—ফাইল চিত্র।
‘শিকার উৎসব’ থাকলেও আইন অনুযায়ী বন্যপ্রাণী হত্যা নিষিদ্ধ। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে বারবার সেই আইন ভাঙা হয়েছে ও হচ্ছে বলে অভিযোগ।
ওই আইন যাতে মেনে চলা হয়, সেই আবেদন নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি থোট্টাথিল ভাস্করন নায়ার রাধাকৃষ্ণন ও বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দারের ডিভিশন বেঞ্চ বৃহস্পতিবার রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ)-কে নির্দেশ দিয়েছে, বন্যপ্রাণী হত্যা আটকাতে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। বিভিন্ন জেলাশাসক, পুলিশ সুপার, মহকুমাশাসক, বিডিও এবং রেল-কর্তৃপক্ষকে এই বিষয়ে প্রধান মুখ্য (বন্যপ্রাণ)-এর সঙ্গে সব রকম সহযোগিতা করতে বলেছে হাইকোর্ট।
কিন্তু হাইকোর্টের নির্দেশ আদতে কতটা বাস্তবায়িত হবে, সেই বিষয়ে ঘোর সংশয় রয়েছে পরিবেশকর্মীদের। অনেকেই বলছেন, আদালতের নির্দেশ পালনে বহু ক্ষেত্রেই প্রশাসনের একাংশের গা-ছাড়া মনোভাব দেখা যায়। বস্তুত, এ দিনও বন দফতরের শীর্ষ কর্তার ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে আদালত।
ডিভিশন বেঞ্চ ৫ এপ্রিল রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ)-কে নির্দেশ দিয়েছিল, বন্যপ্রাণী হত্যা বন্ধ করতে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, হলফনামা পেশ করে তা আদালতে জানাতে হবে। রাজ্য সরকারের কৌঁসুলি শীর্ষণ্য মুখোপাধ্যায় এ দিন সেই হলফনামা পেশ করেন। তা দেখে বিচারপতি সমাদ্দার মন্তব্য করেন, ‘‘হলফনামা দেওয়ার কথা প্রধান মুখ্য বনপালের। এই হলফনামা যিনি পেশ করেছেন, তিনি রাজ্যের বন্যপ্রাণ শাখার এক জন ‘অ্যাসিস্ট্যান্ট ওয়াইল্ড লাইফ ওয়ার্ডেন’। এত ঔদ্ধত্য!’’
মামলার আবেদনকারী স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার আইনজীবী সিদ্ধার্থ মিত্র ও ঋতুপর্ণা চট্টোপাধ্যায় জানান, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, মুর্শিদাবাদে শিকার উৎসবে অংশগ্রহণকারীরা যথেচ্ছ বন্যপ্রাণী হত্যা করে বলে অভিযোগ তুলে মামলা করা হয়। সেই সব বন্যপ্রাণীর মধ্যে বিরল প্রজাতির প্রাণীও থাকে। ১৯৭২ সালের বন্যপ্রাণী আইন অনুযায়ী যে-কোনও বন্যপ্রাণী হত্যা নিষিদ্ধ। হত্যা আটকাতে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।
ওই সংস্থার পক্ষে শুভ্রজ্যোতি চট্টোপাধ্যায় জানান, কয়েক বছর
ধরে তাঁরা লক্ষ করছেন, শিকার উৎসবে যোগ দিতে গিয়ে দলে দলে লোক জঙ্গলের কাছাকাছি কোনও
রেল স্টেশনে জড়ো হচ্ছেন। সেখান থেকে ট্রেনে চড়ে গন্তব্যে যাচ্ছেন। উৎসবে নির্বিচারে বন্যপ্রাণী হত্যা করা হলেও রাজ্যে বন দফতর হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে আইন মাফিক ব্যবস্থা নিচ্ছে না।