আসডা’য় যোগ মদন-শতাব্দীর, বলছে সিবিআই

অনামী লগ্নি সংস্থা খুঁড়েও বেরোচ্ছে বড় নাম

সারদা বা রোজ ভ্যালির মতো নামডাক নেই তাদের। বস্তুত বহু লোকই তাদের নাম বড় একটা জানে না। কিন্তু সিবিআই বলছে, সারদা-রোজ ভ্যালির কায়দাতেই সাধারণ মানুষের কাছ থেকে প্রায় একশো কোটি টাকা তুলে ফেলেছে আসডা অ্যাগ্রো প্রজেক্ট লিমিটেড নামের এই সংস্থাটি। শুধু তা-ই নয়, নিজেদের সঙ্গে জড়িয়ে নিয়েছে বেশ কিছু ‘প্রভাবশালী’র নামও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৫ ০৩:২০
Share:

সারদা বা রোজ ভ্যালির মতো নামডাক নেই তাদের। বস্তুত বহু লোকই তাদের নাম বড় একটা জানে না। কিন্তু সিবিআই বলছে, সারদা-রোজ ভ্যালির কায়দাতেই সাধারণ মানুষের কাছ থেকে প্রায় একশো কোটি টাকা তুলে ফেলেছে আসডা অ্যাগ্রো প্রজেক্ট লিমিটেড নামের এই সংস্থাটি। শুধু তা-ই নয়, নিজেদের সঙ্গে জড়িয়ে নিয়েছে বেশ কিছু ‘প্রভাবশালী’র নামও।

Advertisement

সারদা-কাণ্ড ফাঁস হওয়ার পরেও আসডা’র কারবারে রাশ পড়েনি। বরং তা বেশ রমরম করেই চলছিল। শুক্রবার সংস্থার বিভিন্ন অফিস ও কর্তাদের বাড়ি মিলিয়ে আসডা’র মোট ১১টি ডেরায় সিবিআই হানা দিয়েছিল। তদন্তকারীদের দাবি, তল্লাশিতে উদ্ধার হওয়া কাগজপত্রে একাধিক রাজ্যের মন্ত্রী-সাংসদের নাম রয়েছে। সংস্থার ‘ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর’ হলেন তৃণমূলের এক অভিনেত্রী-সাংসদ। কোম্পানির ব্রোশিওরে রাজ্যের এক মন্ত্রীর ছবি রয়েছে।

সারদা কেলেঙ্কারি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের প্রেক্ষিতে ‘বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের’ রহস্য উন্মোচনের লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো এখন খতিয়ে দেখছে, বিভিন্ন অবৈধ অর্থলগ্নি সংস্থার পিছনে প্রভাবশালীদের কোনও ভূমিকা ছিল কি না। ইতিমধ্যে সারদা-মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র, শাসকদল তৃণমূলের সাসপেন্ড হওয়া সাংসদ কুণাল ঘোষ, সদ্য প্রাক্তন সাংসদ সৃঞ্জয় বসু, তৃণমূলের সহ-সভাপতি রজত মজুমদার (শেষের দু’জন আপাতত জামিনে মুক্ত)। জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে তৃণমূলের সাংসদ মুকুল রায়, মিঠুন চক্রবর্তী, অর্পিতা ঘোষ এবং দলের প্রাক্তন ছাত্রনেতা শঙ্কুদেব পণ্ডাকে। রাজ্যের আর এক মন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও মুখ্যমন্ত্রী-ঘনিষ্ঠ চিত্রশিল্পী শুভাপ্রসন্নকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিবিআই এবং কেন্দ্রীয় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। তৃণমূলের আয়-ব্যয়ের হিসেবও সিবিআই-তদন্তের আওতায়। ওই হিসেবের ব্যাখ্যা চেয়ে তদন্তকারীরা সম্প্রতি দলের প্রাক্তন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুলবাবুকে চিঠি দিয়েছেন।

Advertisement

পাশাপাশি রাজ্যের বৃহত্তম অর্থলগ্নি সংস্থা রোজ ভ্যালির সঙ্গেও শাসকদলের ‘ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের’ বিস্তর প্রমাণ মিলেছে বলে কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের দাবি। রোজ ভ্যালির সঙ্গে যুক্ত থাকা তৃণমূল সাংসদ তথা অভিনেতা তাপস পালের বাড়িতে ইতিমধ্যে সিবিআই তল্লাশি চালিয়েছে। সিবিআইয়ের দাবি: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে সারদা-কর্ণধার সুদীপ্ত সেন ও রোজ ভ্যালি-কর্তা গৌতম কুণ্ডুকে নিয়ে ডেলো পাহাড়ে বৈঠক করেছিলেন, তার আদালতগ্রাহ্য নথি মজুত রয়েছে।

এই পরিস্থিতিতেই সামনে এল আসডা। সিবিআই-সূত্রের খবর, মূলত উত্তরবঙ্গ ও হুগলি জেলা থেকে সংস্থাটি আমানত সংগ্রহ করেছে। বেনামে বিভিন্ন কোম্পানি মারফত বাজার থেকে তারা টাকা তুলেছে বলে অভিযোগ। এ দিন পানিহাটিতে সংস্থার সদর দফতর ছাড়াও মধ্যমগ্রাম, খড়দহ, বেলঘরিয়া ও বারাসতে তল্লাশি চলে। সংস্থার ডিরেক্টর ও কিছু পদস্থ কর্তার বাড়িও ছাড় পায়নি। আর ওই তল্লাশিতে উদ্ধার হওয়া নথিপত্রের সূত্রেই উঠে এসেছে তৃণমূলের অভিনেত্রী-সাংসদ শতাব্দী রায়ের নাম, যিনি রয়েছেন আসডা’র ‘ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর’ হিসেবে।

বক্তব্য জানার জন্য এ দিন শতাব্দীর সঙ্গে বার বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও সাড়া মেলেনি। সাংসদের ঘনিষ্ঠ মহল থেকে বলা হয়, তিনি ভিয়েতনাম গিয়েছেন। আসডা’র ব্রোশিওরে যে মন্ত্রীর ছবি, সেই মদন মিত্র এখন সারদা-কাণ্ডে গ্রেফতার হয়ে জেলে রয়েছেন। আসডা-প্রসঙ্গে মদনবাবুর কৌঁসুলি নিলাদ্রি ভট্টাচার্য এ দিন বলেন, “কেউ তো মন্ত্রীর ছবি ওখানে কেটেও লাগিয়ে দিতে পারে! আমি মনে করি, আমার মক্কেলের সঙ্গে সংস্থাটির কোনও যোগাযোগ নেই।”

শতাব্দী-মদনেই অবশ্য ব্যাপারটা শেষ হয়ে যাচ্ছে না। সিবিআই সূত্রের দাবি, রাজ্যের আর এক মন্ত্রী এবং অন্য এক সাংসদও আসডা-র সঙ্গে কোনও না কোনও ভাবে জড়িত। তৃণমূলের এই সমস্ত নেতা-মন্ত্রী-এমপি’কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে কি?

এক সিবিআই অফিসার বলেন, “ওঁঁরা কে কেমন ভাবে সংস্থাটির সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তার পূর্ণাঙ্গ নথি হাতে আসার পরেই এ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত হবে।” তৃণমূল নেতৃত্বের কী প্রতিক্রিয়া?

সারদার মতো আসডা’র সঙ্গেও দলের নেতা-মন্ত্রীদের নাম এ ভাবে জড়িয়ে যাওয়াটাকে তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য প্রকাশ্যে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন না। “জনপ্রতিনিধিরা মানুষের সঙ্গে মিশবেন, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এখন দেখছি যাঁদের সঙ্গে ওঁরা মিশবেন, তাঁদের ঠিকুজি-কুষ্ঠি জেনে রাখতে হবে!” এ দিন মন্তব্য করেছেন তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

আসডা’র উত্থানের পশ্চাৎপট কী?

তদন্তকারী-সূত্রে জানা যাচ্ছে, ২০১০-এ পানিহাটিতে সদর অফিস খাড়া করে আসডা কাজ শুরু করে। সে সময় কোম্পানির ডিরেক্টর ছিলেন দু’জন নবারুণ দত্ত ও শেখ আসগর। ২০১২-য় অলোক দাস নামে আর এক জন আসেন অতিরিক্ত ডিরেক্টর হয়ে। এই তিন জনের বাড়িতেই এ দিন সিবিআই তল্লাশি চালিয়েছে। একই সঙ্গে দেবাশিস দত্ত এবং জসমির হোসেন নামে সংস্থার দুই শীর্ষ কর্তার বাড়িতে তল্লাশি চলে। কোম্পানি নিবন্ধক (আরওসি) সূত্রের খবর: আসডা’র শেষ সাধারণ সভা হয়েছিল ২০১১-র ২৩ নভেম্বর। ওই বছরেরই মার্চে কোম্পানি নিবন্ধকের দফতরে আসডা শেষ বার তাঁদের ব্যালান্স শিট জমা দেয়। সিবিআই-কর্তারা জানিয়েছেন, গত ফেব্রুয়ারিতে আসডা’র কয়েক জনকে সিজিও কমপ্লেক্সে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। তার ভিত্তিতেই এ দিনের তল্লাশি।

সংস্থার কতৃর্পক্ষ কী বলছেন?

বক্তব্য জানার জন্য আসডা’র কোনও কর্তা-ব্যক্তিকে পাওয়া যায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন