সুদীপ-তাপসকে নোটিস, প্রতিহিংসার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ডাক মমতার

নরেন্দ্র মোদী সরকারের ‘প্রতিহিংসার রাজনীতি’ নিয়ে সরব হয়েছিলেন গত কালের যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে। আজ দিল্লি ছাড়ার আগে এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ডাক দিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:৩৮
Share:

নরেন্দ্র মোদী সরকারের ‘প্রতিহিংসার রাজনীতি’ নিয়ে সরব হয়েছিলেন গত কালের যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে। আজ দিল্লি ছাড়ার আগে এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ডাক দিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

মমতা কাল যখন রাজধানীতে নোট-বাতিল নিয়ে খড়্গহস্ত, ঠিক সেই সময়েই লোকসভায় তৃণমূলের দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সাংসদ তাপল পালকে ই-মেল বার্তা পাঠিয়ে হাজিরার নোটিস দিয়েছে সিবিআই। রোজভ্যালি-কাণ্ডে এর আগেও দু’বার সুদীপবাবুকে নোটিস পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী এই সংস্থাটি। কিন্তু নতুন করে নোটিস পাঠানোর জন্য গত কালের বিকেলকে বেছে নেওয়াটাকে নেহাৎ কাকতালীয় বলে মনে করছেন না তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। এর মাধ্যমে খোদ মমতাকেই কড়া বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে মনে করছে দলের একটি বড় অংশ। তাঁদের মতে, বিরোধীরা আগামী বাজেট অধিবেশনেও সরকারকে চাপে ফেলার চেষ্টা চালাবে। তার আগেই তৃণমূল ও তাদের লোকসভার নেতাকে কোণঠাসা করে রাখতে চাইছে মোদী সরকার।
দিল্লি ছাড়ার আগে আজ বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলেন তৃণমূল নেত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘এটা নিছকই প্রতিহিংসার রাজনীতি। বিষয়গুলি মানুষের দুর্দশার সঙ্গে যুক্ত। আমরা এর বিরুদ্ধে লড়াই করব।’’

মোদী-বিরোধী রাজনীতিকে আরও বেশি করে ঐক্যবদ্ধ করতে তিনি যে আগামী দিনেও সচেষ্ট থাকবেন, দিল্লি ছাড়া আগে সে কথাও জানিয়েছেন মমতা। তবে আগামী রণনীতির কথা এখনই ভাঙতে চাইছেন না তিনি। রাহুল গাঁধীকে কাল এ বিষয়ে বিস্তারিত পরামর্শ এবং নির্দিষ্ট কিছু প্রস্তাব দিয়েছেন। বিরোধী দলগুলিকে এককাট্টা করে জানুয়ারি মাসে একটি বৈঠক করা তার অন্যতম। গত দেড় দিনে মমতা নিজেও লালুপ্রসাদ, কেজরীবাল, ওমর আবদুল্লা, এমনকী উদ্ধব ঠাকরের সঙ্গেও ফোনে কথা বলেছেন।

Advertisement

পাশাপাশি চলেছে সৌজন্যের রাজনীতিও! দু’দিনের ঝটিকা সফরের ফাঁকেই মমতা বিজেপির বর্ষীয়ান নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণীকে ফোন করে খোঁজ নিয়েছেন তাঁর স্বাস্থ্যের। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলিকে ফোন করে জানিয়েছেন জন্মদিনের শুভেচ্ছা। এই দু’জনের সঙ্গেই মমতার ব্যক্তিগত সম্পর্ক ভাল শুধু নয়, কিছু-কিছু বিষয়ে এঁরা দু’জনেই মোদীর সঙ্গে এক নৌকোর যাত্রী নন। এ বারের শীত অধিবেশনেই সংসদ অচল থাকা নিয়ে সরকারকে বিরোধীদের সঙ্গে এক কাঠগড়ায় তুলেছেন আডবাণী। জেটলি আবার সরকারে মোদীর সেনাপতি হয়েও প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার উল্টো পথে হেঁটে সাফ বলে দিয়েছিলেন, নোট-বাতিল নিয়ে মানুষের দুর্ভোগ ৫০ দিনে মেটার নয়। এঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখাকে তাই নিছক সৌজন্য নয়, সৌজন্যের রাজনীতি বলেই মনে করছেন অনেকে।

নোট-ভোগান্তি, ও টাকা তোলা নিয়ে বিধিনিষেধের প্রশ্নে এবার কী করবেন মমতা? এই প্রশ্নের জবাবেও এখনই হাতের তাস দেখাতে চাননি তৃণমূল নেত্রী। শুধু বলেছেন, ‘‘এখনও তো ৫০ দিন হতে আরও দু’দিন বাকি রয়েছে। দেখা যাক সরকার কী সিদ্ধান্ত নেয়। তার পরে আমরা যা বলার বলব।’’ বাতিল নোট নিয়ে কেন্দ্র আজ যে অর্ডিন্যান্স জারি করেছে সেটিকে ‘জোর করে চাপানো আইন’ আখ্যা দিলেও, এটির পুরো বয়ান না পড়ে সরাসরি কোনও মন্তব্যও করতে চাননি।

মমতা-রাহুলদের আক্রমণের জবাব দিতে প্রধানমন্ত্রী মোদী আজ আসরে নামান মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডুকে। মমতার সমালোচনা প্রসঙ্গে বেঙ্কাইয়া আজ ব্যঙ্গাত্মক ভাবে বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী আগে নিজের রাজ্যের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার সদিচ্ছা দেখান। তার পর না হয় দিল্লিতে এসে আমাদের উপদেশ দেবেন।’’ তৃণমূল সূত্রের খবর, মোদী-বিরোধিতায় ভিন্ রাজ্যে মমতার প্রচার বন্ধ হচ্ছে না মোটেই। আগামী জানুয়ারি মাসেই ভোট-মুখী পঞ্জাবের অমৃতসরে গিয়ে জনসভা করার পরিকল্পনা করছেন নেত্রী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন