আগামী সপ্তাহের মধ্যেই রোজ ভ্যালি কাণ্ডে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করতে পারে সিবিআই। সেই সঙ্গে সুদীপের জামিন ঠেকাতে তাঁর সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাক্ষাতকে হাতিয়ার করতে চাইছেন তদন্তকারী অফিসাররা।
সিবিআই সূত্রের বক্তব্য, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় যে যথেষ্ট প্রভাবশালী এবং ছাড়া পেলে তদন্ত ও সাক্ষ্য প্রভাবিত করতে পারেন, সেই তত্ত্ব খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর সঙ্গে গিয়ে দেখা করায় আরও জোরদার হয়েছে। আদালতে সুদীপের জামিনের আবেদন করা হলে সিবিআই যুক্তি দেবে, অভিযুক্ত সুদীপবাবুর সঙ্গে দেখা করতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী কলকাতা থেকে ভুবনেশ্বরে গিয়েছিলেন। তাতেই স্পষ্ট, সুদীপবাবুর প্রভাব কতখানি।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতের অনুমতি নিয়েই সুদীপের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সিবিআইয়ের এক কর্তা বলেন, ‘‘উনি তৃণমূল নেত্রী হিসেবে আদালতের অনুমতি নিয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নন। দলের নেত্রী হিসেবে কেউ তাঁর দলের নেতাকে দেখতে জেলে বা হাসপাতালে যেতেই পারেন। কিন্তু সেই নেতা বা নেত্রী যদি কোনও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হন, তা হলে পুলিশ-প্রশাসন থেকে জনমানসে বার্তা যায়, মুখ্যমন্ত্রী অভিযুক্তর পাশেই রয়েছেন।’’ সুদীপের জামিনের জন্য তাঁর অসুস্থতার যুক্তিকে ব্যবহার করা হবে বলে সিবিআই নিশ্চিত। পাল্টা হাতিয়ার হিসেবে প্রভাবশালী তত্ত্বকে ব্যবহার করতে চাইছে সিবিআই। সারদা-কাণ্ডেও অভিযুক্তদের আটকাতে এই প্রভাবশালী তত্ত্বকেই কাজে লাগিয়েছিলেন তদন্তকারী অফিসাররা। প্রভাবশালী তকমা ঝেড়ে ফেলতে মদন মিত্রকে মন্ত্রিত্ব ত্যাগ করতে হয়েছিল।
আরও পড়ুন:নারদে ঘুষ-চক্রই দেখছে সিবিআই
তৃণমূলের লোকসভার দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করা হয়েছিল ৩ জানুয়ারি। তাঁর বিরুদ্ধে অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র এবং প্রতারণার অভিযোগে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪০৯, ১২০বি ও ৪২০ ধারায় মামলা করা হয়েছে। মামলা হয়েছে চিট ফান্ড নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত আইনেও। এই ক্ষেত্রে ১২০ দিনের মধ্যে চার্জশিট না দেওয়া হলে সুদীপ জামিন পেয়ে যেতে পারেন। তাই দেরি না করে আগামী সপ্তাহের মধ্যেই চার্জশিট পেশ করতে চাইছেন তদন্তকারী অফিসাররা।
সিবিআই সূত্রের দাবি, রোজ ভ্যালির টাকায় ২০১২ সালের অক্টোবরে সুদীপ তাঁর স্ত্রী নয়নাকে নিয়ে সুইৎজারল্যান্ডের জুরিখ, লুসার্ন, ইতালির পিসা, রোম, ফ্লোরেন্স-সহ বিভিন্ন শহরে বেড়াতে গিয়েছিলেন। এ জন্য যে ২২ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছিল, তার ১৭ লক্ষ টাকাই রোজ ভ্যালির অ্যাকাউন্ট থেকে গিয়েছিল। সেই সংক্রান্ত নথি সিবিআইয়ের জিম্মাতেই রয়েছে।