চম্প্রমারি হুমকি দিচ্ছেন, ডিএম দ্বারস্থ নবান্নের

চন্দন-কাণ্ড প্রকাশ্যে আসার আগেই নানা বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন কালচিনির তৃণমূল বিধায়ক উইলসন চম্প্রমারি। আলিপুরদুয়ারের জেলাশাসককে কটূক্তি ও হুমকির অভিযোগ তার অন্যতম। জেলাশাসক অ্যালিস ভাজ মঙ্গলবার নবান্নে রিপোর্ট পাঠিয়ে অভিযোগ করেছেন, তাঁর প্রশাসনের বিরুদ্ধে ওই বিধায়ক প্রকাশ্যে হুমকি দিচ্ছেন, উস্কানিমূলক কথা বলছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০১৫ ০৩:১৭
Share:

চন্দন-কাণ্ড প্রকাশ্যে আসার আগেই নানা বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন কালচিনির তৃণমূল বিধায়ক উইলসন চম্প্রমারি। আলিপুরদুয়ারের জেলাশাসককে কটূক্তি ও হুমকির অভিযোগ তার অন্যতম। জেলাশাসক অ্যালিস ভাজ মঙ্গলবার নবান্নে রিপোর্ট পাঠিয়ে অভিযোগ করেছেন, তাঁর প্রশাসনের বিরুদ্ধে ওই বিধায়ক প্রকাশ্যে হুমকি দিচ্ছেন, উস্কানিমূলক কথা বলছেন।

Advertisement

মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্রকে লেখা জেলাশাসকের ওই রিপোর্টের প্রেক্ষিতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, স্বরাষ্ট্রসচিবকে তা খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। নবান্নের খবর, শাসক দলের বিধায়ক যে-ভাবে এক জন মহিলা জেলাশাসক এবং অতিরিক্ত জেলাশাসককে প্রকাশ্যে ‘দেখে নেওয়া’র হুমকি দিয়েছেন, তা ভাল ভাবে নেননি রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা। নবান্নের এক কর্তা বলেন, ‘‘ডিএমের রিপোর্টে সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত বিধায়কের দেওয়া হুমকির সত্যতা মেনে নেওয়া হয়েছে। সরকার প্রয়োজন হলে ব্যবস্থা নেবে।’’

কী সেই ব্যবস্থা? নবান্ন সূত্রের খবর, সরকারি আধিকারিকদের হুমকি, কাজে বাধা দিলে ফৌজদারি দণ্ডবিধিতে গৃহীত ব্যবস্থা সম্পর্কে নির্দিষ্ট ভাবে বলা আছে। বিধায়কের বিরুদ্ধে এফআইআর পর্যন্ত করা যেতে পারে। ইতিমধ্যেই জেলা পুলিশ নবান্নকে জানিয়েছে, উইলসনের নামে জামিন-অযোগ্য ধারায় বেশ কিছু ফৌজদারি মামলা আছে। এ ক্ষেত্রে জেলাশাসকের রিপোর্ট খতিয়ে দেখার পরেই সরকার সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানিয়েছেন নবান্নের ওই কর্তা।

Advertisement

১১ জুন আলিপুরদুয়ার জেলার কালচিনি ব্লকের জয়গাঁ গ্রাম পঞ্চায়েতের একটি ময়দানে উচ্ছেদের প্রতিবাদে কর্মিসভা করেন চম্প্রমারি। সেখানেই তিনি ডিএম-সহ জেলা প্রশাসনের কর্তাদের গালি ও হুমকি দেন বলে অভিযোগ। যদিও অভিযোগ পুরোপুরি ভিত্তিহীন বলে জানান চম্প্রমারি। তাঁর দাবি, ‘‘আমাদের দলনেত্রী জবরদস্তি উচ্ছেদ পছন্দ করেন না। সেই জন্য প্রতিবাদ করেছি। কোনও রকম গালি বা হুমকি দিইনি।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘অনেক পুরানো ব্যাপার। যা-ই হোক, ব্যাপারটা মিটে গিয়েছে। এখন পুরানো ঘটনা টেনে বাজার গরমের চেষ্টা করছেন বিরোধীরা।’’

প্রশাসনিক সূত্রের খবর, সম্প্রতি জয়গাঁ এলাকায় গোপীমোহন ময়দানে পাঁচিল দিয়ে সরকারি জায়গা দখল রুখতে অভিযানের সিদ্ধান্ত নেয় আলিপুরদুয়ার জেলা প্রশাসন। সেই অনুযায়ী অভিযান হলে পুলিশের উপস্থিতিতে পাঁচিলের কিছুটা ভেঙে দেওয়া হয়। তাতে আপত্তি জানান এলাকার তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা। ওই এলাকা থেকে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সমর্থনে নির্দল হিসেবে জিতেছিলেন চম্প্রমারি। পরে তৃণমূলে যোগ দিয়ে জেডিএ-র চেয়ারম্যান হন তিনি। পদাধিকারবলে জয়গাঁ এলাকায় কোনও দখলদার উচ্ছেদ অভিযানের সিদ্ধান্ত হলে তাঁর জানার কথা। উচ্ছেদের পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে সেই যুক্তি তুলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং ডিএম, এডিএম-সহ প্রশাসনের কর্তাদের হুমকি দেন বলে অভিযোগ।

জেলাশাসক তাঁর রিপোর্টে ওই কর্মিসভার ভিডিও ফুটেজের কথা উল্লেখ করেছেন। সেই ফুটেজে বিধায়ক যে-সব কথা বলেছেন, তা নবান্নকে লিখেও জানিয়েছেন তিনি। তবে বিধায়ক সরাসরি তাঁকে ফোন করে হুমকি বা নোংরা কথা বলেছিলেন কি না, রিপোর্টে তা স্পষ্ট করা হয়নি। শুধু সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত চম্প্রমারির হুমকির যে ভিত্তি আছে, তা প্রশাসনের নজরে এনে দিয়েছেন তিনি। ওই রিপোর্ট নিয়ে মুখ খুলতে চাননি জেলাশাসক।

রাজ্য প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তা জানান, জেলাশাসক তাঁর কাজ করেছেন। সরকার তার কাজ করবে। জেলাশাসক ও অতিরিক্ত জেলাশাসককে নিরাপত্তা দেওয়া প্রশাসনের দায়িত্ব। সরকারি কর্মীদের হুমকি দিয়ে কারওই রেহাই পাওয়া উচিত নয়। তবে বিধায়কের নামে সরকার কোনও অভিযোগ দায়ের করবে কি না, বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সেটা স্পষ্ট করেননি ওই কর্তা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন