Calcutta High Court

বিকাশদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ নিয়ে জমা পড়েনি হলফনামা, কুণালদের বিরুদ্ধে রুল জারি করল হাই কোর্ট

বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য এবং রাজর্ষি ভরদ্বাজের বৃহত্তর বেঞ্চ জানায়, সব অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করা হল।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০২৫ ১৪:০১
Share:

(বাঁ দিকে) বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। কুণাল ঘোষ (ডান দিকে)। — ফাইল চিত্র।

বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু এবং আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের ঘটনায় আদালত অবমাননার রুল জারি করল কলকাতা হাই কোর্ট। বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য এবং রাজর্ষি ভরদ্বাজের বৃহত্তর বেঞ্চ জানায়, সব অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করা হল। ফলে রুল জারি হল তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ এবং উচ্চ প্রাথমিকের বিক্ষোভকারী সাত জন চাকরিপ্রার্থীর বিরুদ্ধে।

Advertisement

ওই ঘটনায় পুলিশ কমিশনার আদালতে রিপোর্ট জমা দিয়েছেন। হাই কোর্টে শুনানিতে কুণালের আইনজীবী জানান, ঘটনার দিন তাঁর মক্কেল উপস্থিত ছিলেন না। সে দিন রাজারহাটে একটি সাক্ষাৎকার দিচ্ছিলেন। আদালতের পর্যবেক্ষণ, ‘‘গত ২ মে আমরা প্রাথমিক ভাবে বলেছিলাম, এটা অপরাধমূলক কাজ। আদালত অবমাননার নোটিস পেলে ১৫ দিনের মধ্যে জবাব দিতে হবে। তার পরেও কেউ হলফনামা জমা দেননি।’’ বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘কেন দেরি হল, তা আর জানতে চাইছি না। আমরা সবার বিরুদ্ধে রুল জারি করছি। কাউকে জেলে পাঠাচ্ছি না। রুলের উত্তর দিন।’’ কারও বিরুদ্ধে রুল জারি করার অর্থ হল, তাঁকে হাই কোর্টে সশরীরে হাজিরা দিয়ে জানাতে হবে, কেন তাঁর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করবে না আদালত।

শুনানির শেষ মুহূর্তে কুণাল বিচারপতিদের কাছে আবেদন করেন, ২-৩ মিনিট সময় দেওয়া হোক। তিনি কিছু বলতে চান। আদালত তাঁর আবেদনে কোনও গুরুত্ব দেয়নি। তিন বিচারপতি এজলাস থেকে উঠে যান। আগামী ১৬ জুন এই মামলার পরবর্তী শুনানি। আদালত থেকে বেরিয়ে তৃণমূল নেতা কুণাল জানান, বিচারব্যবস্থাই শেষ ভরসা। তা রয়েছে বলে সমাজ টিকে আছে। তাঁর জীবনেও নানা ভাবে আদালত জড়িয়ে রয়েছে। এর পরেই তিনি বলেন, ‘‘বিচারপতিদের শ্রদ্ধা করি। যাঁরা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে আমার নাম মামলায় গুঁজে দিয়েছেন, তাঁদের করুণা প্রদর্শন করছি। আমি আস্থা রাখছি, তিন বিচারপতির বেঞ্চ বুঝতে পারবেন।’’

Advertisement

কুণালের বিরুদ্ধে রুল জারি হওয়া নিয়ে ইতিমধ্যেই বাম, কংগ্রেস, বিজেপি-র তরফে কটাক্ষ শুরু হয়েছে। পাল্টা তৃণমূল নেতা কুণাল বলেন, ‘‘ছাগলের তৃতীয় সন্তানের মতো কেউ কেউ ভাবছে আমায় বোধ হয় রুল দিয়ে পেটানো হবে!’’ এর পরেই রুল জারি কেন হল তার ব্যাখ্যা দেন কুণাল। তৃণমূল মুখপাত্র বলেন, ‘‘গত সপ্তাহেই আমার হলফনামা তৈরি হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু কলকাতা পুলিশ রবিবার রিপোর্ট জমা দিয়েছে। তার প্রতিলিপি আমার আইনজীবী পেয়েছেন সন্ধ্যা। সেই রিপোর্টে আমার নাম নেই। তা হলফনামায় উল্লেখ থাকা প্রয়োজন। সে করাণেই আজ জমা দিতে পারিনি। ১৬ তারিখ অবশ্যই জমা দেব।’’

কলকাতা হাই কোর্টের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের চেম্বারের বাইরে গত শুক্রবার বিক্ষোভ দেখান উচ্চ প্রাথমিকের চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ। বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর বিরুদ্ধে আপত্তিকর মন্তব্য এবং স্লোগান দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এই ঘটনায় আদালত অবমাননার মামলা করতে চেয়ে কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন বার অ্যাসোসিয়েশনের কয়েক জন আইনজীবী। প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ এই ঘটনায় ক্ষোভপ্রকাশ করে। ডিভিশন বেঞ্চ আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করার অনুমতি দেয়। বিচারপতি বসুর বিরুদ্ধে আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন, এই অভিযোগে কুণালের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের হয়। স্বতঃপ্রণোদিত ওই মামলায় কুণাল ছাড়াও ওই মামলায় রয়েছে উচ্চ প্রাথমিকের কয়েক জন চাকরিপ্রার্থীর নাম। এই নিয়ে কুণাল এবং ওই চাকরিপ্রার্থীদের হলফনামা চেয়েছিল হাই কোর্ট। তা জমা পড়েনি বলে তাঁদের বিরুদ্ধে রুল জারি করা হল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement