জখম প্রৌঢ়া। ইনসেটে, কাটা হাত। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম
দিন তিনেক আগেই জানলায় রাখা কনুই থেকে হাত উড়ে গিয়েছিল বর্ধমানের এক তরুণীর। প্রায় তারই পুনরাবৃত্তি হল মুর্শিদাবাদের ইসলামপুরে।
তবে এ বারে দুর্ঘটনার অন্যতম প্রধান কারণ দু’টি বাসের রেষারেষি। যেমনটা আগে ঘটেছে কলকাতাতেও। সোমবার যাঁর হাত গিয়েছে, লুতফা বিবি নামে সেই ভিক্ষা করে খান। তাঁকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। পুলিশ বাস দু’টিকে আটক করলেও চালকেরা পালিয়েছে।
লুতফা বিবির বাড়ি নওদা থানার দুধসর গ্রামে। সকালে বাস ধরে তিনি বহরমপুর এসেছিলেন। সেখান থেকে জলঙ্গির বাস ধরে তিনি ডোমকলের দিকে যাচ্ছিলেন। বসেছিলেন বাঁ দিকে জানলার ধারে। কনুই ছিল জানলার উপরে। মাঝে ইসলামপুর বাজারে দাঁড়িয়ে থাকা একটি বাসকে কাটিয়ে হুড়মুড়িয়ে এগোনোর চেষ্টা করে তাঁদের বাসটি। আগের বাসটিও ছেড়ে দেয়। এক ঝটকায় লুতফার বাঁ হাতের অর্ধেক কেটে রাস্তায় পড়ে যায়।
লুতফার স্বামী সেফারুদ্দিন শেখ দিনমজুরি করেম। দাদা কিফাতুল্লা শেখের বাড়ির একপ্রান্তে পাটকাঠির বেড়া ও খড়ের চালা দেওয়া কুঁড়ে ঘরে থাকেন দু’জনে। সন্তান নেই। স্বামীর একার রোজগারে সংসার চলে না বলে লুতফা রোজই ভিক্ষা করতে যান। এ দিনও তা-ই যাচ্ছিলেন। ইসলামপুর বাজার এলাকার আক্কাশ শেখ ও ফজলুল হকদের অভিযোগ, ‘‘রোজ এখানে বাসে-বাসে রেষারেষি হয়। তবু পুলিশ নির্বিকার!’’
ক্ষোভ রয়েছে কয়েক দশক ধরে রাস্তা জবরদখল করে জাঁকিয়ে বসা দোকানবাজার নিয়েও। এলাকাবাসীর মতে, দখলদারির কারণে রাস্তা খুবই সংকীর্ণ হয়ে গিয়েছে। তার ফলেও পাশ কাটাতে গিয়ে এক বাস অন্যটির ঘাড়ের উপরে পড়ছে। বাস মালিক সমিতির জেলা সম্পাদক তপন অধিকারী বলেন, ‘রাস্তা সরু হয়ে যাওয়ায় যানজটে বাসের দেরি হয়ে যায়। তাতে তাড়াহুড়ো করার প্রবণতা বাড়ে, দুর্ঘটনার ঝুঁকিও।’’
জেলার পুলিশ সুপার সি সুধাকর বলেন, ‘‘ঘটনাস্থল লাগোয়া রাস্তার দু’পাশে জবরদখল করে গড়ে ওঠা দোকান-বাজার উচ্ছেদ করা হয়েছে।’’ আক্কাশ-ফজলুলদের আক্ষেপ, ‘‘এই উচ্ছেদ অভিযান আগে হলে মহিলার হাতটা হয়তো কাটা পড়ত না।’’