নেওটিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অশোক কোলাসকরের সঙ্গে অম্বুজা নেওটিয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হর্ষবর্ধন নেওটিয়া। বৃহস্পতিবার। —নিজস্ব চিত্র।
বিরোধ না-থাকলেও পদার্থবিজ্ঞানের উচ্চতর পাঠ নিতে গেলে মনপসন্দ সাহিত্য বা দর্শনের গভীর অধ্যয়নের সুযোগ এখন বিশেষ নেই। আবার রসায়ন বা হিসেবশাস্ত্রে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর শিক্ষা নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কেউ শারীরবিদ্যাতেও পারদর্শী হতে চাইলে তারও সুযোগ সীমিত। অথচ শুধু কলা, বিজ্ঞান বা বাণিজ্যের পড়ুয়ার তকমার বদলে অনেক তরুণ-তরুণীই এখন তিন বা ততোধিক শাখার বিষয় নিয়ে পড়তে বিশেষ আগ্রহী।
আর কেন্দ্রীয় সরকার এখন এই মিলিজুলি শিক্ষার উপরেই জোর দিচ্ছে। গুরুত্ব দিচ্ছে ‘ক্রেডিট ট্রান্সফার’ পদ্ধতির উপরে। আর এই পদ্ধতিতেই পঠনপাঠন শুরু করতে চলেছে দ্য নেওটিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। আগামী জুন-জুলাই নাগাদ ওই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু হবে। তার আগে, বৃহস্পতিবার এক সাংবাদিক বৈঠকে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের খুঁটিনাটি জানালেন কর্তৃপক্ষ। সেখানেই জানানো হয়েছে এই ক্রেডিট ট্রান্সফার পদ্ধতির কথা।
পদ্ধতিটা কী রকম?
নেওটিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অশোক কোলাসকর বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বললেন, ‘‘ধরা যাক, কেউ ইংরেজি নিয়ে পড়াশোনা করার জন্য ভর্তি হলেন। তিনি চাইলে ইংরেজির সঙ্গে সঙ্গে ফলিত অর্থনীতি বা অন্য কোনও বিষয়েও পড়াশোনা করতে পারবেন।’’ এবং দুই বিষয়ে তিনি যত নম্বর পাবেন, তার সবটাই উল্লেখ করা হবে ওই পড়ুয়ার মার্কশিটে। এই হল ‘চয়েস-বেস্ড ক্রেডিট ট্রান্সফার’ বা সংক্ষেপে ক্রেডিট ট্রান্সফার পদ্ধতি।
পঠনপাঠনের চিরাচরিত ব্যবস্থায় পড়ুয়া স্নাতক স্তরে কলা শাখায় ভর্তি হলে তাঁর বিজ্ঞান পড়ার সুযোগ থাকে না বা বিজ্ঞানে ভর্তি হলে কলা শাখার বিষয় তিনি পড়তে পারেন না। সেই গণ্ডি ভেঙে পছন্দের বিষয় পড়ার সুযোগ বাড়াতেই ক্রেডিট ট্রান্সফার পদ্ধতির উপরে জোর দিচ্ছে কেন্দ্র।
দেশের বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইতিমধ্যে ওই পদ্ধতি চালু করেছে। তবে পরিকাঠামোগত কারণে কলকাতার মতো প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়গুলির পক্ষে এখনই তা শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান সেখানকার উপাচার্য সুরঞ্জন দাস। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘অনেক আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়ই এই পদ্ধতি চালু করছে। এতে পড়ুয়াদের পছন্দের পরিসর ও সুযোগ বাড়ে। তবে এ ক্ষেত্রে লক্ষ রাখতে হবে, পড়ুয়া মূলত যে-বিষয়ে পড়াশোনার জন্য ভর্তি হয়েছে, তার ভিতটা যেন শক্ত ভাবে তৈরি হয়।’’
এই পদ্ধতির সাফল্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মানের উপরে নির্ভরশীল বলে মনে করেন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ার প্রফেসর স্বপন চক্রবর্তী। তাঁর কথায়, ‘‘পঠনপাঠনের মান যেন ভাল হয়। তা হলে এই পদ্ধতিতে উপকারই হবে ছাত্রছাত্রীদের। বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আদানপ্রদানেও সুবিধা হবে।’’
ক্রেডিট ট্রান্সফার পদ্ধতির পাশাপাশি সময়ের দাবিতে শিল্প ক্ষেত্রের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ যোগ রেখে চলতে চায় নেওটিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। সে-ভাবেই এগোনো হবে বলে জানান অম্বুজা নেওটিয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান, নেওটিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হর্ষবর্ধন নেওটিয়া।
১৭ মে দেশের ৩২টি শহরে নেওটিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য পরীক্ষা নেওয়া হবে বলে জানান উপাচার্য কোলাসকর। সবিস্তার তথ্য মিলবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট www.tnu.in-এ। প্রবেশিকা পরীক্ষার জন্য আলাদা প্রস্তুতির প্রয়োজন নেই বলে জানান উপাচার্য। তিনি বলেন, ‘‘পড়ুয়াদের ‘অ্যাপ্টিটিউড’, ভাব বিনিময়ের স্বাচ্ছন্দ্য, ব্যাখ্যা করার ক্ষমতা ইত্যাদি যাচাই করা হবে এই পরীক্ষায়। কোনও বিষয়ে এক জন পড়ুয়া কতটা দক্ষ, সেটা জানা মোটেই এই পরীক্ষার উদ্দেশ্য নয়।’’