RG Kar Financial Irregularities

আরজি করে বাইক পার্কিং থেকে তোলা টাকাও যেত সন্দীপ ঘোষের পকেটে! কোর্টে জানাল সিবিআই

আরজি করে আর্থিক দুর্নীতি মামলায় সন্দীপের সঙ্গেই গ্রেফতার করা হয়েছিল তাঁর নিরাপত্তারক্ষী আফসারকে। সিবিআই জানিয়েছে, সন্দীপ এবং আফসারের কাছে যেত বাইক পার্কিংয়ের টাকাও।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৬:০০
Share:

আরজি কর হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ। —ফাইল চিত্র।

আরজি কর হাসপাতালে বাইক পার্কিং থেকে তোলা টাকাও যেত প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ এবং তাঁর ঘনিষ্ঠদের পকেটে! আর্থিক দুর্নীতি মামলার শুনানিতে আদালতে এমনটাই জানিয়েছে সিবিআই। তাদের বক্তব্য, সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে বাইক পার্কিং থেকে টাকা তোলার কথা জানা গিয়েছে। সন্দীপের পাশাপাশি বাইক পার্কিংয়ের টাকা যেত এই মামলায় অপর ধৃত তথা সন্দীপের ঘনিষ্ঠ আফসার আলির কাছেও। আফসারকে বেআইনি ভাবে হাসপাতালে কাজের বরাত পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগও তুলেছে সিবিআই।

Advertisement

আরজি করে আর্থিক দুর্নীতি মামলায় সন্দীপের সঙ্গেই গ্রেফতার করা হয়েছিল তাঁর নিরাপত্তারক্ষী আফসারকে। বৃহস্পতিবার আলিপুরে বিশেষ সিবিআই আদালতে তাঁদের মামলার শুনানি ছিল। জামিনের আবেদন জানিয়েছিলেন সন্দীপ-ঘনিষ্ঠ আফসার। তাঁর আইনজীবী বিচারকের উদ্দেশে বলেন, ‘‘আমার মক্কেলের বিরুদ্ধে বাইক পার্কিং থেকে টাকা তোলার অভিযোগ। তা-ই যদি হয়, তা হলে সেই টাকা কোথায়? টাকা কি পাওয়া গিয়েছে? ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে কি পাওয়া গিয়েছে? যায়নি।’’

আফসারের আইনজীবী আরও জানান, তাঁর মক্কেলের বিরুদ্ধে জালিয়াতির ধারায় মামলা রয়েছে। কিন্তু নথিতে তেমন কিছু দেখা যাচ্ছে না। জেলে গিয়ে তাঁকে আর কোনও জেরা করাও হয়নি। তাঁর বিরুদ্ধে যে দু’টি সংস্থাকে সুযোগ পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ করেছে সিবিআই, তারও নথি মেলেনি, দাবি আইনজীবীর। সন্দীপের নিরাপত্তারক্ষী হিসাবে আফসারের নিয়োগ নিয়েও আদালতে প্রশ্ন উঠেছে। আফসারের আইনজীবী জানান, তাঁর মক্কেলকে স্বাস্থ্যভবন থেকে সহকারী নিরাপত্তারক্ষী হিসাবে নিয়োগ করা হয়েছিল। তিনি সন্দীপের ব্যক্তিগত রক্ষী নন। কাজের সূত্রে সন্দীপের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল মাত্র। কী ভাবে তিনি আর্থিক দিক থেকে লাভবান হয়েছিলেন, সিবিআইকে প্রমাণ করতে হবে বলেও কোর্টে দাবি করেছেন আফসারের আইনজীবী।

Advertisement

আদালতে সিবিআই জানিয়েছে, বাইক পার্কিং থেকে তোলা টাকা সরাসরি সন্দীপ এবং আফসারের কাছে যেত। এই সংক্রান্ত একাধিক সাক্ষীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সে কথা জানতে পেরেছেন তদন্তকারী আধিকারিকেরা। আরজি করের আর্থিক দুর্নীতিতে সন্দীপ-ঘনিষ্ঠ আফসারের ভূমিকা কী, তা চার্জশিটে ব্যাখ্যা করা আছে বলেও জানিয়েছে সিবিআই। তাদের বক্তব্য, নথি জাল করে হাসপাতালের বিভিন্ন কাজের বরাত পেয়েছে আফসারের বেনামী সংস্থা। একাধিক ষড়যন্ত্রেও সন্দীপের সঙ্গে তিনি হাত মিলিয়েছিলেন।

সিবিআই জানায়, হাসপাতালের ভিতরে ক্যাফে তৈরি থেকে শুরু করে উন্নয়নমূলক যাবতীয় কাজ করার কথা পূর্ত দফতরের। কিন্তু স্বাস্থ্যভবনকে না-জানিয়েই সেই কাজগুলির বরাত আফসারের সংস্থাকে পাইয়ে দেওয়া হয়েছে। আফসারের নিয়োগ প্রসঙ্গে সিবিআইয়ের তদন্তকারী অফিসার আদালতে জানান, আরজি কর হাসপাতাল থেকে তিন জন স্থায়ী কর্মী পদত্যাগ করেছিলেন। তার পর আফসার-সহ নতুন তিন জনের নিয়োগ স্থানীয় ভাবে করা হয়েছিল। এ বিষয়ে স্বাস্থ্যভবনকে চিঠি দিয়েছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। তার উত্তরে স্বাস্থ্যভবন থেকে জানানো হয়েছে, আফসার স্থায়ী কর্মী নন। তিনি চুক্তিভিত্তিক কর্মী ছিলেন। তাঁকে সরকারি কর্মচারী বলা যায় না।

উল্লেখ্য, গত ৯ অগস্ট আরজি কর হাসপাতালের চার তলার সেমিনার হল থেকে মহিলা চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার করা হয়েছিল। তাঁকে ধর্ষণ এবং খুন করা হয় বলে অভিযোগ। সেই ঘটনায় গ্রেফতার করা হয় এক সিভিক ভলান্টিয়ারকে। পরে ধর্ষণ-খুনের মামলায় সিবিআই সন্দীপকেও গ্রেফতার করে। তবে ধর্ষণ-খুনের ঘটনাটিতে ওই সিভিককে একমাত্র অভিযুক্ত হিসাবে চার্জশিটে চিহ্নিত করা হয়েছে। আরজি করের এই ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে প্রকাশ্যে আসে হাসপাতালের আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগও। সেই মামলাতেও গ্রেফতার করা হয় সন্দীপ এবং তাঁর ঘনিষ্ঠদের। এখনও তিনি জেল হেফাজতে রয়েছেন। বৃহস্পতিবার এই মামলায় ধৃত সন্দীপ-ঘনিষ্ঠ আর এক ব্যবসায়ী সুমন হাজরাও আদালতে জামিনের আবেদন করেছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement