HC on District Primary School Council

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলল হাই কোর্ট, সচিবের দেওয়া নির্দেশ বাতিল

২০১৪ সালে পূর্ব মেদিনীপুরে প্রাথমিকের শিক্ষক হিসাবে চাকরি পান নীলাঞ্জনা মাইতি। চাকরির তিন বছর পরে ওই জেলার কসবা শীতলা প্রাথমিক স্কুলে বদলি হন তিনি।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২৩:২৮
Share:

প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

রাজ্যে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ (ডিপিএসসি)-এর অস্তিত্ব রয়েছে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠল কলকাতা হাই কোর্টে। অভিযোগ, ২০১৫ সালের পর থেকে রাজ্যের কোনও জেলাতেই ডিপিএসসি নেই। যদি তা না থাকে তবে শিক্ষক নিয়োগ, বদলির মতো একাধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজ কী পদ্ধতি চলছে তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে আদালত। সোমবার পূর্ব মেদিনীপুরের একটি মামলায় রায় ঘোষণা করে বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজ জানান, ডিপিএসসি-র মেয়াদ শেষের পরে নতুন সদস্য নিয়োগ ও গেজেট বিজ্ঞপ্তি ছাড়া ডিপিএসসি কার্যকর থাকে না। সচিব নিজে কোনও সদস্য নন, তিনি এক জন কর্মচারী মাত্র। ফলে তাঁর সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা সীমিত।

Advertisement

২০১৪ সালে পূর্ব মেদিনীপুরে প্রাথমিকের শিক্ষক হিসাবে চাকরি পান নীলাঞ্জনা মাইতি। চাকরির তিন বছর পরে ওই জেলার কসবা শীতলা প্রাথমিক স্কুলে বদলি হন তিনি। গত বছর জেলার সংসদ সচিব তাঁকে অন্য একটি স্কুলে বদলি করেন। সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন নীলাঞ্জনা। সচিবের বদলির ওই নির্দেশ বাতিল করে হাই কোর্ট। তার পাঁচ দিনের মাথায় আবার ওই শিক্ষিকাকে বদলির নির্দেশ জারি করেন সচিব। ওই নির্দেশকেও চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে মামলা দায়ের হয়। মামলাকারীর আইনজীবী ফিরদৌস শামিম এবং গোপা বিশ্বাসের সওয়াল, শেষ বার ২০১১ সালে পূর্ব মেদিনীপুরের ডিপিএসসি গঠিত হয়েছিল। তার মেয়াদ শেষ হয় ২০১৫ সালে। কোনও শিক্ষককে বদলি করার ক্ষমতা শুধুমাত্র ডিপিএসসি-র রয়েছে। এ ক্ষেত্রে বদলির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সংসদের সচিব। আইন অনুযায়ী যা অবৈধ। সচিব সংসদের সদস্য নন। এক জন সরকারি কর্মচারী হিসাবে সচিব কোনও শিক্ষকের বদলির নির্দেশ দিতে পারেন না।

প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের যুক্তি ছিল, সংসদ একটি চিরস্থায়ী কর্পোরেট বডি। সেখানে শুধুমাত্র সদস্যদের মধ্যে পরিবর্তন হয়। ডিপিএসসি-র সদস্যদের মেয়াদ ৪ বছরের জন্য হয়। ফলে সদস্যদের মেয়াদ শেষ হলেও ডিপিএসসি-র কাজ চলতে থাকে। ওই শিক্ষিকার বদলি আইন মেনেই হয়েছে। হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণ, ২০১৫ সালের পর থেকে নতুন সদস্যদের নিয়োগ নিয়ে কোনও বিজ্ঞপ্তি নেই। অর্থাৎ, ডিপিএসসি আইন মেনে গঠন করা হয়নি। সচিব ডিপিএসসি-র সদস্য নন, ফলে তাঁর বদলির ক্ষমতা নেই। সংশ্লিষ্ট আইনের ৪২(২) ধারা অনুযায়ী, একটি ডিপিএসসি-এর মেয়াদ শেষ হলেও, নতুন গঠিত না হওয়া পর্যন্ত পুরানো অফিসই বহাল থাকবে। এটি অন্তর্বর্তিকালীন পদক্ষেপ। কারণ, যদি চিরস্থায়ী হিসাবে ধরা হয়, তবে কখনও নতুন নির্বাচন বা পুনর্গঠন হবে না। যা গণতান্ত্রিক নীতি লঙ্ঘিত করবে। বিচারপতি ভরদ্বাজের নির্দেশ, ওই শিক্ষিকা পুরানো স্কুলেই থাকবেন। তাঁর বদলির সিদ্ধান্ত বাতিল করা হল।

Advertisement

১৯৭৩ সালের পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা আইন অনুযায়ী প্রতিটি জেলায় একটি করে ডিপিএসসি থাকবে। সাধারণত ২০–৩০ জন সদস্য নিয়ে একটি জেলার ডিপিএসসি গঠিত হয়। সেখানে চেয়ারম্যান নিয়োগ করে রাজ্য সরকার। এ ছাড়া সদস্য হিসাবে থাকেন জেলা স্কুল পরিদর্শক, জেলা ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার অফিসার, জেলা সমাজ শিক্ষা অফিসার, প্রতিটি মহকুমা থেকে এক জন করে পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য, তিন জন প্রাথমিক শিক্ষক, জেলার পুরসভাগুলির থেকে তিন জন কাউন্সিলর এবং রাজ্যের মন্ত্রী নন জেলার এমন সর্বাধিক ছ’জন বিধায়ক পর্যন্ত। একটি ডিপিএসসি-র কাজের মধ্যে পড়ে শিক্ষক নিয়োগ, শিক্ষক বদলি, বেতন সংক্রান্ত সুপারিশ, বিদ্যালয়ের পরিকাঠামো, রাজ্যের শিক্ষা নীতি বাস্তবায়ন, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের মতো সিদ্ধান্ত। এই মামলায় বলা হয়েছে, ২০১৫ সালের পর থেকে পূর্ব মেদিনীপুরের কোনও বৈধ ডিপিএসসি গঠিত হয়নি। ফলে ২০১৫ সালের পর থেকে ডিপিএসসি-র যাবতীয় সিদ্ধান্ত প্রশ্নের মুখে পড়েছে। আইনজীবী ফিরদৌসের কথায়, ‘‘শুধু পূর্ব মেদিনীপুর নয় রাজ্যের বেশিরভাগ জেলায় আইন মেনে ডিপিএসসি গঠন করা হয়নি। ফলে অস্থায়ী ডিপিএসসি-র সিদ্ধান্ত কতটা বৈধ তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ২০১৫ সালের পর থেকে তাদের প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত বাতিল হতে পারে। প্রাথমিকের ৩২ হাজার চাকরি বাতিল মামলাতেও এই বিষয়টি তোলা হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement