বিওপি-র জমি নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য বিরোধ 

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁর চিঠিতে লিখেছেন বাংলাদেশ সীমান্তে২৮টি নতুন বিওপি তৈরি করার প্রস্তাব থাকলেও রাজ্য জমি জোগাড় করে দিচ্ছে না। তার ফলে চোরাচালান, অনুপ্রবেশ, সীমান্তের অবৈধকারবারে আরও কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা সম্ভব হচ্ছে না। পশ্চিমবঙ্গের বাংলাদেশ সীমান্তে বেড়া দেওয়ার কাজ এবং অন্যান্য পরিকাঠামো তৈরির বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর মাসিক ‘প্রগতি’ বৈঠকে প্রথম তোলেন। সে সময় নবান্ন সরাসরি জমিদাতাদের কাছ থেকে জমি কিনে নেওয়ার প্রস্তাব দেয়। সেই মতো ২০১৬-এর ২১ নভেম্বর রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিএসএফের জন্য জমি নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

Advertisement

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০১৮ ০৫:১৯
Share:

বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফের ২৮টি নতুন বর্ডার আউটপোস্ট (বিওপি) তৈরির জন্য জমি চেয়ে না মেলার অভিযোগ তুলল কেন্দ্র। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ এক চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ব্যক্তিগত ভাবে বিষয়টি দেখতেও বলেছেন। যদিও স্বরাষ্ট্র দফতরের বক্তব্য, বিএসএফের প্রয়োজনীয় জমি সরাসরি জমিদাতাদের থেকে কিনে নেওয়া হচ্ছে। কেন্দ্র সেই টাকা মেটায়নি। তার ফলেই জটিলতা তৈরি হয়েছে। তবে নাগরিক পঞ্জি, রোহিঙ্গা-সহ বিভিন্ন বিষয়ে কেন্দ্র-রাজ্য বিরোধ তুঙ্গে থাকার সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই চিঠি তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।

Advertisement

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁর চিঠিতে লিখেছেন বাংলাদেশ সীমান্তে২৮টি নতুন বিওপি তৈরি করার প্রস্তাব থাকলেও রাজ্য জমি জোগাড় করে দিচ্ছে না। তার ফলে চোরাচালান, অনুপ্রবেশ, সীমান্তের অবৈধকারবারে আরও কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা সম্ভব হচ্ছে না। পশ্চিমবঙ্গের বাংলাদেশ সীমান্তে বেড়া দেওয়ার কাজ এবং অন্যান্য পরিকাঠামো তৈরির বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর মাসিক ‘প্রগতি’ বৈঠকে প্রথম তোলেন। সে সময় নবান্ন সরাসরি জমিদাতাদের কাছ থেকে জমি কিনে নেওয়ার প্রস্তাব দেয়। সেই মতো ২০১৬-এর ২১ নভেম্বর রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিএসএফের জন্য জমি নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। উত্তর ২৪ পরগনা, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, মালদহ, দুই দিনাজপুর, জলপাইগুড়ি জেলায় ১৮৭ কিলোমিটার সীমান্তে বেড়া দেওয়ার জন্য ১১৪০ একর জমি কেনার কথা জানায় বিএসএফ। সেই মতো জেলাশাসকরা জমি কেনার বিজ্ঞাপনও দেয়। নবান্নের খবর, সেই জমি বিশেষ বিএসএফের হাতে তুলে দেওয়া যায়নি।

বেড়া দেওয়ার পাশাপাশি ২৮টি আউটপোস্ট তৈরির জমি নিয়ে এর মধ্যেই বিবাদ শুরু হয়। নবান্নের বক্তব্য, ২৮টি নয়, বিএসএফের ২৩টি বিওপি’র জমি কেনার প্রস্তাব ২০১৭-এর ১৪ সেপ্টেম্বর রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদিত হয়েছে। কিন্তু তার জন্য ১১৪ কোটি টাকা প্রয়োজন। সেই টাকা অগ্রিম না দিলে রাজ্যের টাকায় জমি কেনা সম্ভব নয়। ‘‘কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর চিঠির জবাবে সে কথাই দিল্লিকে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে’’—বলেন এক কর্তা।

Advertisement

বিএসএফ কর্তাদের একাংশের প্রশ্ন, প্রধানমন্ত্রী যে বিষয়ে বৈঠক করে রাজ্যকে অনুরোধ করেছেন, সেই প্রকল্পে দিল্লি রাজ্যকে টাকা দেবে না? বরং অগ্রিম টাকা পেলেও যে জমি মিলবে তার নিশ্চয়তা কোথায়? কেউ কেউ আবার একটি ‘এসক্রো’ অ্যাকাউন্টে কেন্দ্রের অগ্রিম জমা রাখার প্রস্তাব দিয়েছেন। নির্দিষ্ট প্রকল্পের জন্য পৃথক অ্যাকাউন্ট বা ‘এসক্রো’ অ্যাকাউন্ট তৈরি করা হয়। সেই টাকা ওই প্রকল্প ছাড়া অন্য কোনও কাজে ব্যবহার করা যায় না।

টানাপড়েন

• আউটপোস্ট হবে উত্তর ২৪ পরগনা, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, মালদহ, উত্তর দিনাজপুর, কোচবিহারে।

• ছ’টি জেলায় ২৩ বিওপি-র প্রস্তাব।

• সব মিলিয়ে বিওপি-র জমি লাগবে ৬৪.৯৫ একর।

• জমির দাম মেটাতে হবে ১১৪ কোটি।

• ১৮৭ কিমি সীমান্তে বেড়ার জন্য লাগবে আরও ১১৪০ একর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন