বাধা পেরিয়ে নমাজ পড়তে মসজিদে ফরিদারাও

কিছু দিন আগেই কলকাতার দু’টি মসজিদ কর্তৃপক্ষ মহিলাদের মসজিদে নমাজ পড়া অনুমোদন করেছেন। রাজ্যের রাজধানী শহর থেকে পাঁচশো কিলোমিটার দূরের এই জনপদেও এমন সিদ্ধান্তে খুশি স্থানীয় মহিলারা।

Advertisement

মেহেদি হেদায়েতুল্লা

চাকুলিয়া শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৯ ০১:৩৪
Share:

আমরাও: মসজিদে নমাজ পড়ছেন মহিলারা। নিজস্ব চিত্র

যে রাঁধে সে কি সব সময় চুল বাঁধার সুযোগ পায়? এই প্রশ্নটাই এত দিন ঘুরত চাকুলিয়ার ইশাগঞ্জের ঘরে ঘরে। রমজান মাসেও সারা দিন ঘরের কাজেই ব্যস্ত থাকেন এখানকার বেশিরভাগ সংখ্যালঘু মহিলা। তার মধ্যে যেটুকু ফুরসত মিলত, ঘরেই পড়ে নিতেন নমাজ। কারণ, মসজিদে যাওয়া নিয়ে ছিল নানা বিধিনিষেধ। চেষ্টা যে করেননি, তা নয়। কিন্তু সেই লড়াইয়ের পথ ছিল কঠিন। এ বারে উত্তর দিনাজপুরের এই জনপদে যেন উলটপুরাণ। এলাকার জামে মসজিদ কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, দিনভর রোজা রাখার পরে মসজিদেই তরাবির নমাজ পড়তে পারবেন মহিলারা।

Advertisement

কিছু দিন আগেই কলকাতার দু’টি মসজিদ কর্তৃপক্ষ মহিলাদের মসজিদে নমাজ পড়া অনুমোদন করেছেন। রাজ্যের রাজধানী শহর থেকে পাঁচশো কিলোমিটার দূরের এই জনপদেও এমন সিদ্ধান্তে খুশি স্থানীয় মহিলারা। এই সিদ্ধান্তের পিছনে কতটা লড়াই আছে, সেটা ধরা পড়ে ফরিদা বিবি, আসমা খাতুন, ইয়াসমিন খাতুনদের কথায়। তাঁরা জানালেন, প্রথমে আশপাশের মহিলাদের এ নিয়ে সচেতন করা হয়, তার পর যুদ্ধটা শুরু হয় বাড়ির ভিতর থেকে। বাড়ির ছেলেদের বিষয়টি বোঝানো হয়। পরে সেই ছেলেরাই বাড়ির মেয়েদের দাবির কথা মসজিদ কমিটির কাছে জানান। এর মধ্যে গত বছর থেকেই মসজিদে গিয়ে নমাজ পড়ার প্রবণতা শুরু হয়েছে বাড়ির মেয়েদের মধ্যে। তাতে বাধাও এসেছিল। কিন্তু অনেকের ক্ষেত্রে বাড়ির ছেলেরা পাশে থাকায় লড়াইটা চালানো সহজ হয়ে পড়ে। ফরিদা, আসমারা আরও জানান, আগে মহিলারা মসজিদে আসতেন বছরে একবার, শুধু ইদের নমাজ পড়তে। এ বার থেকে সেই ছবিটা বদলে গেল। জামে মসজিদ কমিটির এই সিদ্ধান্ত গোটা এলাকা দৃষ্টান্ত হিসেবে রয়ে যাবে।

ফরিদা বলেন, ‘‘প্রথম বছর অনেকে বাধা দিয়েছিলেন। কিন্তু এখন রোজই বাড়ছে নমাজ পড়তে আসা মহিলাদের সংখ্যা।’’ তিনিই জানান, গত বছর ১৫ জনের পর এখন সংখ্যাটা প্রায় ২৫। ফরিদাই বললেন, ‘‘আরবে অনেক মুসলিম দেশে পুরুষদের সঙ্গে মহিলারা নমাজ পড়েন। দেরিতে হলেও সচেতনতা বাড়ছে।’’

Advertisement

মসজিদে গিয়ে মহিলারা নমাজ পড়তে পারবেন কিনা, তাই নিয়ে এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বিতর্ক চলেছে। এ বারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে মসজিদের ইমাম মহিবউল হক বলেন, ‘‘শরিয়ত অনুযায়ী, মহিলারা চাইলে মসজিদে গিয়ে নমাজ পড়তেই পারেন। তবে সেখানে তাঁদের নমাজ পড়ার আলাদা ব্যবস্থা করতে হবে। যা এই এখানে করা হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন