ক্লাবে খয়রাতি নিয়ে ফের বিঁধল হাইকোর্ট

এক বিচারপতির পরে আর এক বিচারপতি। সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরে এ বার দেবাংশু বসাক। মাস দুয়েকের ব্যবধানে ক্লাব খয়রাতির প্রসঙ্গ টেনে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দিকে ফের কটাক্ষের বাণ হানল কলকাতা হাইকোর্ট।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:৫৩
Share:

এক বিচারপতির পরে আর এক বিচারপতি। সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরে এ বার দেবাংশু বসাক। মাস দুয়েকের ব্যবধানে ক্লাব খয়রাতির প্রসঙ্গ টেনে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দিকে ফের কটাক্ষের বাণ হানল কলকাতা হাইকোর্ট।

Advertisement

৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণে জমিদাতাদের ক্ষতিপূরণের টাকা রাজ্য কেন মেটাতে পারছে না, গত ডিসেম্বরে সে প্রশ্ন তুলে বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায় টেনে এনেছিলেন ক্লাব-অনুদানের প্রসঙ্গ। আর মঙ্গলবার বিচারপতি দেবাংশু বসাক প্রসঙ্গটি উত্থাপন করলেন শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের কর্মীদের বকেয়া ভাতা সংক্রান্ত মামলায়। আদালত চায়, রাজ্য সরকার যে তহবিল থেকে ক্লাবকে বিলি করার টাকা পেয়ে থাকে, তা থেকেই শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের কর্মীদের পাওনা ভাতা মেটানো হোক।

কেন্দ্রীয় শিশুশিক্ষা মিশন প্রকল্পে নিযুক্ত মুর্শিদাবাদের ৯১ জন কর্মী ১৯ মাসের ভাতা না-পেয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন গত বছর। এ দিন বিচারপতি বসাকের এজলাসে মামলাটির শুনানি ছিল। সওয়াল করতে উঠে আবেদনকারীদের কৌঁসুলি পার্থপ্রতিম রায় অভিযোগ করেন, তাঁর মক্কেলদের মাসে ৮০০-১২০০ টাকা ভাতা পাওয়ার কথা। কিন্তু ২০০৮-এর মার্চ থেকে ২০০৯-এর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ওঁরা কোনও ভাতা পাননি। ‘‘সরকার স্বীকার করছে যে, ওঁরা কাজ করেছেন। অথচ বকেয়া মেটাচ্ছে না!’’— বলেন তিনি। বিচারপতি বসাক সরকারি কৌঁসুলির কাছে জানতে চান, ‘‘ওঁরা ভাতা পাচ্ছেন না কেন?’’

Advertisement

সরকারি কৌঁসুলি পঙ্কজ হালদার ব্যাখ্যা দেন, ‘‘প্রকল্পটি কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে। ২০০৪-এ চালু হয়েছিল, ২০০৯-এর সেপ্টেম্বরে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। দিল্লিও টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।’’

তাই কর্মীরা শেষ ১৯ মাসের ভাতা পাননি বলে সরকারি কৌঁসুলি দাবি করেন। শুনে বিচারপতি বসাকের পাল্টা প্রশ্ন— ‘‘ওঁরা তো রাজ্যের শিশুদেরই পরিষেবা দিয়েছেন! তা হলে ভাতা পাবেন না কেন?’’ সরকারি কৌঁসুলির জবাব, ‘‘কেন্দ্র তো প্রকল্পটাই বন্ধ করে দিল! রাজ্য টাকা পাবে কোথা থেকে?’’

বিচারপতি এ বার ক্লাব-অনুদানের প্রসঙ্গ তোলেন। সরকারি কৌঁসুলিকে উদ্দেশ করে বিচারপতি বলেন, ‘‘যেখান থেকে আপনারা ক্লাবকে দেওয়ার টাকা পান, সেখান থেকেই টাকা মেটাবেন। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে বকেয়া ভাতা মিটিয়ে দিতে হবে।’’

এমতাবস্থায় প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে দু’মাস আগে হাইকোর্টের একটি ঘটনা। যে দিন প্রায় একই ভাবে রাজ্য সরকারের ‘ক্লাব খয়রাতি’ নিয়ে কটাক্ষ করেছিলেন বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়। কী রকম?

গত বছরের ২৭ অক্টোবর নেতাজি ইন্ডোরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে রাজ্যের অন্তত ১১ হাজার ক্লাবকে মোট ১৪০ কোটি টাকা বিলি করা হয়। আর ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের কাজে জমিদাতাদের ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত মামলাটি বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায়ের এজলাসে ওঠে ৩ ডিসেম্বর। তাতে আবেদনকারীদের অভিযোগ ছিল, কেন্দ্র টাকা দিয়ে দেওয়া সত্ত্বেও রাজ্য জমিদাতাদের ক্ষতিপূরণ মেটাচ্ছে না। ‘‘কেন্দ্র ক্ষতিপূরণের টাকা রাজ্যকে দিয়ে দিয়েছে। তবু জমিদাতারা টাকা পাননি! তা হলে কি আমাকে ধরে নিতে হবে যে, সেই টাকাই নেতাজি ইন্ডোর থেকে বিলানো হয়েছে?’’— মন্তব্য করেন বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায়।

বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায়ের এজলাস থেকে মামলাটি বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দারের এজলাসে গিয়েছে। এখনও নিষ্পত্তি হয়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন