বোমার খোঁজ। — নিজস্ব চিত্র
সন্ধ্যা ৬টা। হাওড়া স্টেশনের ২০ নম্বর প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে ফাঁকা পুরী এক্সপ্রেস। পাশে ১৯ নম্বরে অবশ্য কোনও ট্রেন নেই। তাই মোটের উপরে দু’টি প্ল্যাটফর্মে তেমন ভিড়ও নেই। তবু রুটিন মাফিক রেল রক্ষী বাহিনীর জওয়ানেরা টহল দিচ্ছিলেন। তখনই তাঁরা দেখেন প্ল্যাটফর্মের শেষ প্রান্তে দূরপাল্লার ট্রেনটির পাশেই পড়ে আছে একটি প্লাস্টিকের প্যাকেট। ভিতরে স্টিলের ঢাকনা বন্ধ দুধের ক্যান।
মঙ্গলবার ভরসন্ধ্যায় কে বা কারা ওই ক্যানটি প্লাস্টিকের প্যাকেটে ঢুকিয়ে রেখে গেল, সেই খোঁজ শুরু করেন আরপিএফ জওয়ানেরা। কিন্তু কাউকেই পাওয়া যায়নি। খবর দেওয়া হয় জিআরপি-কে। ছুটে আসেন আরপিএফ ও জিআরপি-র কর্তারা। ততক্ষণে হাওড়া স্টেশন জুড়ে বোমাতঙ্কের খবর চাউর হয়ে যাওয়ায় অন্যান্য প্ল্যাটফর্মের যাত্রীরাও সেখানে ভিড় জমাতে থাকেন। দড়ি দিয়ে ঘটনাস্থল ঘিরে দেয় আরপিএফ।
এর পরেই হ্যান্ড স্ক্যানার ও কুকুর নিয়ে আসে রেল রক্ষী বাহিনী। বৃষ্টির জন্য স্টেশনে তেমন ভিড় না থাকলেও ১৮ নম্বর প্ল্যাটফর্মে লোকাল ট্রেন ধরার জন্য অপেক্ষমান যাত্রীরা ওই সমস্ত সর়়ঞ্জাম দেখে কৌতূহলী হয়ে ভিড় জমাতে শুরু করেন। প্রথমে কুকুর শুঁকে চলে যাওয়ার পরেই আরপিএফ-এর আনা স্ক্যানার ঠেকিয়ে দেখা যায়, ওই বন্ধ ক্যানটির ভিতরে রয়েছে কিছু তার। আর তা দেখেই প্রাথমিক ভাবে জিআরপি ও আরপিএফ দুধের ওই ক্যানটিকে বোমা বলে সন্দেহ করে। তখনই খবর দেওয়া হয় সিআইডি-কে।
রেল পুলিশের থেকে খবর পেয়ে সন্ধ্যা পৌনে সাতটা নাগাদ হাওড়া স্টেশনের নিউ কমপ্লেক্সে আসে সিআইডি-র বম্ব স্কোয়াড। তারা ফিতে দিয়ে গোটা প্ল্যাটফর্ম চত্বর ঘিরে দেয়। সাংবাদিকদেরও ১৯ নম্বর প্ল্যাটফর্মে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। সিআইডি অফিসারেরা প্রথমে বিস্ফোরণ প্রতিরোধক জ্যাকেট দিয়ে ওই প্লাস্টিকটিকে ঢেকে দেন। এর পরে বিস্ফোরণ প্রতিরোধক জ্যাকেট পরে অফিসারেরা ‘ম্যানিপুলেটর’ (ছোট ক্রেনের মতো দু’চাকার যন্ত্র) এগিয়ে দেন ওই প্লাস্টিকের দিকে। যন্ত্রটি দিয়ে প্লাস্টিক-সহ ক্যানটি তুলে গঙ্গার ধারে নিয়ে যান সিআইডি অফিসারেরা। রাত ৮টা নাগাদ সেখানেই সেটি নিষ্ক্রিয় করা হয়। ক্যানের ভিতর থেকে মাটি ও থার্মোকল মিলেছে বলেই সিআইডি সূত্রে খবর। ঘটনাস্থলে আসা সিআইডি-র ডিএসপি তাপস রায় বলেন, ‘‘বিস্ফোরক মেলেনি। এর বেশি কিছু এখনই বলা সম্ভব নয়।’’
তবে দু’ঘণ্টা ধরে হাওড়া স্টেশনের নিউ কমপ্লেক্সের বোমাতঙ্ক ও নিষ্ক্রিয় করার প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরে জানা যায়, আসলে সেটি ছিল সিআইডি-র মহড়া। সিআইডি-র এডিজি রাজেশ কুমার বলেন, ‘‘এটি আমাদের একটি মহড়া ছিল মাত্র। এর বেশি কিছু নয়।’’ কিন্তু মহড়া হলেও স্বভাবতই হাওড়া স্টেশনের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন কিন্তু থেকেই গেল। কারণ এ দিন কে বা কারা ভরসন্ধ্যায় ওই প্ল্যাটফর্মে কৌটো রেখে গেলেন, তা কারও নজরে আসেনি। তাই অন্য কোনও দিন কেউ অসৎ উদ্দেশ্যে স্টেশনের কোথাও সত্যি বোমা রেখে গেলে কী হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েই গেল বলে মনে করছেন নিত্যযাত্রীরা।