সুরক্ষা বাড়াতে নজর-ক্যামেরা ট্রেনের দরজায়

অমৃতসর এক্সপ্রেসে ফৌজিদের জন্য সংরক্ষিত কামরায় ধর্ষণের ঘটনার পরে পালানোর সময় দুই জওয়ানের ছবি তুলে রেখেছিল মধুপুর স্টেশনের সিসিটিভি। সেই নজর-ক্যামেরার ছবি দেখেই ফেরার জওয়ানদের চিহ্নিত করেছিল দমদমের ধর্ষিত নাবালিকা।

Advertisement

অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০১৬ ০৩:০৭
Share:

অমৃতসর এক্সপ্রেসে ফৌজিদের জন্য সংরক্ষিত কামরায় ধর্ষণের ঘটনার পরে পালানোর সময় দুই জওয়ানের ছবি তুলে রেখেছিল মধুপুর স্টেশনের সিসিটিভি। সেই নজর-ক্যামেরার ছবি দেখেই ফেরার জওয়ানদের চিহ্নিত করেছিল দমদমের ধর্ষিত নাবালিকা।

Advertisement

এমন ধরনের দুষ্কর্মের মোকাবিলায় এ বার ট্রেনের কামরাতেও সিসিটিভি বসাতে শুরু করেছে রেল মন্ত্রক। ঠিক কামরার ভিতরে নয়, নজরদার ক্যামেরা রাখা হবে ট্রেনের দরজায়। কোন স্টেশনে কারা ট্রেনে উঠছে বা নামছে, তার খতিয়ান থাকবে সেই ক্যামেরার স্মৃতিতে। ‘রেল-টেল’ নেটওয়ার্কের সাহায্যে সেই ছবি সরাসরি রেলের কেন্দ্রীয় কন্ট্রোল রুমে পাঠানোর ব্যবস্থাও হচ্ছে। রেলের নিজস্ব হেল্পলাইন, অ্যাপ, আরপিএফের হেল্পলাইন তো আছেই। তার উপরে সুরক্ষার বাড়তি বন্দোবস্ত হিসেবে এই নজর-ক্যামেরা চালু করা হচ্ছে। শুধু দুষ্কৃতীদের গতিবিধি নয়, নিষেধ থাকা সত্ত্বেও ট্রেনের দরজায় দাঁড়িয়ে যাঁরা সিগারেটে সুখটান দিতে অভ্যস্ত, ওই ক্যামেরা তাঁদের উপরেও নজরদারি চালাবে। অর্থাৎ দুষ্কৃতী-দৌরাত্ম্য ছাড়াও ট্রেনে অগ্নি-সুরক্ষার কাজেও লাগবে রেলের নতুন এই উদ্যোগ।

রেলকর্তারা জানান, যাত্রী-নিরাপত্তা বাড়াতেই ট্রেনের কামরার দরজায় পরীক্ষামূলক ভাবে সিসিটিভি লাগানো হচ্ছে। তবে কামরার ভিতরে কোনও ভাবেই যাত্রীদের উপরে নজরদারি চালানো হবে না। তাই ক্যামেরা থাকছে শুধু ট্রেনের দরজা সংলগ্ন প্যাসেজে। এমন ভাবে সেই ক্যামেরা বসানো হচ্ছে, যাতে কোন স্টেশন থেকে কখন ক’জন ওঠানামা করছেন, তা পরিষ্কার বোঝা যায়।

Advertisement

পরীক্ষামূলক ভাবে ইতিমধ্যেই কয়েকটি ট্রেনের কামরার দরজায় সিসিটিভি লাগানো হয়েছে বলে জানাচ্ছে রেল। সেগুলির নিয়মিত পর্যবেক্ষণ, রক্ষণাবেক্ষণও চলছে। এর পরে সব ট্রেনে কী ভাবে ক্যামেরার ব্যবস্থা করা যায়, ফলাফল খতিয়ে দেখে সেই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে রেল মন্ত্রক। উত্তর রেলের শান-ই-পঞ্জাবের তিনটি কামরা, দক্ষিণ রেলের কেরল এক্সপ্রেস, মান্নাই এক্সপ্রেস ও রামেশ্বরম এক্সপ্রেসের একটি করে কামরায় সিসিটিভি বসানো হয়েছে। ক্যামেরা বাসানো হয়েছে পশ্চিম রেলের তিনটি লোকাল ট্রেনের (ইএমইউ) মহিলা কামরাতেও। রেলকর্তারা জানান, আগামী আর্থিক বছরের মধ্যে বিভিন্ন শাখার ট্রেনে আরও ৫০০ কামরায় সিসিটিভি বসানোর কাজ শেষ হবে।

চলন্ত ট্রেনে বারবার চুরি, ডাকাতি এবং ধর্ষণের মতো অপরাধের অভিযোগ ওঠায় বিব্রত হচ্ছিল রেল মন্ত্রক। বিশেষ করে মহিলা যাত্রীদের নিরাপত্তা বাড়ানোর ব্যাপারে চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছিল। রেলে অপরাধ বাড়ায় সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে রাজ্যগুলির সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনা করে রেল মন্ত্রক। কী ভাবে ট্রেনে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা যায়, সেই ব্যাপারে মত বিনিময় করেন রাজ্য পুলিশ (জিআরপি) এবং রেল পুলিশের কর্তারা। এক রেলকর্তার কথায়, দূরপাল্লার ট্রেনগুলি এক রাজ্য থেকে ছেড়ে দু’তিনটি রাজ্য পার করে গন্তব্যে পৌঁছয়। একটি রাজ্যে ট্রেনের মধ্যে কোনও অপরাধ সংঘটিত হলে অন্য রাজ্যের পুলিশের কাছে বিষয়টি অনেকটাই কঠিন হয়ে পড়ে। তাই অনেক সময়েই তথ্যপ্রমাণের অভাবে হাত ফস্কে বেরিয়ে যায় অপরাধীরা।

এ বছর রেল বাজেটে রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু নিজেই ট্রেনে সিসিটিভি বসানোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এত দিনে সেই কাজটাই শুরু করল রেল মন্ত্রক। রেল বোর্ডের এক কর্তা জানান, ট্রেনের দরজায় বসানো নজর-ক্যামেরার ফুটেজ এ বার থেকে তদন্তকারীদের সাহায্য করবে। সম্প্রতি ঠিক যে-ভাবে ধর্ষণে অভিযুক্তদের চিনিয়ে দিয়েছে মধুপুর স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে রাখা নজর-ক্যামেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন