কোনও নিরপেক্ষ সংস্থাকে দিয়ে নারদ স্টিং অপারেশনের তদন্ত করাতে অসুবিধে কোথায়, ক’দিন আগে প্রশ্ন তুলেছিল কলকাতা হাইকোর্ট। তার আগে-পরেও সিবিআই-কে ডাকার আভাস ছিল হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণে। সিবিআই যে তদন্তভার পেতে পারে, শুক্রবার তা আরও স্পষ্ট হয়ে গেল।
এ দিন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি নিশীথা মাত্রে সিবিআইয়ের আইনজীবী মহম্মদ আসরাফ আলির কাছে জানতে চান, তাঁরা তদন্ত করতে পারবেন কি না। সিবিআইয়ের আইনজীবী জানান, আদালত নির্দেশ দিলে তাঁরা তদন্ত শুরু করবেন। পুলিশ কোনও ঘটনার প্রাথমিক তদন্ত শুরু করার আগে সিবিআইয়ের সেই তদন্তের এক্তিয়ার আছে কি না, আসরফের কাছে তা জানতে চান, বিচারপতি মাত্রে। আসরফ জানান, আইনি বাধা নেই। তাজ করিডর মামলায় নির্দিষ্ট নির্দেশ রয়েছে সুপ্রিম কোর্টের। সিবিআই কৌঁসুলিকে তদন্ত সংক্রান্ত ম্যানুয়ালের প্রতিলিপি তাঁর অফিসে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারপতি। তা এ দিনই পাঠানো হয়।
বিধানসভা ভোটের আগে ১৪ মার্চ নারদ নিউজের কর্ণধার ম্যাথু স্যামুয়েলের স্টিং অপারেশনের ভিডিও ফুটেজে দেখানো হয়, শাসক দলের বেশ কিছু নেতা-সাংসদ দেদার টাকা নিচ্ছেন। তার কয়েক দিনের মধ্যে এই ব্যাপারে তিনটি জনস্বার্থ মামলা হয় হাইকোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ম়ঞ্জুলা চেল্লুরের ডিভিশন বেঞ্চে। দু’টি মামলার আবেদনে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানানো হয়। তৃতীয় মামলার আবেদনকারী সরাসরি সিবিআই তদন্ত চান। তার ভিত্তিতেই বিচারপতি চেল্লুর সিবিআই-কে নারদ মামলায় যুক্ত করার নির্দেশ দেন।
স্টিং অপারেশনের ভিডিও ফুটেজ ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য হায়দরাবাদে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি চেল্লুর। কিন্তু ওই ফুটেজ খুলতে যে-দক্ষতা দরকার, তা হায়দরাবাদ ফরেন্সিক ল্যাবরেটরির না-থাকায় তাদেরই পরামর্শে পরে সেটি চণ্ডীগড়ে পাঠায় হাইকোর্ট। চণ্ডীগড়ও সব ফুটেজ খুলতে পারেনি। এ দিন ওই ফরেন্সিক ল্যাবরেটরির আইনজীবী আদালতকে জানান, যে-সব ফাইল খোলা যায়নি, আদালত নির্দেশ দিলে ফের সেগুলো খোলার চেষ্টা করা যেতে পারে।
মামলায় প্রশ্ন ওঠে ২০১৪ সালের ফুটেজ ২০১৬-য় বিধানসভা ভোটের আগে প্রকাশ্যে আনা হলো কেন। ম্যাথুর আইনজীবী অরুণাভ ঘোষ বলেন, স্টিং অপারেশন চালানোর সময় ম্যাথু যে সংবাদ সংস্থায় কাজ করতেন তার মালিকানা কে ডি সিংহ নামে এক তৃণমূল সাংসদের হাতে চলে যায়। ভিডিও ফুটেজে যাঁদের টাকা নিতে দেখা গিয়েছে, তাঁদের অনেকেই ওই দলের সাংসদ, মন্ত্রী বা বিধায়ক। তাই ফুটেজ সর্বসমক্ষে আসছিল না। কে ডি সিংহ বিধানসভা ভোটের ক’মাস আগে ফুটেজ ম্যাথুকে ফিরিয়ে দেন। বিচারপতি মাত্রে এবং ডিভিশন বেঞ্চের অন্য বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী জানান, এ দিন শুনানি শেষ হল। তবে রায় দান স্থগিত থাকছে।