সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
আক্ষরিক অর্থেই ‘ধনে-প্রাণে’ শেষ হওয়ার মতো অবস্থা।
ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি আশার কথা জানিয়েছিলেন, চার্জশিটে তাঁর বিরুদ্ধে ভারতীয় দন্ডবিধির ৪০৯ ধারা হয়তো দেবে না সিবিআই।
কিন্তু, শুক্রবার ভুবনেশ্বর আদালতে তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে চার্জশিটে ওই ধারাতেই অভিযোগ এনেছে সিবিআই। জনপ্রতিনিধি হিসেবে বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগ রয়েছে এই ধারায়। সঙ্গে আবার যোগ করা হয়েছে প্রতারণা ও দুর্নীতি দমন আইন।
আইনজীবীদের মতে, আইনের জোরালো ধারায় সুদীপকে এমন ভাবে বেঁধে ফেলা হয়েছে, জামিনের আশা খুবই কম। এতেই ভেঙে পড়েছেন সুদীপ। ভেঙে পড়েছেন তাঁর স্ত্রী তৃণমূল বিধায়ক নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
ভুবনেশ্বর থেকে ফোনে নয়না জানান, তিন বছর ধরেই সুদীপ প্যানক্রিয়াটাইটিসে আক্রান্ত। সঙ্গে হৃদ্যন্ত্রেও জটিল গোলযোগ ধরা পড়েছে। ‘‘চিকিৎসকেরা আশার কথা শোনাচ্ছেন না। অক্সিজেনের নল লাগিয়ে রেখেছে। ওজন কমেছে ১৮ কেজি। কী কঙ্কালসার চেহারা যে ওর হয়েছে!’’— ধরা গলায় বলেন নয়না।
আরও পড়ুন:মিটিংয়ে বিবাদ, কাগজপত্র, ব্যাগ ছোড়াছুড়ির জেরে অসুস্থ মেয়র হাসপাতালে
সোমবার ভুবনেশ্বর হাইকোর্টে সুদীপের জামিনের আবেদনের শুনানি হবে। নয়নার আশা ছিল জামিন পেয়ে যাবেন সুদীপ। তার পরে স্বামীকে ভুবনেশ্বর থেকে এনে কলকাতার কোন হাসপাতালে ভর্তি করাবেন, তা-ও ঠিক করে রেখেছিলেন। সিবিআইয়ের দেওয়া চার্জশিটের পরে সেই ছবিটা রাতারাতি বদলে গিয়েছে।
সুদীপ গ্রেফতার হওয়ার পরে ভুবনেশ্বরের একটি হোটেলে প্রথমে থাকছিলেন নয়না। এর পরে মাস দু’য়েক হল খরচ বাঁচাতে শহর-লাগোয়া জয়দেবনগরে একটি বাড়ি ভাড়া নিয়েছেন। প্রতি দিনই স্বামীর সঙ্গে দেখা করেন তিনি।
ভুবনেশ্বরের ওই দামি হাসপাতালের সমস্ত খরচ সুদীপ ও নয়নাকেই বহন করতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। নয়না বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত খরচের একটি অংশ দল বহন করেছে। বাকিটা আত্মীয়দের কাছ থেকে চেয়েচিন্তে চালিয়ে নিচ্ছি।’’ সুদীপের চিকিৎসায় ইতিমধ্যেই বেশ কয়েক লক্ষ টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে বলে তিনি জানান।
নয়না জানিয়েছেন, সোমবার চার্জশিটের প্রতিলিপি হাতে আসার পরের দিনই জামিনের জন্য সমস্ত শক্তি নিয়ে ঝাঁপাবেন আইনজীবীরা। সুদীপের শারীরিক অবস্থার কথা জানিয়েই জামিন চাওয়া হবে। ‘‘না হলে জানি না কী করব!’’— আরও এক বার ধরে এল নয়নার গলা।