মুকুলের জন্য কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা

সূত্রের খবর, মুকুলবাবুকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ওয়াই-প্লাস ক্যাটিগরির নিরাপত্তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সে সম্পর্কিত চিঠিও তাঁর কাছে পৌঁছেছে। সব মিলিয়ে ১২ জন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান তাঁর নিরাপত্তার জন্য সর্বক্ষণ মোতায়েন থাকবেন।

Advertisement

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়

মুম্বই শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:৩২
Share:

মুকুল রায়।

কেন্দ্রীয় বাহিনী আপৎকালীন পরিস্থিতিতে ব্যবহারের জন্য। সাধারণ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য নয়। এই যুক্তি দেখিয়ে দার্জিলিং থেকে সিআরপি প্রত্যাহার করে নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। সেই কেন্দ্রীয় সরকারই তৃণমূল-ত্যাগী মুকুল রায়ের নিরাপত্তার জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যা শুনে ক্ষিপ্ত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নবান্নের প্রশ্ন, তা হলে কি রাজ্যের চেয়েও ব্যক্তি-নিরাপত্তা বড়? এর পিছনে রাজনৈতিক চক্রান্ত রয়েছে বলেই মনে করছে রাজ্য।

Advertisement

সূত্রের খবর, মুকুলবাবুকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ওয়াই-প্লাস ক্যাটিগরির নিরাপত্তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সে সম্পর্কিত চিঠিও তাঁর কাছে পৌঁছেছে। সব মিলিয়ে ১২ জন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান তাঁর নিরাপত্তার জন্য সর্বক্ষণ মোতায়েন থাকবেন। তবে ঠিক কোন বাহিনী থেকে এই জওয়ানরা আসবেন, তা এখনও স্পষ্ট নয়। সিআইএসএফ বা আইটিবিপি থেকে মুকুলবাবুর জন্য বাহিনী পাঠানো হতে পারে।

এ প্রসঙ্গে মুকুলবাবু বলেন, ‘‘তৃণমূল ছাড়ার আগেই রাজ্যের নিরাপত্তা ছেড়ে দিয়েছিলাম। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে নিরাপত্তার আবেদন জানিয়েছিলাম। তা মঞ্জুর হয়েছে।’’

Advertisement

কেন মুকুলকে নিরাপত্তা দিচ্ছে কেন্দ্র? বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয় বলেন, ‘‘মাসখানেক আগেও মুকুলের জন্য রাজ্য সরকারের জেড ক্যাটিগরির নিরাপত্তা ছিল। মন্ত্রক কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে রিপোর্ট চেয়েছিল। সেই রিপোর্ট আসার পরেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’

তবে মুকুলকে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা দেওয়া নিয়ে মন্ত্রকের অন্দরেও কিঞ্চিৎ শোরগোল হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় বাহিনী দেওয়ার সুপারিশ জমা পড়ার পর নর্থ ব্লক সিআরপি-কে নিরাপত্তার জন্য নির্দেশ দেয়। পাহাড়ে সিআরপিই মোতায়েন ছিল। যাদের মূলত আইন-শৃঙ্খলা দেখার জন্য চেয়েছিল রাজ্য। কিন্তু সিআরপির তরফে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে জানানো হয়, ব্যক্তিগত নিরাপত্তায় ইতিমধ্যেই তাদেরর বহু জওয়ান মোতায়েন হয়েছে। উত্তরপ্রদেশ, অসম, উত্তরাখণ্ড, মায় পশ্চিমবঙ্গেরও নেতাদের তালিকা দিয়ে সিআরপি জানিয়ে দেয়, তাদের পক্ষে ব্যক্তি-নিরাপত্তায় আরও বাহিনী ব্যবহার মুশকিল হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তাই অন্য ব্যবস্থা করুক কেন্দ্র। তার পরেই অপর সিআইএসএফ বা আইটিবিপিকে দায়িত্ব নিতে বলা হয়েছে।

যা শুনে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, ‘‘রাহুল সিংহ, রূপা গঙ্গোপাধ্যায়, জর্জ বেকারের মতো বিজেপি নেতারা কোনও নির্বাচনে লড়ে জিতে আসেননি। অথচ তাঁরা নাকি জাতীয় স্তরের গুরুত্বপূর্ণ নেতা হয়ে গিয়েছেন! তাই এঁদের কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে। সেই তালিকায় যুক্ত হলেন মুকুল রায়। আর পাহাড়ের শান্তি বজায় রাখার সময়ে কেন্দ্রীয় সরকার বাহিনীর অপব্যবহার হচ্ছে বলে জানাচ্ছে। কেন্দ্রীয় বাহিনী কি তা হলে কেন্দ্রীয় শাসক দলের নেতা-নিরাপত্তা বাহিনী হয়ে গেল?’’

বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের অবশ্য বক্তব্য, ‘‘আমাদের রাজ্যের যা পরিস্থিতি, তাতে বিরোধীদের নিরাপত্তা বিপন্ন। আমিও আক্রান্ত হয়েছি। বিরোধীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলেই মুকুলবাবুকে নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে। তবে তিনি তা চেয়েছেন, নাকি কেন্দ্রই দিয়েছে, তা আমি জানি না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন