আত্মঘাতী বান্ধবীর শ্রাদ্ধে এসে ‘দোষ’ কবুল, পিটুনি প্রেমিককে

ফুল, মালা আর মিষ্টির প্যাকেটটা মৃতার ছবির সামনে রেখে চোখের জল মুছতে দেখে বাকিদের মনে কিঞ্চিৎ সন্দেহ জেগেছিল। ঘরের দরজায় পুলিশি জুতো। কী ব্যাপার? কৌতূহলবশত ওই ব্যক্তির পরিচয় জানতে চেয়ে প্রশ্নটা করেই ফেলেছিলেন এক জন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৬ ০৩:১০
Share:

ধৃত আশিস চক্রবর্তী।—নিজস্ব চিত্র।

ফুল, মালা আর মিষ্টির প্যাকেটটা মৃতার ছবির সামনে রেখে চোখের জল মুছতে দেখে বাকিদের মনে কিঞ্চিৎ সন্দেহ জেগেছিল। ঘরের দরজায় পুলিশি জুতো। কী ব্যাপার? কৌতূহলবশত ওই ব্যক্তির পরিচয় জানতে চেয়ে প্রশ্নটা করেই ফেলেছিলেন এক জন। মাঝবয়সী ওই অপরিচিতের জবাব শুনে সকলে তো থ।

Advertisement

রজনীগন্ধার মালাটা বার করে ছবির ফ্রেমে পরাতে পরাতে সাধারণ পোশাক পরা ওই ব্যক্তি জবাব দিয়েছিলেন, ‘‘আমি পুলিশ। ফেসবুকে আলাপ ওর সঙ্গে। তার পরে হোয়াট্‌সঅ্যাপে কথা হতো। দু’জনেই দু’জনকে খুব ভালোবাসতাম। ওর বিয়ে হবে মেনে নিতে পারিনি। বলেছিলাম, আমাদের সম্পর্কের কথা সবাইকে বলে দেব। কিন্তু তাতে যে ও আত্মহত্যা করতে পারে, ভাবিনি।’’

ঘোলার তীর্থ ভারতীর বাসিন্দা সুবলচন্দ্র দাস ওই ব্যক্তির এহেন সরল স্বীকারোক্তিতে প্রথমটায় হকচকিয়ে গিয়েছিলেন। তাঁর মেয়ে, ১৯ বছরের পায়েলের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়েছে গত রবিবার। প্রাথমিক ভাবে পুলিশ বলেছিল, এটি আত্মহত্যা। মিলেছিল সুইসাইড নোটও। কিন্তু সেখানে কারও বিরুদ্ধে সরাসরি কোনও অভিযোগ ছিল না। ফলে বাড়ির লোকজন বুঝেই উঠতে পারছিলেন না, কেন হঠাৎ পায়েল আত্মহত্যা করল।

Advertisement

বুধবার তখন সবেমাত্র মেয়ের পারলৌকিক কাজ করতে বসেছেন সুবলবাবু। পায়েলের মা কাকলিদেবী নাগাড়ে কেঁদে চলেছিলেন। কিন্তু ওই ব্যক্তির স্বীকারোক্তি শুনে কান্না থেমে যায় তাঁর। ততক্ষণে শোরগোল পড়ে গিয়েছে উপস্থিত লোকজনের মধ্যে। কয়েক জন ওই ব্যক্তিকে মেঝেতে ফেলে মারধর শুরু করে দিয়েছেন। এরই মধ্যে পায়েলের জামাইবাবু অর্ধেন্দু বসু ঘোলা থানায় খবর দেন। পুলিশ এসে আশিস চক্রবর্তী (৫০) নামে ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে। তিনি কলকাতা পুলিশের কনস্টেবল। এই ঘটনায় কিছুক্ষণ ঘোলা-মধ্যমগ্রাম রোড অবরোধও করেন স্থানীয়েরা। গণপিটুনিতে জখম আশিসবাবুকে প্রথমে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে তাঁকে থানায় নিয়ে গিয়ে জেরা করে পুলিশ।

ঘটনাটি ঠিক কী? পুলিশের দাবি, আশিসবাবু জেরায় জানান, তিনি ঘোলার ডি ব্লকের বাসিন্দা। বিয়ে করেননি। মায়ের সঙ্গে থাকেন। বছর তিন আগে ফেসবুকে পায়েলের সঙ্গে আলাপ। কিছু দিন পর থেকে শুরু হয় হোয়াট্‌সঅ্যাপে নিয়মিত কথা বলা। এমনকী, মোবাইলে আশিসবাবু তাঁর এবং পায়েলের বিভিন্ন ছবিও তুলে রেখেছিলেন বলে দাবি পুলিশের।

সম্প্রতি বনগাঁ চাঁদপাড়ায় পায়েলের বিয়ে ঠিক করেন বাড়ির লোকজন। পাকা দেখাও হয়ে যায়। পুলিশের দাবি, ওই কনস্টেবল জানান, এর পরে নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারেননি তিনি। পায়েল এড়িয়ে চলতে শুরু করলে আশিসবাবু বিভিন্ন ঘনিষ্ঠ অবস্থার ছবি তাঁকে পাঠিয়ে ব্ল্যাকমেল করতে থাকেন বলে অভিযোগ। শর্ত একটাই, অন্য কাউকে বিয়ে করা যাবে না। পুলিশের অনুমান, অসম বয়সী দু’জনের সম্পর্কের কথা জানাজানি হওয়ার ভয়েই পায়েল আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে। তদন্তকারীদের দাবি, এ দিন পায়েলের শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে আশিসবাবুর উপস্থিতি এবং স্বীকারোক্তিই এই মৃত্যু-রহস্যের জট খুলে দিল।

বুধবার রাতে আশিসবাবুর বিরুদ্ধে পায়েলকে আত্মহত্যায় প্ররোচনার লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয় তাঁর পরিবারের তরফে। ব্যারাকপুর কমিশনারেটের এক কর্তা বলেন, ‘‘তদন্তের আর বাকি রইল কী? এ তো অপরাধীই পায়ে হেঁটে ঘটনাস্থলে পৌঁছে গেল!’’ স্থানীয়দের বক্তব্য, এর আগেও বিভিন্ন জনের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করে মোবাইলে তাঁদের ছবি তুলে ব্ল্যাকমেল করার অভিযোগ উঠেছিল আশিসবাবুর বিরুদ্ধে।
তাঁর মোবাইলটি আটক করেছে পুলিশ। সেখান থেকে বহু মহিলার ছবি ও হোয়াট্‌সঅ্যাপ-ফেসবুক চ্যাট পাওয়া গিয়েছে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন