CBI

নারদ-কাণ্ডে চার্জশিট পুজোর আগেই, নাম থাকার সম্ভাবনা ৩ তৃণমূল সাংসদের, আপাতত রেহাই মুকুলের

২০১৬-য় এ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক আগে নারদ নিউজের পক্ষে সংস্থার কর্ণধার ম্যাথু স্যামুয়েল একটি স্টিং অপারেশনের ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আনেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৯ ২২:০৫
Share:

২০১৭-র ১৬ এপ্রিল ১৩ জনের বিরুদ্ধে নারদ মামলার এফআইআর নথিভুক্ত করে সিবিআই। —ফাইল চিত্র।

নারদ মামলায় তৃণমূল কংগ্রেসের তিন সাংসদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার অনুমতি চেয়ে লোকসভার স্পিকারকে চিঠি দিল সিবিআই। সূত্রের খবর, সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহেই নারদ মামলার প্রথম চার্জশিট জমা দিতে পারে তারা। সেই চার্জশিটে ওই তিন সাংসদের নাম থাকবে বলেই তদন্তকারীদের সূত্রে খবর।

Advertisement

ওই সূত্রের ইঙ্গিত, প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ তথা বর্তমান বিজেপি নেতা মুকুল রায়ের নাম নারদ-কাণ্ডের এফআইআরে থাকলেও তদন্তে এখনও তাঁর বিরুদ্ধে কোনও তথ্য প্রমাণ মেলেনি। ফলে তাঁর নাম চার্জশিটে না থাকারই সম্ভাবনা রয়েছে। এক তদন্তকারী আধিকারিক বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘মুকুল রায়ের বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত তথ্যপ্রমাণ মেলেনি। ভিডিয়ো বা পারিপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণ থেকেও এমন কিছু পাওয়া যায়নি যাতে এখনই বলা যায় তিনি ম্যাথু স্যামুয়েলের কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলেন।”

২০১৬-য় এ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক আগে নারদ নিউজের পক্ষে সংস্থার কর্ণধার ম্যাথু স্যামুয়েল একটি স্টিং অপারেশনের ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আনেন। সেই ভিডিয়োতে দেখা যায়, রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের একাধিক সাংসদ এবং বিধায়ক ব্যাবসায়ী পরিচয় দেওয়া ম্যাথু স্যামুয়েলের কাছ থেকে বিভিন্ন অঙ্কের টাকা নগদে নিচ্ছেন। ওই ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসতেই রাজ্যের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি সিবিআই তদন্তের দাবি তোলে। কলকাতা হাইকোর্টে হওয়া একটি জনস্বার্থ মামলার প্রেক্ষিতে কলকাতা হাইকোর্ট তদন্তের নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় ওই তদন্তকারী সংস্থাকে। ২০১৭-র ১৬ এপ্রিল ১৩ জনের বিরুদ্ধে নারদ মামলার এফআইআর নথিভুক্ত করে সিবিআই। দুর্নীতি দমন আইনের ৭ এবং ১৩ (২) ধারায় মামলা দায়ের করে তারা।

Advertisement

আরও পড়ুন: বাড়ি গিয়েও দিলীপের দেখা পেলেন না দেবশ্রী, যোগদানের পথে কাঁটা যথেষ্টই, ইঙ্গিত স্পষ্ট

ওই ১৩ জনের মধ্যে নাম ছিল পাঁচ তৃণমূল সাংসদ— কাকলি ঘোষ দস্তিদার, সৌগত রায়, প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, অপরূপা পোদ্দার, সুলতান আহমেদ, কলকাতার প্রাক্তন মেয়র ও বিধায়ক শোভন চট্টোপাধ্যায়, রাজ্যের বর্তমান তিন মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী, ফিরহাদ হাকিম, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, আইপিএস সৈয়দ মহম্মদ হাসান মির্জা এবং মুকুল রায়, মদন মিত্র, ইকবাল আহমেদের। তবে সাংসদ সুলতান আহমেদের তদন্ত চলাকালীন মৃত্যু হওয়ায় এই মুহূর্তে এফআইআরে অভিযুক্তের সংখ্যা ১২।

আরও পড়ুন: ইডি মামলায় মেয়াদ বাড়ল চিদম্বরমের রক্ষাকবচের

সিবিআই সূত্রে খবর, চলতি সপ্তাহে লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লাকে তিন সাংসদ সৌগত রায়, প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কাকলি ঘোষ দস্তিদারের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার অনুমোদন চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তদন্তকারীদের ইঙ্গিত, স্পিকারের সবুজ সঙ্কেত পেলেই ওই তিন জনের নাম উল্লেখ করা হবে প্রথম চার্জশিটে। রাজ্যের দুই মন্ত্রীর নামও প্রথম চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত করতে চান তদম্তকারীরা, এমনটাই ওই সূত্রটি জানাচ্ছে। সে জন্য এ রাজ্যের বিধানসভার স্পিকারের অনুমোদন প্রয়োজন। সিবিআইয়ের দাবি, তারা ইতিমধ্যেই বিধানসভার স্পিকারকে এ বিষয়ে অনুমোদন চেয়ে চিঠি দিয়েছে। তবে, রাজ্য বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘‘আমি এ ধরনের কোনও চিঠি পাইনি।”

তদন্তকারীদের দাবি, সেপ্টেম্বরের শুরুতেই তাঁরা নারদ কাণ্ডে অভিযুক্ত নেতা-মন্ত্রী-সাংসদদের কণ্ঠস্বরের নমুনা পরীক্ষা করতে চান তাঁরা। সে কারণেই শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং অপরূপা পোদ্দারকে ইতিমধ্যেই তলব করা হয়েছে। আগামী শনি ও সোমবার তাঁদের জিজ্ঞসাবাদ করতে চান কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। বাকিদেরও কণ্ঠস্বরের নমুনা পরীক্ষা ও জেরা পর্ব সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই চুকিয়ে নিতে চান গোয়েন্দারা। তাঁরা আশা করছেন যে, সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই লোকসভার স্পিকারের অনুমোদন পাওয়া যাবে।

তবে সিবিআইয়ের ওই সূত্রটির জানাচ্ছে, আগামী মাসের চতুর্থ সপ্তাহ পর্যন্ত তারা অপেক্ষা করবে রাজ্য বিধানসভার স্পিকারের অনুমোদনের জন্য। স্পিকার যদি ওই সময়ের মধ্যে অনুমোদন না দেন, সে ক্ষেত্রে কী হবে? সিবিআইয়ের ওই সূত্রটি জানাচ্ছে, সে ক্ষেত্রে ওই তিন সাংসদ এবং এফআইআরে না থাকা অন্য দু’জনের নাম রাখার সম্ভাবনা রয়েছে চার্জশিটে। সেই দু’জন কারা, তা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি গোয়েন্দারা।

বুধবার ম্যাথু স্যামুয়েল এবং কে ডি সিংহকে জেরা করে আরও কিছু নতুন তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা। এক তদন্তকারী আধিকারিক ইঙ্গিত দেন, কেডি সিংহ এবং ম্যাথু স্যামুয়েলকেও ক্লিনচিট দেওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই এখন। ক্লিনচিট দেওয়া হচ্ছে না মুকুল রায়কেও। প্রথম চার্জশিট জমা দেওয়ার পরেও তদন্ত চলবে তাতে নাম না থাকা বাকিদের বিরুদ্ধেও।

বিভিন্ন দুর্নীতি মামলায় তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীদের ‘ফাঁসানো’ হচ্ছে বলে মঙ্গলবারও তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকেই এ সব করা হচ্ছে।

অন্য দিকে, সারদা এবং নারদ-কাণ্ডে অভিযুক্ত যাঁরা বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন, তাঁদের যেন ছেড়ে দেওয়া না-হয়— এই অনুরোধ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি দিয়েছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা কংগ্রেসের আব্দুল মান্নান। কিন্তু সেই চিঠির জবাব এখনও আসেনি। মান্নান বৃহস্পতিবার জানান, প্রয়োজনে তাঁরা আবার প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দেবেন। তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘যাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাঁরা জামিন পেয়ে যাচ্ছেন। আমাদের সন্দেহ হচ্ছে, বিজেপিতে যোগ দিলে ছাড়, আর না-দিলে গ্রেফতার হয়ে সহানুভূতির হাওয়া কুড়োনো— বিজেপি-তৃণমূলের মধ্যে এই বোঝাপড়ার খেলা চলছে না তো?’’ বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘‘সারদা এবং নারদ কেলেঙ্কারিতে যাঁরা যুক্ত, তাঁদের এক দিন না এক দিন জেলে যেতেই হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন