সেদিনের সেই ঘাতক গাড়ি।
বছর ঘুরতে চললেও বিচার শুরু হল না রেড রোডে সেনা খুনে অভিযুক্তদের। পুলিশ সূত্রের খবর, বিচার শুরু তো দূর অস্ত্, কলকাতার বিচার ভবনের দু’নম্বর ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে মামলাটি চার্জ গঠনের জন্য ঝুলে রয়েছে। এই মামলার পরবর্তী শুনানি ফেব্রুয়ারি মাসে।
ওই দিনও চার্জ গঠন হবে কি না, তা নিশ্চিত নয়।
গত ১৩ জানুয়ারি রেড রোডে প্রজাতন্ত্র দিবসের মহড়া চলার সময়ে পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে বায়ুসেনার কর্পোরাল অভিমন্যু গৌড়কে গাড়ি চাপা দিয়ে মারার অভিযোগ ওঠে প্রাক্তন বিধায়ক মহম্মদ সোহরাবের ছেলে সাম্বিয়া সোহরাবের বিরুদ্ধে। সেই ঘটনায় সাম্বিয়া ছাড়াও তাঁর বাবা এবং শাহনাওয়াজ খান (শানু), নুর আলমের (জনি) নামেও অভিযোগ ওঠে। সাম্বিয়া ছাড়া বাকি সকলেই জামিনে মুক্ত।
লালবাজার জানায়, সেনাবাহিনীর অভিযোগের ভিত্তিতে খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। ঘটনার পরে সাম্বিয়া এবং তাঁর সঙ্গে গাড়িতে থাকা দুই বন্ধু পালিয়ে গিয়েছিলেন। ঘটনার চার দিনের মাথায় কড়েয়া এলাকা থেকে সাম্বিয়াকে পাকড়াও করা হয়। ঝাড়খণ্ড থেকে ধরা হয় শানু ও জনিকে। পুলিশের একাংশই বলছেন, প্রভাবশালী ব্যবসায়ী মহম্মদ সোহরাবকে গ্রেফতার করতে পারেননি কলকাতা পুলিশের ‘বিশেষ তদন্তকারী দল’। তদন্তকারীদের নাকের ডগা দিয়ে তিনি আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন। ঘটনার ৫৮ দিন পরে গত বছর মার্চ মাসে আদালতে মোট সাড়ে তিনশো পাতার চার্জশিট এবং ৮২ জন সাক্ষীর বয়ান জমা দেওয়া হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, চার্জশিটে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ (খুন), ১২০বি (অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র) এবং ২০১ ধারায় (প্রমাণ লোপাট) অভিযোগ আনা হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। তাঁর বাবা তৃণমূল নেতা মহম্মদ সোহরাবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, আশ্রয় দেওয়া এবং প্রমাণ লোপাটের অভিযোগ আনা হয়েছে। একই অভিযোগ আনা হয়েছে সাম্বিয়ার দুই সঙ্গী শাহনাওয়াজ খান (শানু), নুর আলমের (জনি) বিরুদ্ধেও। তার পর থেকে মামলায় একাধিক শুনানি হলেও চার্জ গঠন হয়নি।
রেড রোড-কাণ্ডের মতো এত গুরুত্বপূর্ণ মামলার চার্জ গঠন হচ্ছে না কেন, সে প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। তাঁরা বলছেন, সম্প্রতি এক মহিলা বিচারককে উত্যক্ত করার ঘটনায় কয়েক মাসের মধ্যে সাজা ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। ব্রেবোর্ন রোডে ফুটপাথবাসী কিশোরীকে ধর্ষণ ও খুনের মামলায় তিন মাসের মধ্যে বিচার শুরু হয়েছে। অথচ এই মামলার ক্ষেত্রে চার্জ গঠনটুকুই হল না!
পুলিশের অভিযোগ, অভিযুক্তেরা তাঁদের আইনজীবী মারফত চার্জ গঠনের আগে আদালতে নানা আবেদন জমা দিচ্ছেন। কেউ আবেদন জানিয়ে বলেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশ চার্জশিট দিতে পারে না। আদালত সেই আবেদনের আগে শুনানি করুক। কেউ আবার আবেদন করেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে যে যে ধারায় মামলা হচ্ছে, সেই সব ক’টি ধারা খাটে না। এমন নিত্য আবেদনের শুনানি করতে গিয়েই চার্জ গঠনের শুনানি পিছিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন তদন্তকারী অফিসারেরা। সরকারি আইনজীবী তমাল মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পরবর্তী শুনানির দিন ফেব্রুয়ারি মাসে। সেই সময়ে চার্জ গঠনের দিন স্থির করার জন্য আদালতে আবেদন জানানো হবে।’’ অভিযুক্তদের আইনজীবী অশোক বক্সীর বক্তব্য, পুলিশ মামলার কিছু নথি এখনও দেয়নি। সেই সব নথি না পেলে চার্জ গঠন সম্ভব নয়। লালবাজার অবশ্য অশোকবাবুর দাবি মানতে চায়নি।