গাফিলতি বিজেপিরও, বলছে পিএমও তদন্ত

মেদিনীপুর কলেজিয়েট মাঠে সোমবার প্রধানমন্ত্রীর যে ‘কৃষক কল্যাণ সমাবেশে’র ছাউনি ভেঙে পড়ে শতাধিক মানুষ আহত হয়েছিলেন, তার আয়োজক ছিল বিজেপি।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৮ ০৫:৩৪
Share:

ফাইল চিত্র।

শামিয়ানা ভেঙে পড়া নিছক দুর্ঘটনা ঠিকই। কিন্তু নরেন্দ্র মোদীর গোটা মেদিনীপুর সফরের ছত্রে ছত্রেই নানা গাফিলতি ছিল বলে উঠে আসছে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের (পিএমও) অভ্যন্তরীণ তদন্তে। এক দিকে রাজ্য বিজেপির অনভিজ্ঞতা এবং ব্যবস্থাপনায় খামতি আর অন্য দিকে রাজ্য পুলিশ-প্রশাসনের উদাসীন মনোভাব— এই দুই দিকই প্রাথমিক ভাবে খুঁজে পেয়েছেন পিএমও আধিকারিকেরা।

Advertisement

মেদিনীপুর কলেজিয়েট মাঠে সোমবার প্রধানমন্ত্রীর যে ‘কৃষক কল্যাণ সমাবেশে’র ছাউনি ভেঙে পড়ে শতাধিক মানুষ আহত হয়েছিলেন, তার আয়োজক ছিল বিজেপি। ছাউনি ভাঙার ঘটনায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী দলের রিপোর্ট যাবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এবং পিএমও-র কাছে। তার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সকলের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে পিএমও-র আধিকারিকেরাও নিজস্ব একটি পর্যালোচনা রিপোর্ট তৈরি করেছেন। অন্য দিকে আবার বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহের কাছে রাজনৈতিক স্তরেও একটি রিপোর্ট যাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রীর সফরের জন্য তৈরি হওয়া পিএমও-র ‘ক্যাম্প অফিস’, গোয়েন্দা ও আরও নানা সূত্রের তথ্য নিয়ে আধিকারিকেরা দেখেছেন, প্রধানমন্ত্রীর সভায় কত জনসমাগম হতে পারে, তার কোনও আন্দাজই রাজ্য বিজেপির নেতারা করতে পারেননি! দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরে দিলীপ ঘোষ বা সায়ন্তন বসুরা বলেছেন, ‘‘জনপ্লাবনে মেদিনীপুর ওই ভাবে ভেসে যাবে, আমরা ধারণা করতে পারিনি! এটা আমাদের ব্যর্থতা।’’ কিন্তু কত গাড়ি ভাড়়া করা হয়েছে, কোন দিক থেকে কত মানুষ আসবেন, সে সবের ধারণা উদ্যোক্তা নেতাদেরই থাকার কথা।

Advertisement

তদন্তে দেখা গিয়েছে, সে দিন পাঁচিলে উঠে বা ব্যারিকেড ঠেলে জনতা যখন মাঠে ঢোকার চেষ্টা করছিল, তখন মুকুল রায় ছাড়া বিজেপির কোনও প্রথম সারির নেতা ভিড়়কে নিরস্ত করার বার্তাই দেননি। বড় সমাবেশের ব্যবস্থাপনার সার্বিক অনভিজ্ঞতা সব কিছুতেই প্রকট ছিল।

এরই উল্টো পিঠে পুলিশ-প্রশাসন অদ্ভুত নির্বিকার ছিল বলে পিএমও-র আধিকারিকেরা নজর করেছেন। ‘বেসরকারি সফর’ বলে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে রাজ্য সরকার কোনও মন্ত্রীকে পাঠায়নি। কিন্তু কলাইকুন্ডা থেকে মোদীর গোটা সফর-পথেই কোনও সিনিয়র পুলিশকর্তার দেখা পাওয়া যায়নি। আইজি রাজীব মিশ্র বা জেলা পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়ার দাবি, তাঁরা দায়িত্ব পালন করেছেন। যদিও কেন্দ্রীয় এক আধিকারিকের বক্তব্য, ‘‘প্রধানমন্ত্রী কোথাও ব্যক্তিগত সফরে গেলেও তাঁর নিরাপত্তার নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া মানতে হয় সংশ্লিষ্ট সকলকে। অথচ সে দিন প্রায় সব কাজই এসপিজি করেছে।’’ মোদী বা অমিত শাহের মতো ‘জে়ড প্লাস ভিভিআইপি’দের অনুষ্ঠানে জেনারেটর গোড়া থেকেই চালু থাকার কথা। অথচ সে দিন সভার মাঝে একাংশের বিদ্যুৎ চলে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর টেলি-প্রম্প্টারও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল! মোদীর মঞ্চের পিছনের গেট খুলে দিয়ে আহতদের বার করার ব্যবস্থা হয়েছিল এসপিজি-র নির্দেশে, ছিলেন না পুলিশ-কর্তারা।

গোটা কাণ্ডে বিস্মিত কেন্দ্রীয় আধিকারিকেরা। আর বিজেপির এক নেতার মন্তব্য, ‘‘দুর্ঘটনায় কারও মৃত্যু হলে আমাদের জন্য আরও বড় বিপর্যয় হত! মোদীজি বক্তৃতা চালিয়ে গিয়ে মানুষের নজর অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছেন বলেও আমরা খানিকটা বেঁচেছি!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন