Dengue

ডেঙ্গি-ভয়কে পুঁজি করে ভুয়ো ডাক্তারি

কারও দাবি, তাঁর দেওয়া পাঁচ ফোটা ওষুধ পাঁচ দিন খেলে ডেঙ্গি হয় না। কারও দাবি, এটা সমাজসেবা। তাই ডেঙ্গি চিকিৎসায় এক পয়সাও নেন না।  

Advertisement

দেবদূত ঘোষঠাকুর

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৭ ০৪:০১
Share:

নামের আগে ডাক্তার লেখা। ডিগ্রির জায়গায় লেখা ডিএমএস-ইএইচ। দাবি, ডেঙ্গি হওয়ার আগেই চিকিৎসা শুরু করে দিতে পারেন। ডেঙ্গির প্রতিষেধক তাঁর করায়ত্ত।

Advertisement

ডেঙ্গি আতঙ্কের মধ্যে শহরতলির বিভিন্ন অংশে পোস্টার সেঁটে রীতিমতো ব্যবসা জমিয়ে ফেলেছেন এমনই এক শ্রেণির মানুষ।

কারও দাবি, তাঁর দেওয়া পাঁচ ফোটা ওষুধ পাঁচ দিন খেলে ডেঙ্গি হয় না। কারও দাবি, এটা সমাজসেবা। তাই ডেঙ্গি চিকিৎসায় এক পয়সাও নেন না।

Advertisement

রাস্তার ধারে সাঁটা বিজ্ঞাপনের ফোন নম্বরের সূত্রে এমনই এক বিজ্ঞাপনদাতা ‘চিকিৎসক’কে ধরা গেল মঙ্গলবার। দক্ষিণ শহরতলিতে নিজের বাড়িতে চেম্বার খুলে রোগী দেখছেন, ডেঙ্গির প্রতিষেধক ওষুধ পর্যম্ত দিচ্ছেন। এ হেন সুবীর চট্টোপাধ্যায়ের নামের নীচে যে ডিগ্রিগুলি লেখা তার প্রথমটি ডিএমএস-ইএইচ। সেটা কী? ‘চিকিৎসকে’র দাবি, তিনি দিল্লি থেকে এই ডিগ্রি পেয়েছেন— ডক্টর ইন মেডিসিন অ্যান্ড সার্জারি। তার পরে হাইফেন দিয়ে লেখা ইএইচ। সেটা? সুবীরবাবু বললেন, ‘‘ইলেক্ট্রোহার্বাল। অনেক জায়গায় এই চিকিৎসা হচ্ছে।’’

রেজিস্ট্রেশন আছে? সুবীরবাবুর দাবি, ‘‘অবশ্যই। দিল্লির রেজিস্ট্রেশন। না হলে প্র্যাক্টিস করছি কী ভাবে?’’

পোস্টারে সুবীরবাবু লিখেছেন, ডেঙ্গি হওয়ার আগেই ডেঙ্গির চিকিৎসা শুরু করেন তিনি। ‘‘আমার দেওয়া ওষুধ পাঁচ ফোটা খেলে ডেঙ্গি আর হবে না।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘এটা স্বীকৃত ওষুধ। অনেকেই ব্যবহার করছেন।’’ ডেঙ্গির প্রতিষেধক খুঁজতে গোটা বিশ্ব হন্যে। আর এ রকম একটা ওষুধ নিয়ে তিনি বসে আছেন? সুবীরবাবু লাইন কেটে দেন।

স্বাস্থ্য ভবনে খোঁজ করতে কর্তারা বললেন, সুবীরবাবু যে ডিগ্রি নিয়ে চিকিৎসা করছেন তেমন কোনও ডিগ্রির কথা তাঁদের জানা নেই। কেউ যদি এমন ডিগ্রি নিয়ে ডেঙ্গির মতো রোগের চিকিৎসা করেন তা বিধিসম্মত নয়। অভিযোগ এলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে। স্বাস্থ্য ভবন পরিষ্কার বলছে, ডেঙ্গির কোনও প্রতিষেধক এখনও তৈরি হয়নি। এ ধরনের ওষুধ খেলে হিতে বিপরীত হওয়ারই আশঙ্কা।

ওই কর্তা আরও বলেন, পেঁপে পাতার রসে প্লেটলেট বাড়ে বলে জোর প্রচার চলছে রাজ্য জুড়ে। কিন্তু পেঁপে পাতার রসের সঙ্গে প্লেটলেট বাড়ার কোনও সম্পর্কই নেই। এই পরিস্থিতিতে মানুষের মন থেকে ভ্রান্তি হটাতে রাজ্য সরকার কোন ভূমিকা নিয়েছে কি না, সে প্রশ্ন অবশ্য এড়িয়ে গিয়েছেন ওই স্বাস্থ্য-কর্তা। কলকাতার এক সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকের মন্তব্য, ডেঙ্গির কোনও প্রতিষেধক যে নেই, এ ব্যাপারে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর মানুষকে আগে থেকে সচেতন করেনি। এই অবস্থায় বিভ্রান্ত মানুষ হাতের সামনে যা পাচ্ছেন, সেটাই আঁকড়ে ধরছেন। তাতেই পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছেন অনেকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন