গণিতই এখন ধ্যানজ্ঞান ‘বদলে যাওয়া’ রাজীবের

সিআইডি সূত্র বলছে, দৈনন্দিন তদন্ত এখন আর খুব বেশি দেখাশোনা করেন না রাজীব। শুধু গুরুত্বপূর্ণ মামলা নিয়েই আলোচনা করেন। তা-ও খুব কম সময়ের জন্য। বাকি সময় ব্যস্ত থাকেন অঙ্ক নিয়ে।

Advertisement

শুভাশিস ঘটক

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৯ ০২:৪৫
Share:

রাজীব কুমার

রাজ্য পুলিশের দুঁদে গোয়েন্দা প্রধান এখন অঙ্কে বুঁদ।

Advertisement

ভবানী ভবনের পাঁচ তলায় এডিজি সিআইডি-র চেম্বার এখন কার্যত ক্লাস-রুম। ঘরে মধ্যেই সাদা বোর্ডে অঙ্ক কষা চলছে। সিআইডির অন্দরমহলের খবর, অফিসে অধিকাংশ সময়ই গণিত চর্চায় ডুবে থাকেন রাজীব কুমার।

সারদা মামলায় সুপ্রিম কোর্ট রক্ষাকবচ তুলে নেওয়ার পরে গত সেপ্টেম্বরে রাজীবের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিল সিবিআই। তার পর বেশ কিছু দিন কোনও খোঁজ ছিল না তাঁর। ৯ সেপ্টেম্বর শেষ এসেছিলেন ভবানী ভবনে। অন্তরালে থেকেই আগাম জামিনের আবেদন করেন। গত ১ অক্টোবর তাঁর জামিন মঞ্জুর করে হাইকোর্ট। ৩ তারিখ প্রথম প্রকাশ্যে দেখা যায় তাঁকে। আলিপুর আদালতে এসে জামিন নেন তিনি। তার পর ক’দিন বাড়িতেই ছিলেন। কাজে যোগ দেন পুজোর ছুটির পরে।

Advertisement

কিন্তু তার পরেই কেমন যেন বদলে গিয়েছেন ‘কাজ পাগল’ সিআইডি কর্তা। রাজ্য পুলিশের এক কর্তার কথায়, ‘‘রাজীব কুমার আগে সকাল ১০টায় অফিসে আসতেন। বেরোতে বেরোতে কোনও কোনও দিন রাত একটাও হয়ে যেত। কিন্তু এখন আর তেমন লম্বা সময় অফিসে থাকেন না। কত ক্ষণ থাকবেন, সেটা তাঁর অঙ্ক চর্চার উপরেই নির্ভর করে।’’

সিআইডি সূত্র বলছে, দৈনন্দিন তদন্ত এখন আর খুব বেশি দেখাশোনা করেন না রাজীব। শুধু গুরুত্বপূর্ণ মামলা নিয়েই আলোচনা করেন। তা-ও খুব কম সময়ের জন্য। বাকি সময় ব্যস্ত থাকেন অঙ্ক নিয়ে। তাঁর ঘরে আসেন গণিত শিক্ষকেরা, বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের ছাত্রেরা। সিআইডির এক কর্তার কথায়, ‘‘স্যর অঙ্ক নিয়ে পিএইচডি করছেন। বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে পেপার জমা দেবেন বলে শুনেছি।’’

আদতে উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা রাজীব রুরকি থেকে কম্পিউটর সায়েন্সে বি-টেক। ১৯৮৯ সালে আইপিএস হন। সারদা কাণ্ডের পরে গঠিত বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট)-এর শীর্ষস্থানীয় তদন্তকারী ছিলেন রাজীব। কিন্তু সিবিআইয়ের অভিযোগ, তিনিই সারদার তথ্যপ্রমাণ লোপাটের মূল চক্রী। এ নিয়ে প্রায় এক বছর ধরে আইনি লড়াই চালাচ্ছেন রাজীব।

সেই মামলাই রাজীবের দৈনন্দিন জীবনে বড়সড় প্রভাব ফেলেছে বলে জানাচ্ছেন তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল। এক আইপিএস অফিসারের কথায়, ‘‘প্রায় গোটা সেপ্টেম্বর মাস রাজীব অন্তরালে থাকার সময় ওঁর স্ত্রী মানসিক ভাবে খুব ভেঙে পড়েছিলেন। এখনও পুরোপুরি স্বাভাবিক হননি। তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরার ওটাও একটা কারণ। স্ত্রীর কাছে থাকা।’’ পাশাপাশি, তদন্তের কাজেও রাজীব আর নিজেকে খুব একটা জড়ান না বলে সিআইডি সূত্রের খবর।

এক পুলিশ কর্তা জানাচ্ছেন, কলকাতা পুলিশ কমিশনার বা সিআইডির ডিআইজি (অপারেশন) থাকাকালীন বড় ঘটনার তদন্তে রাতের পর রাত জাগতেন রাজীব। বড় বড় অপরাধের কিনারা করে টুপিতে যোগ করেছিলেন একের পর এক সাফল্যের পালক। কিন্তু এখন রাজ্য গোয়েন্দা দফতরের সমস্ত কাজ সামলাচ্ছেন মূলত আইজি-১ অজয়প্রসাদ, আইজি-২ বিশাল গর্গ, ডিআইজি সিআইডি প্রণবকুমার ও ডিআইজি (স্পেশাল) মিতেশ জৈন। গুরুত্বপূর্ণ মামলার তদন্তের অগ্রগতির ফাইল ‘স্যর’কে পাঠানো হয় ঠিকই। কিন্তু অধিকাংশ ফাইলই তিনি শুধু চোখ বুলিয়ে ছেড়ে দেন। খুব গুরুত্বপূর্ণ হলে ঘণ্টাখানেক আলোচনা করেন। এর বেশি কিছু নয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন