রাজীবের নামে জারি ‘লুক আউট নোটিস’

সিবিআই সূত্রের দাবি, আইপিএস অফিসার রাজীবের বিরুদ্ধে সারদা মামলায় নথিপত্র নষ্টের অভিযোগ রয়েছে।

Advertisement

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৯ ০৪:৩০
Share:

—ফাইল চিত্র।

কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার অফিসার রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে ‘লুক আউট সার্কুলার’ বা এলওসি জারি করল সিবিআই। গত শুক্রবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীন অভিবাসন দফতর এই বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। এর ফলে দেশের কোনও বিমানবন্দর বা স্থলবন্দর দিয়ে বিদেশে পাড়ি দেওয়ার খবর পেলে তাঁকে আটক করে সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেবে অভিবাসন দফতর।

Advertisement

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের খবর, রাজীবের বিরুদ্ধে এই বিজ্ঞপ্তির মেয়াদ এক বছর। ২০২০-র ২৩ মে পর্যন্ত তা কার্যকর থাকবে। প্রয়োজনে তা ফের বাড়তে পারে। কলকাতার সিবিআইয়ের চার নম্বর আর্থিক অপরাধ দমন শাখার পুলিশ সুপারকে এলওসি সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছে অভিবাসন দফতর। যার অর্থ, আপাতত এক বছর রাজীব কুমার বিদেশ সফর করতে গেলেই বিমানবন্দর বা স্থলবন্দরে আটক হবেন। ভোটের আগে রাজীবকে পুলিশ কমিশনার পদ থেকে সরিয়ে সিআইডি’র এডিজি পদে বসিয়েছিলেন। কিন্তু নির্বাচন কমিশন তাঁকে সেখান থেকেও সরিয়ে দিল্লিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে বদলি করে। ফলে রাজীব এখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অফিসার। এর মধ্যেই সেই মন্ত্রকই তাঁর বিরুদ্ধে এলওসি’র বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে।

সিবিআই সূত্রের দাবি, আইপিএস অফিসার রাজীবের বিরুদ্ধে সারদা মামলায় নথিপত্র নষ্টের অভিযোগ রয়েছে। তিনি ও রাজ্য সরকার গঠিত বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট)-এর আরও চার-পাঁচ জন পুলিশ অফিসারকে টানা জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় সিবিআই। বস্তুত, সারদা তদন্তে রাজীবকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চেয়েছিল সিবিআই। কিন্তু তিনি

Advertisement

তাতে সাড়া দেননি। সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত সেই বিষয় গড়ালে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ সিবিআইয়ের শিলং দফতরে তাঁকে জেরায় হাজির হতে নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলির জবাব রাজীব এড়িয়ে গিয়েছেন বলে আদালতে জানায় সিবিআই। তার পরেই হেফাজতে নিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ জরুরি বলে আদালতে আবেদন করেছিল তদন্তকারী সংস্থা।

রাজীব সিবিআইয়ের আর্জির বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সারদা মামলায় অভিযুক্তদের কল ডেটা রেকর্ডস এবং দেবযানী মুখোপাধ্যায়ের ল্যাপটপ ফিরিয়ে দিয়ে আদতে রাজীব কুমার ‘নথি’ নষ্ট করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে মেনে নিয়েছে শীর্ষ আদালত। তার প্রেক্ষিতেই তাঁকে গ্রেফতার না-করার যে ‘রক্ষাকবচ’ শীর্ষ আদালত দিয়েছিল, তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। রাজীবের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলাটির অবশ্য এখনও নিষ্পত্তি হয়নি। জুলাইয়ে সেটির শুনানি হবে।

শীর্ষ আদালত ‘রক্ষাকবচ’ প্রত্যাহার করে নেওয়ায় নিম্ন আদালত থেকে আগাম জামিন নিতে তৎপর হয়েছেন কলকাতার প্রাক্তন কমিশনার। কিন্তু তা এখনও নিশ্চিত হয়নি। তাই তাঁকে সিবিআই যে কোনও সময় গ্রেফতার করতে পারে বলেও জল্পনা চলছে নানা মহলে। যদিও সিবিআইয়ের এক মুখপাত্র বলেন,‘‘সারদা তদন্তে যে কোনও সময় প্রয়োজনে আমরা রাজীব কুমারকে গ্রেফতার করতে পারব, এমন অধিকারটুকু পাওয়া দরকার ছিল। সর্বোচ্চ আদালতের রক্ষাকবচ সরে যাওয়ায় সেটা সম্ভব হয়েছে। এখন আদালতের প্রক্রিয়া মেনে যা করার করা হবে। সিবিআই তাড়াহুড়ো করবে না।’’ ওই মুখপাত্রের দাবি, ‘‘গরিব আমানতকারীদের টাকা প্রভাবশালী কয়েক জন আত্মসাৎ করেছেন। সিবিআইয়ের কাছে সেই প্রমাণ রয়েছে। সিটের সদস্যরা তাঁদের বাঁচাতে সক্রিয় ছিলেন কি না, সেটা সিবিআই দেখবে। কেউ ছাড় পাবেন না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন