সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া একটি ধর্ষণের ভিডিও। তার ভিত্তিতেই শীর্ষ আদালতের মামলা, এমনকী সিবিআই-তদন্তও।
তবে তদন্তই সার। ভিডিও-র ‘চরিত্র’দের খোঁজে গত এক বছরে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী চার রাজ্য তোলপাড় করেও লাভ হয়নি। সিবিআইয়ের গোয়েন্দা-দল ইতিমধ্যে বেশ ক’বার পশ্চিমবঙ্গ, অসম, ত্রিপুরা ও মেঘালয়ে এসেও ‘ক্লু’ পাননি। বাধ্য হয়ে ইন্টারপোল মারফত বাংলাদেশ পুলিশের সাহায্য চাওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ কেন? কারণ, ভিডিও-র কুশীলবদের সকলের মুখের ভাষা বাংলা। শুধু তা-ই নয়, সাড়ে আট মিনিটের ভিডিওটি খুঁটিয়ে দেখে সিবিআই-সূত্রের পর্যবেক্ষণ, নির্যাতিতা যুবতীর কথায় বাংলাদেশি টান রয়েছে। যার প্রেক্ষিতে গোয়েন্দাদের প্রাথমিক সন্দেহ, ঘটনাটি ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া কোনও এলাকার। ভিডিও-য় দেখা যাচ্ছে, মাঠের মধ্যে পাঁচ যুবক মেয়েটিকে ধর্ষণ করছে। তিনি প্রাণপণে চিৎকার করছেন। ছেলেগুলোর ভ্রূক্ষেপ নেই। অত্যাচার চালানোর ফাঁকে নিজেদের মধ্যে তারা চটুল ঠাট্টা-মস্করাও করছে!
এবং তারা এতটাই বেপরোয়া যে, দুষ্কর্মের ছবি তোলার পাশাপাশি ক্যামেরার সামনে নিজেদের মুখ স্পষ্ট দেখাতেও দ্বিধা করেনি। এ-ও শোনা গিয়েছে, এক ধর্ষক আর এক জনকে ডাকছে ‘স্বপন’ বলে।
সূত্র মানে এটুকুই। তবে এমন নাম তো বাঙালির ঘরে ঘরে! ফলে গোয়েন্দাদের কাজটা খড়ের গাদায় সূচ খোঁজার চেয়েও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাধ্য হয়ে পাঁচ অপরাধীর সন্ধান পেতে মাথাপিছু এক লাখ টাকা ইনাম ঘোষণা হয়েছে। ভিডিও-য় পাওয়া মুখগুলির ছবি দিয়ে নোটিস টাঙাতে বলা হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ, অসম, ত্রিপুরা, মেঘালয়ের থানায় থানায়। ছেলে পাঁচটির ছবি বাংলাদেশ পুলিশকে পাঠানো হয়েছে।
এ হেন ভিডিও গোয়েন্দাদের হাতে এল কী করে? সিবিআইয়ের খবর: গত বছর ফেব্রুয়ারিতে সুপ্রিম কোর্টের তদানীন্তন প্রধান বিচারপতি এইচএল দাত্তুকে সেটি পাঠিয়েছিলেন হায়দরাবাদের এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রধান সুনীতা কৃষ্ণন, একটা চিঠি সমেত। যার ভিত্তিতে সর্বোচ্চ আদালত স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করে। গত বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি সিবিআই’কে বলা হয় ঘটনার তদন্ত করতে। সুনীতার দাবি, এক ব্যক্তির কাছ থেকে ভিডি়ওটি পেয়ে তিনি প্রথমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে যোগাযোগ করেন। ‘‘মন্ত্রকের সহযোগিতা না-পেয়ে শেষমেষ দেশের প্রধান বিচারপতির দ্বারস্থ হই।’’— বলে জানান তিনি।
ভিডিওটি ইন্টারনেটে আপলোড করার জন্য প্রথমে বেঙ্গালুরুর এক যুবককে পাকড়াও করেছিল সিবিআই। তাঁকে জেরা করে অবশ্য আসল অপরাধীদের কোনও হদিস মেলেনি। এক তদন্তকারীর কথায়, ‘‘ছেলেটি ইন্টারনেট থেকে নিয়েই ভিডিওটি আপলোড করেছিল। এর বেশি কিছু নয়।’’
সিবিআইয়ের এক অফিসার জানাচ্ছেন, সাধারণত এই জাতীয় মামলায় এক জন অভিযোগকারিণী থাকেন, যাঁর সঙ্গে কথা বললে অপরাধীদের সম্পর্কে অনেক সূত্র পাওয়া যায়। কিন্তু এখানে সূত্র বলতে স্রেফ একটা ভিডিও। তা-ও তোলা হয়েছে খোলা মাঠে। আশপাশে কোনও বাড়ি-ঘর দেখা যাচ্ছে না। তাই বোঝার উপায় নেই, জায়গাটা ঠিক কোথায়। নির্যাতিতাকেও চিহ্নিত করা যায়নি। সুতরাং সিবিআই আপাতত অন্ধকারেই হাতড়ে বেড়াচ্ছে।