ছেলের এক মাস, ফিরছে জওয়ানের দেহ

শনিবার ভোরে নদিয়ার বাড়িতে ফিরছে বিএসএফ জওয়ান প্রসেনজিৎ বিশ্বাসের (২৭) কফিনবন্দি দেহ। 

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৩:০৫
Share:

স্মৃতি: ছেলের সঙ্গে নিজস্বীতে প্রসেনজিৎ।

প্রথম সন্তানের জন্মের সময়ে বাড়ি ফিরেছিলেন গত নভেম্বরেই। দিন কুড়ি হইহই করে কাটিয়ে ফিরে যান জম্মু ও কাশ্মীরে তাঁর কর্মস্থলে। আজ, শনিবার ভোরে নদিয়ার বাড়িতে ফিরছে বিএসএফ জওয়ান প্রসেনজিৎ বিশ্বাসের (২৭) কফিনবন্দি দেহ।

Advertisement

জম্মু ও কাশ্মীরের সুন্দরবনি সেক্টরে ডিউটিতে ছিলেন প্রসেনজিৎ। সেনার অভিযোগ, সংঘর্ষবিরতি ভেঙে বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ নিয়ন্ত্রণ রেখার ও পার থেকে গুলি চালায় পাক সেনা। বিএসএফের ১২৬ নম্বর ব্যাটেলিয়ানের জওয়ান প্রসেনজিতের বাঁ কাঁধে গুলি লাগে, উরুতে গুলি লাগে আর এক জওয়ান মনসা রামের। দু’জনকে হেলিকপ্টারে জম্মুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। মনসা বেঁচে গেলেও প্রসেনজিৎকে বাঁচানো যায়নি।

নদিয়ার বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা হোগলবেড়িয়ার বালিয়াশিশা গ্রামের ছেলে প্রসেনজিৎ। বাবা মোহন বিশ্বাস দিনমজুরি করেন। করিমপুর পান্নাদেবী কলেজে পড়ার পাশাপাশি দিনমজুরি করতেন প্রসেনজিৎও। ২০১৩ সালে বিএসএফে যোগ দেওয়ার সুযোগ পান। উধমপুর ক্যাম্পে প্রশিক্ষণের পরে ১২৬ নম্বর ব্যাটেলিয়নে পোস্টিং পান। তাঁর রোজগারে গত পাঁচ বছরে একটু-একটু করে সংসারের হাল ফিরছিল। গত বছর নভেম্বরেই বিয়ে হয়েছিল। স্ত্রী সুমনা হোগলবেড়িয়ারই মুক্তাদহ গ্রামের মেয়ে।

Advertisement

পরিবার সূত্রের খবর, প্রতি দিন বাড়িতে ফোন করে বাবা-মা, স্ত্রী সুমনা আর এক মাসের ছেলের খোঁজ নিতেন প্রসেনজিৎ। বৃহস্পতিবার সেই ফোন আসেনি। বদলে ফোন আসে বিএসএফ থেকে। তাঁর দাদা সুভাষের কথায়, ‘‘প্রথমে বলা হয়, ভাইয়ের কাঁধে গুলি লেগেছে, হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কিছুক্ষণ পর ফের ফোন আসে। বলা হয়, ভর্তি করার পরেই ভাই মারা গিয়েছে।’’ মৃতদেহ তাঁরা বাড়িতে আনতে চান কি না, তা-ও জানতে চাওয়া হয়।

ঘরের ছেলেকে শেষ দেখা দেখতে তো চান সকলেই। বিএসএফ জানায়, সে ক্ষেত্রে তারাই মৃতদেহ বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করবে। শুক্রবারই জম্মুতে বিএসএফের সদর দফতরে প্রসেনজিৎকে শেষ শ্রদ্ধা জানায় সেনাবাহিনী। সেখান থেকে কলকাতায় পাঠানো হয় তাঁর মরদেহ। রাতে বিমানবন্দর থেকে কফিন নিয়ে জওয়ানেরা নদিয়ার দিকে রওনা দেন। গত ৬ নভেম্বর, কালীপুজোয় ভূমিষ্ঠ হয়েছিল প্রসেনজিতের ছেলে প্রীতম। এক মাসের জন্মদিনে বাবাকে হারিয়েছে সে। দুধের শিশু কোলে সুমনা কেঁদে চলেছেন অনর্গল। কাঁদছেন মা নন্দরানি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন