ছবি আঁকড়ে আজও পথ চেয়ে ছন্দার মা

পাঁচ বছর পরে তাই আজও তিনি মেয়ের ফিরে আসার স্বপ্ন দেখেন। মেয়ের ছবি বুকে জড়িয়ে ধরে বসে থাকেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা।

Advertisement

দেবাশিস দাশ

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৯ ০২:২৫
Share:

অপেক্ষা: মেয়ের ছবি হাতে জয়ারানি গায়েন। নিজস্ব চিত্র

সব একই রকম আছে। তিনতলা বাড়িটার বিশাল ড্রয়িং রুমে দেওয়াল জোড়া তাঁর এভারেস্ট জয়ের ছবি। সকালে জগিং করার পরে ক্লান্ত হয়ে যে চেয়ারে গা এলিয়ে দিতেন, সেই চেয়ার। বেডরুমের শোকেসে সাজানো বিভিন্ন ধরনের মেডেলের পাশে বাঁধানো শংসাপত্র—সবই। শুধু তিনিই নেই। ২০১৩-র এভারেস্টজয়ী ছন্দা গায়েন।

Advertisement

২০১৪ সালের এই মে মাসেই কাঞ্চনজঙ্ঘা অভিযানে গিয়ে যিনি চিরতরে হারিয়ে গিয়েছিলেন। যাঁর দেহ আজ পর্যন্ত উদ্ধার করা যায়নি। পাঁচ বছর ধরে হাওড়ার কোনা বাগপাড়ার বেনারস রোডের পাশে তিনতলা বাড়িটায় ‘পর্বতকন্যা’ মেয়ের অপেক্ষায় আজও বৃদ্ধা মা জয়ারানি গায়েন। আজও তিনি মনে করেন, তাঁর মেয়ে জীবিত। তাঁকে নেপালে পাহাড়ের কোথাও একটা আটকে রাখা হয়েছে। ঠিক মতো না খোঁজার জন্য ওঁকে পাওয়া যায়নি।

পাঁচ বছর পরে তাই আজও তিনি মেয়ের ফিরে আসার স্বপ্ন দেখেন। মেয়ের ছবি বুকে জড়িয়ে ধরে বসে থাকেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। স্বগতোক্তির মতো বলেন, ‘‘তাসি শেরপা সব জানে। মেয়ে সহজে হারার পাত্রী নয়। ও লড়তে জানে।’’ এই কাঞ্চনজঙ্ঘা অভিযানে গিয়ে ফের দু’জন পর্বতারোহীর মৃত্যু হয়েছে, জানতেন না জয়ারানিদেবী। শোনার পরে তিনি বলেন, ‘‘আসলে পাহাড়টা ওদের কাছে নেশার মতো। বিপদ হতে পারে জেনেও ছুটে যায়। এই নেশা ছাড়তে পারেনি বলে মেয়েটাকে কম অত্যাচার সহ্য করতে হয়নি। মেয়ের বিবাহ বিচ্ছেদও হয়েছিল।’’

Advertisement

কাঞ্চনজঙ্ঘা অভিযানে গিয়ে হাওড়ার বাসিন্দা এভারেস্টজয়ী কুন্তল কাঁড়ার, সোনারপুরের বাসিন্দা বিপ্লব বৈদ্যের মৃত্যুর খবর টিভিতে আগেই পেয়েছিলেন ছন্দার দাদা জ্যোতির্ময় গায়েন। তিনি বলেন, ‘‘ছন্দার ঘটনার পরে খোঁজ নিয়ে দেখেছি যাঁর টাকা আছে, সে পাহাড়ে বিপদে পড়লে সহজে সাহায্য পায়। টাকা ছড়ালে উদ্ধারকাজ দ্রুত হয়। আমাদের ছেলেমেয়েরা যে ভাবে টাকা জোগাড় করে নিয়ে যায় তাতে ঝুঁকি থেকেই যায়।’’

টাকা খরচ করলে কি তা হলে ছন্দাকে বাঁচানো যেত? বোনের কথা উঠতেই কিছুটা উদাস হয়ে যান জ্যোতির্ময়। তিনি বলেন, ‘‘ঠিক মতো তল্লাশি অভিযানই তো হল না। হলে হয়ত ওকে পাওয়া যেত।’’

পাঁচ বছর আগে ছন্দা গায়েনের কাঞ্চনজঙ্ঘায় নিখোঁজ হওয়ার খবর কার্যত টলিয়ে দিয়েছিল রাজ্য প্রশাসনকে। তাঁর বাড়িতে এসেছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ রাজ্যের তাবড় মন্ত্রী ও বিশিষ্ট মানুষেরা। মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে কাঞ্চনজঙ্ঘার বুকে তল্লাশি অভিযানও চালানো হয়েছিল। কিন্তু বারবার প্রতিকূল আবহাওয়ার জন্য অভিযান ব্যর্থ হয়।

ছন্দাকে না পাওয়া গেলেও রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে পরিবারের এক জনকে চাকরির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী নিজের দফতরে ডেকে কথা বলেছিলেন জয়ারানিদেবীর সঙ্গে। সে কথা মনে করে বৃহস্পতিবার

জয়ারানি দেবী বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী আমাদের সব রকমই সাহায্যই করতে চেয়েছিলেন। তবে আমরা কিছুই নিইনি। যেখানে মেয়েকেই পেলাম না। ও সব নিয়ে আর কী হবে?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন