গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
রথযাত্রা মামলায় বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর সিঙ্গল বেঞ্চের স্থগিতাদেশকে খারিজ করল বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দারের ডিভিশন বেঞ্চ। শুক্রবার দিনভর শুনানির পর ডিভিশন বেঞ্চ তপোব্রত চক্রবর্তীর রায়ের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন তোলে। ডিভিশন বেঞ্চ আগামী শুক্রবারের মধ্যে বিজেপির তিন প্রতিনিধির সঙ্গে রাজ্য প্রশাসনের তিন শীর্ষকর্তাকে বৈঠক করে সরকারকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাতে বলেছে।
রায় ঘোষনার পরই আদালতের রায়কে স্বাগত জানিয়ে ইট করেন বিজেপির জাতীয় সভাপতি অমিত শাহ। তিনি বলেন,“ বিজেপিকে বাংলায় রাজনৈতিক কর্মসূচী পালন করার আইনি অধিকার কেড়ে নেওয়ার যে চেষ্টা মমতা দিদি করেছিলেন, তা ব্যর্থ করে দিয়েছে আদালত। আদালত রাজ্য প্রশাসনকে বলেছে সাহায্য করতে। এটা গনতন্ত্রের জয়। বিজেপি শীঘ্র গনতন্ত্র বাঁচাও যাত্রা শুরু করবে, বাংলায় তৃণমূলের অপশাসনকে প্রকাশ করবে।”
এর আগে বৃহস্পতিবার বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর সিঙ্গল বেঞ্চ বিজেপির রথযাত্রার আর্জি নাকচ করে দেয়। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে যে আইনশৃঙ্খলা সমস্যার কথা বলা হয়েছিল, সেই যুক্তিকেই মান্যতা দিয়ে বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী বলেন,“এত দ্রুত পুলিশের পক্ষে রথযাত্রার জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব নয়।” তিনি আগামী ৯জানুয়ারিপরবর্তী শুনানির দিন স্থির করেন।
ওই দিন বিকেলেই সিঙ্গল বেঞ্চের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে প্রধান বিচারপতির দ্বারস্থ হয় বিজেপি। শুক্রবার সকালে বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দারের ডিভিশন বেঞ্চের কাছে ওই মামলা নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন বিজেপির আইনজীবীরা।
বিজেপির পক্ষ থেকে সিঙ্গল বেঞ্চের রায়কে চ্যালেঞ্জ করার পাশাপাশি আদালতকে জানানো হয়, ৯জানুয়ারি শুনানি হলে ততদিনে প্রস্তাবিত রথযাত্রা অনুষ্ঠানের তিন-চতুর্থাংশ হয়ে যাওয়ার কথা। বিজেপির আইনজীবীরা এ দিন আদালতে নথি জমা দিয়ে বলেন, তাঁরা রথযাত্রার অনুমতি চেয়ে ২৯ অক্টোবর থেকে নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত বারে বারেপ্রশাসনের কাছে বিভিন্ন পর্যায়ে চিঠি দিয়েছেন। কিন্তু তারপরও প্রশাসনের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়নি বিজেপির সঙ্গে। ডিভিশন বেঞ্চ সেই নথি দেখে অ্যাডভোকেট জেনারেলকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করেন। বিচারপতি বলেন,“প্রশাসন যদি এ রকম বসে থাকে তাহলে তা অত্যন্ত বিস্ময়কর নীরবতা।” বিচারপতি বলেন, সময় থাকতে যদি প্রশাসন বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ করে আলোচনা করত তাহলে হয়তো এই পরিস্থিতির উদ্ভব হত না।
আরও পড়ুন: নারদ মামলায় শোভনের সঙ্গেই এ বার ইডি-র জেরা বৈশাখীকে
এ দিন বিচারপতি সব পক্ষের বয়ান শুনে বলেন,“৯ জানুয়ারি পর্যন্ত মামলা স্থগিত রাখলে এর পর ওই মামলার বাস্তবে কোনও কার্যকারিতা থাকবে না।” তিনি পরিষ্কার বলেন, সিঙ্গল বেঞ্চের রায়ের কোনও গ্রহণযোগ্যতা নেই। সরকার এবং বিজেপির মধ্যে ওই যোগাযোগের অভাব দূর করে সমন্বয় বাড়াতে রাজ্য প্রশাসনের তিন শীর্ষকর্তা— মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব এবং রাজ্য পুলিশের ডিজিকে বুধবারের মধ্যে বিজেপির তিন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করার নির্দেশ দিয়েছেন। সেই বৈঠকে গোটা কর্মসূচি এবং সেই সঙ্গে নিরাপত্তার বিষয়টি আলোচনা করে আগামী শুক্রবারের মধ্যে চূড়ান্ত রূপরেখা জানাতে হবে সরকারকে। কী ভাবে ওই কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ ভাবে পালিত হবে, সেই পরিকল্পনা এবং রূপরেখা ঠিক করে জানাতে হবে সরকারকে।
আরও পড়ুন: বাংলায় গণতন্ত্র শেষ, মমতার বিরুদ্ধে তোপ দেগে অমিত বললেন রথযাত্রা হবেই
ডিভিশন বেঞ্চের রায় শুনে বিজেপি নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন,“এই রায় ভারতের আইনি ব্যবস্থার জয়। গণতন্ত্রের জয়। সর্বোপরি পশ্চিমবঙ্গের মানুষের জয়।”সিঙ্গল বেঞ্চের বৃহস্পতিবারের রায়ের যে অংশে ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত রথযাত্রা সংক্রান্ত কোনও কর্মসূচি নেওয়া যাবে না বলে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল এ দিন ডিভিশন বেঞ্চ তা সংশোধন করে দেয়।
(বাংলার রাজনীতি, বাংলার শিক্ষা, বাংলার অর্থনীতি, বাংলার সংস্কৃতি, বাংলার স্বাস্থ্য, বাংলার আবহাওয়া -পশ্চিমবঙ্গের সব টাটকা খবর আমাদের রাজ্য বিভাগে।)