‘মেধা-তালিকা না হলে জেলে পাঠানো হবে সচিবকে’, এসএসসি মামলায় হুঁশিয়ারি হাইকোর্টের

তিন সপ্তাহের মধ্যে ওই মেধা-তালিকা প্রকাশের জন্য ১৮ সেপ্টেম্বর নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। কিন্তু চার মাসেও তা প্রকাশ করা হয়নি বলে অভিযোগ। ওই তালিকা আজ, মঙ্গলবার আদালতে পেশ করার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:২১
Share:

আদালত অবমাননার ‘রুল’ বা বিধি প্রয়োগ এবং দুই এসএসসি-কর্তাকে তলবের মধ্যেই এত দিন বিষয়টি সীমাবদ্ধ ছিল। সোমবার কলকাতা হাইকোর্ট হুঁশিয়ারি দিল, নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগের মেধা-তালিকা হিসেবে যেটি প্রকাশিত হয়েছে বলে এসএসসি দাবি করছে, সেটি প্রকৃত তালিকা না-হলে ওই সংস্থার সচিবকে জেলে পাঠানো হবে।

Advertisement

তিন সপ্তাহের মধ্যে ওই মেধা-তালিকা প্রকাশের জন্য ১৮ সেপ্টেম্বর নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। কিন্তু চার মাসেও তা প্রকাশ করা হয়নি বলে অভিযোগ। ওই তালিকা আজ, মঙ্গলবার আদালতে পেশ করার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা। সেই সঙ্গে সোমবার তিনি স্কুল সার্ভিস কমিশন বা এসএসসি-কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিয়েছেন, এ দিনই সেই তালিকা প্রকাশ করতে হবে। তিনি জানান, আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও এত দিন মেধা-তালিকা প্রকাশ করা হয়নি কেন, হলফনামা পেশ করে তার কারণ দর্শাতে হবে। এসএসসি-র চেয়ারম্যান সৌমিত্র সরকার অবশ্য বলেন, ‘‘মেধা-তালিকা ইতিমধ্যে প্রকাশ করা হয়েছে। আদালত চাইলে সেটি নিয়ে হাজির হবো। আদালতের সব নির্দেশ মানা হবে।’’

এ দিনের শুনানিতে এসএসসি-র সচিব অশোককুমার সাহা হাজির হলেও চেয়ারম্যান আসেননি। তাঁদের আইনজীবী সুতনু পাত্র দাবি করেন, এসএসসি-র তরফে আগেই মেধা-তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। তখনই বিচারপতি প্রশ্ন করেন, যদি মেধা-তালিকা প্রকাশ করা হয়ে থাকে, তা হলে সেটা আগেই আদালতে পেশ করা হল না কেন? তালিকা প্রকাশের বিষয়টি কেনই বা জানানো হয়নি মামলাকারীদের? এসএসসি-সচিবের উদ্দেশে বিচারপতি বলেন, ‘‘কালকের (মঙ্গলবার) মধ্যে হলফনামা দিয়ে আদালতে মেধা-তালিকা পেশ করুন। যদি দেখা যায় যে ওটা মেধা-তালিকা নয়, নিছকই প্যানেল, তা হলে আপনাকে সোজা জেলে পাঠাবো।’’

Advertisement

নবম-দশম শ্রেণির জন্য শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা হয়েছিল ২০১৬ সালে। চূড়ান্ত প্রার্থী-তালিকা প্রকাশিত হয় ২০১৮-য়। কিন্তু এর মধ্যে কোনও

মেধা-তালিকা প্রকাশ না-করেই শিক্ষক নিয়োগ শুরু হয়ে যায়। মেধা-তালিকা ছাড়াই কী ভাবে নিয়োগ শুরু হল, সেই প্রশ্ন তুলে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে হাইকোর্টে মামলা করেন মণিকা রায়-সহ কয়েক জন চাকরিপ্রার্থী। সেই মামলার শুনানিতে বিচারপতি মান্থা চার সপ্তাহের মধ্যে মেধা-তালিকা প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তাঁর নির্দেশ কার্যকর না-হওয়ায় গত বছর ২০ ডিসেম্বর ওই পরীক্ষার্থীরা আদালত অবমাননার অভিযোগ তুলে ফের মামলা করেন হাইকোর্টে। আদালত অবমাননার নোটিসও পাঠানো হয় এসএসসি-কর্তৃপক্ষের কাছে। গত ১৮ জানুয়ারি বিচারপতি মান্থার এজলাসে সেই মামলার শুনানিতে বিচারপতি নির্দেশ দেন, এসএসসি-র চেয়ারম্যান ও সচিবকে সোমবার আদালতে হাজির হয়ে কেন আদালতের নির্দেশ মানা হয়নি, তার কারণ দর্শাতে হবে।

তার পরেই মেধা-তালিকা নিয়ে মামলাটি এ দিন নাটকীয় মোড় নেয়। এসএসসি-কর্তাকে জেলে পোরার হুঁশিয়ারি দেন বিচারপতি। মামলাকারীদের আইনজীবী আশিসকুমার চৌধুরী বলেন, ‘‘কোন প্রার্থী কত নম্বর পেয়েছেন, মেধা-তালিকায় তার উল্লেখ থাকতে হবে। প্রার্থীর নম্বর উল্লেখ না-করলে সেটাকে কোনও ভাবেই মেধা-তালিকা বলা যায় না।’’ বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতি সহ-সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডলের অভিযোগ, এসএসসি-র সব ধরনের শিক্ষক নিয়োগেই স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে। সেই জন্যই আইনি জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে। যোগ্য প্রার্থীরা চাকরি পাচ্ছেন না। কোথাও কোথাও চাকরি পেতে দেরি হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন