ছবি: পিটিআই।
প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় শামিয়ানা ভেঙে পড়ার ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে রিপোর্ট চাইল কেন্দ্র। পাশাপাশি, রাজ্য পুলিশের বিরুদ্ধে নিরাপত্তায় গাফিলতির অভিযোগও তুলেছে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় সংস্থা। যদিও রাজ্য পুলিশের পক্ষ থেকে সেই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।
এ দিনের ঘটনার তদন্তে আজ, মঙ্গলবার মেদিনীপুরে আসছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দুই কর্তা। মন্ত্রকের ভিআইপি নিরাপত্তা বিষয়ক সচিব এস কে সিনহা এবং যুগ্ম-সচিব আরতি ভাটনগর সভাস্থল ঘুরে দেখার পাশাপাশি আয়োজকদের সঙ্গেও কথা বলবেন। পুলিশের শীর্ষ কর্তা-সহ জেলা প্রশাসনের কর্তাদের কাছেও জানতে চাইবেন, কেন এমন ঘটনা ঘটল। থাকতে বলা হয়েছে সংশ্লিষ্ট ডেকরেটর, পূর্ত দফতরের ইঞ্জিনিয়ার, অগ্নি নির্বাপণ আধিকারিকদেরও। গাফিলতির দায় কার, তা খতিয়ে দেখে পিএমও-কে রিপোর্ট দেবেন তাঁরা।
প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা স্পেশ্যাল প্রোটেকশন গ্রুপ (এসপিজি) এবং কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বাহিনীর শীর্ষ কর্তারা অবশ্য সোমবার সভাস্থল থেকেই রাজ্য পুলিশের ডিজি বীরেন্দ্রকে ফোন করে নিরাপত্তার ফাঁকফোকর নিয়ে অভিযোগ করেন বলে জানা গিয়েছে। এর আগে শান্তিনিকেতনে মোদীর মঞ্চে এক জন উঠে পড়ায় তোলপাড় হয়েছিল। মেদিনীপুরেও কী ভাবে এমনটা ঘটল তা নিয়ে তাঁরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন বলে নবান্ন সূত্রের খবর।
রাজ্য পুলিশের পাল্টা বক্তব্য, মাঠে যা লোক ধরে তার চেয়ে অনেক বেশি লোক ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ‘রাজনৈতিক’ কারণে যার নিয়ন্ত্রণ পুলিশের হাতে ছিল না। এমনকি, বিজেপির স্বেচ্ছাসেবকদেরও যথেষ্ট সংখ্যায় দেখা যায়নি।
রাজ্য পুলিশের আরও বক্তব্য, এ দিন সকাল থেকে মোহনপুর সেতুর কাছে রাস্তার উপর পর পর বাস দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল বিজেপি। ফলে খড়গপুরগামী রাস্তার তিনটি লেন বন্ধ হয়ে যায়। এ দিকে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় আদৌ মোদীর কপ্টার উড়তে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় দেখা দেয়।
প্রধানমন্ত্রী সড়ক পথে যেতে পারেন ভেবে পুলিশ তখন কলাইকুণ্ডা যাওয়ার রাস্তা পরিষ্কার করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। তা করার সময় বিজেপি সমর্থকরা পুলিশের উপর হামলা চালায়। আইজি বা পুলিশ সুপার তা সামলাতেই ব্যস্ত ছিলেন।
মোদী তাঁর নিরাপত্তা অফিসারের কাছে স্থানীয় পুলিশের ভূমিকা সম্পর্কে জানতে চান বলে খবর। কেন্দ্রীয় সংস্থা গুলির অভিযোগ, সে সময় পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়াকে বার বার ফোন করলেও কোনও জবাব মেলেনি। সভাস্থলের দায়িত্বে কোন অফিসার আছেন তা নিয়েও ধন্দ তৈরি হয় বলে অভিযোগ করেছেন তাঁরা।
প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তায় থাকা এক অফিসার জানান, শামিয়ানা ভাঙা়র প্রায় আধ ঘণ্টা পর এসপি ঘটনাস্থলে পৌঁছান। সভার দায়িত্বে থাকা আইপিএস অফিসার শ্রীহরি পাণ্ডেকে খুঁজে পেতে আরও কিছু সময় পেরিয়ে যায়। তাঁরা এসপিজি-কে জানান, বিভিন্ন স্থানে বিজেপি সমর্থকরা পুলিশকে আক্রমণ করেছে। তাঁরা সেটা সামলাতে ব্যস্ত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর সফরের দায়িত্বপ্রাপ্ত রাজ্য পুলিশের আইজি রাজীব মিশ্রও ঘটনাস্থলে ছিলেন না। কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা সংস্থাগুলির দাবি, প্রধানমন্ত্রীর সভায় মঞ্চের দায়িত্ব এসপিজি’র হলেও সভাস্থল, রাস্তা, গাড়ি চলাচলের দায়িত্ব রাজ্য পুলিশের। কোনও ঘটনা ঘটলে উদ্ধারকাজের ভারও পুলিশের। এসপিজি’র অভিযোগ, এ দিন উদ্ধারকাজ তদারকিতে পুলিশের তৎপরতা দেখা যায়নি। বাধ্য হয়ে এসপিজি জওয়ানরা ছুটে যান। বেশ কিছুক্ষণ প্রধানমন্ত্রীর সভার একাংশে বিদ্যুৎ সংযোগও ছিল না।
যদিও রাজীব মিশ্র বলেন, ‘‘আমাদের যা দায়িত্ব ছিল তা নিষ্ঠা সহকারে পালন করা হয়েছে।’’ কিন্তু তাঁকে বা এসপি-কে তো শামিয়ানা ভাঙার সময় দেখা যায়নি? আইজি বলেন, ‘‘সফরের সম্পূর্ণ দায়িত্ব আমার উপরে ছিল। আইনশৃঙ্খলা বা অন্য কোনও বিপদ ঠেকানোর কাজও ছিল। আমরা দায়িত্ব পালন করেছি।’’