বিকাশ ভবনের সামনে চাকরিহারা শিক্ষকদের অবস্থান। —ফাইল চিত্র।
এসএসসির চাকরিহারা শিক্ষকদের সেন্ট্রাল পার্কের সামনে কর্মসূচির অনুমতি দিল কলকাতা হাই কোর্ট। চাকরিহারা শিক্ষকদের দু’জন শুনানিতে উপস্থিত হন। তাঁদের উদ্দেশে বিচারপতি ঘোষের মন্তব্য, “আপনাদের কর্মসূচির ফলে সাধারণ মানুষের অসুবিধা হচ্ছে। আপনাদের জায়গা কে দিয়েছেন? নিজেরাই ওখানে গিয়ে করছেন। সেন্ট্রাল পার্কে করুন। আপনাদের কর্মসূচি নিয়ে আমার কোনও বক্তব্য নেই। সাধারণ মানুষের জন্য আমাদের চিন্তা। ১৫-১৬ দিন করছেন তো। করে যান। রাস্তার উল্টোদিকে সেন্ট্রাল পার্কে দিকে করুন।”
শুক্রবার বিচারপতি ঘোষ নির্দেশ দেন, একসঙ্গে ২০০ লোক নিয়ে কর্মসূচি করা যাবে। অদলবদল করে জমায়েত হবে। আন্দোলকারীদের ১০ জন প্রতিনিধির নাম পুলিশের কাছে জমা দিতে হবে। জমায়েত নিয়ে পুলিশের তাঁদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখবে। অন্য দিকে, আদালত জানিয়েছে, যাঁদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও কড়া পদক্ষেপ করতে পারবে না পুলিশ।
একই সঙ্গে আদালত রাজ্যকে খাওয়ার জল, শৌচালয় থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় সব বন্দোবস্ত করার নির্দেশ দেয়। চাকরিহারাদের উদ্দেশে বিচারপতি বলেন, “১০ জনের নাম পুলিশকে দিয়ে দিন। ১২ ঘণ্টা করে কর্মসূচি করুন। অদলবদল করে ২০০ জন লোক নিয়ে কর্মসূচি করুন।”
চাকরিহারা শিক্ষকদের এক জন আদালতে বলেন, “৫০-১০০ জন নিয়ে আন্দোলন হয় না। ৪০০-৫০০ জন লোক লাগে।” রাজ্যের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, এত লোক নিয়ে কর্মসূচি হলে অসুবিধা হবে। তাঁর সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন আন্দোলনকারীরা। তাঁদের উদ্দেশে বিচারপতির মন্তব্য, “আপনারা ওখানে যা করছেন, আদালতে তা করবেন না। রাজ্যকেও মানবিক ভাবে বিষয়টি দেখতে হবে। কারও বিরুদ্ধে কোনও কড়া পদক্ষেপ করা যাবে না।”
কল্যাণ বলেন, “প্রতি দিন সেখানে রাজনৈতিক ব্যক্তিরা যাচ্ছেন। এটা চলতে পারে না। বাইরের লোক কেন যাবে? বন্ধ করা দরকার।” বিচারপতি পাল্টা বলেন, “আপনি কি মনে করেন এ দেশে এমন নির্দেশ দেওয়া যেতে পারে?”
চাকরিহারাদের উদ্দেশে বিচারপতির মন্তব্য, “যোগ্য শিক্ষকদের কি চিহ্নিত করতে পেরেছেন? আইনশৃঙ্খলা যাতে অবনতি না হয় সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। আপনারা শিক্ষক। আপনারা তো আবার পড়াতে যাবেন। এমন কিছু করবেন না যাতে আদালতকে হস্তক্ষেপ করতে হয়। আমি জানি সবাইকে চেনা সম্ভব নয়। এত লোককে সবাই তো চিনবেন না। কে, কোথায় কী করবেন তার দায় আপনাদের উপর চলে যাবে। তাই পুলিশকে পুলিশের কাজ করতে দিন।”
মামলাকারীদের আইনজীবীর বক্তব্য, “এফআইআর খারিজ চেয়ে আবেদন করেছি। এখনই রাজ্যই নতুন করে আবেদন করছে আদালতে। আমাদের কাঁধে বন্দুক রেখে কাজ করতে চাইছে রাজ্য।” আদালত জানায়, আগামী ৪ জুলাই ওই বিষয়ে পরবর্তী শুনানি হবে। প্রসঙ্গত, গত ১৫ মে থেকে রাজ্যের শিক্ষা দফতর বিকাশ ভবনের সামনের রাস্তায় বসে অবস্থান বিক্ষোভ চালাচ্ছেন চাকরিহারা শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীদের একাংশ। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে চাকরি হারিয়েছেন ২৫,৭৩৫ জন শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মী। তাঁরা সকলেই ২০১৬ সালের এসএসসি-র নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যোগ দিয়েছিলেন।
চাকরিহারা যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চের তরফে চিন্ময় মণ্ডল বলেন, “এখনও হাই কোর্টের লিখিত নির্দেশ পাইনি। তার পর আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”