আর দায়িত্ববোধই অন্য ব্লাড ব্যাঙ্কের থেকে আমাদের আলাদা করে তুলেছে।’’
কাঁথি হাসপাতালে রক্ত নিতে আসা সমর দাসও বলছিলেন, ‘‘যে ভাবে এঁরা রক্তের জোগান ঠিক রেখেছেন, তা দেখে অন্যদেরও শিক্ষা নেওয়া উচিত।’’