শ্রীতমা রায়
একা ডেঙ্গিই কাঁপাচ্ছিল কলকাতা থেকে মফস্সল। এ বার তার দোসর সোয়াইন ফ্লু-ও কাঁপন ধরাচ্ছে! এবং বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণ, ডেঙ্গির মতো সোয়াইন ফ্লু-র দাপটও বাড়ছে অসতর্কতা-অবহেলার জন্যই।
গত সাত দিনে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে ডেঙ্গিতে (ডেথ সার্টিফিকেট অনুযায়ী)। ডেঙ্গি নিয়ে স্বাস্থ্য দফতরের দুশ্চিন্তার মধ্যেই বুধবার পার্ক সার্কাসের একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা যায় শ্রীতমা রায় নামে বাঁকুড়ার কোতলপুরের সাড়ে ছ’বছরের একটি শিশু। এই নিয়ে চলতি মরসুমে রাজ্যে সোয়াইন ফ্লু-তে দু’জনের মৃত্যু হল।
কয়েক সপ্তাহ আগে সোয়াইন ফ্লু-তে আক্রান্ত কাকদ্বীপের এক মহিলার মৃত্যু হয় আলিপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। সচেতনতার অভাবেই বিপদ বাড়ছে বলে জানাচ্ছে বিশেষজ্ঞ শিবির। হাসপাতাল সূত্রের খবর, ১২ সেপ্টেম্বর জ্বর, সর্দি ও শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছয় শ্রীতমা। তাকে জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়ার পরেই প্রাথমিক পর্বের পরীক্ষা করে চিকিৎসকেরা জানান, তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাই ভেন্টিলেশনে দিতে হবে। ভর্তির ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই শারীরিক পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়া যায়। জানা যায়, সে সোয়াইন ফ্লু-তে আক্রান্ত হয়েছে।
শ্রীতমার পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, ৪ সেপ্টেম্বর সে জ্বরে পড়ে। সর্দি-কাশির সমস্যাও ছিল। স্থানীয় চিকিৎসক ওষুধ দেন। দিন আষ্টেক আগে শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়ায় তাকে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়। হাসপাতালের এক চিকিৎসক জানান, শ্রীতমাকে অনেক দেরিতে ভর্তি করানো হয়েছে। প্রথম থেকেই পরীক্ষা করিয়ে সোয়াইন ফ্লু ধরা পড়লে বিপদ এড়ানো যেত। সোয়াইন ফ্লু-তে আক্রান্ত আরও দু’টি শিশু ওই হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। তারাও কলকাতার বাইরে থেকে এসেছে।
চিকিৎসকেরা জানান, জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সর্দি-কাশি কিংবা শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ দেখা দেওয়া সত্ত্বেও অনেক সময় অবহেলা করা হচ্ছে। ফলে বিপদ বাড়ছে। ডেঙ্গি মশাবাহিত রোগ। আর সোয়াইন ফ্লু সংক্রমণের মূল মাধ্যম শুয়োর। তাই এ ক্ষেত্রেও বিশেষ সতর্কতা জরুরি।
কাবু হয়নি ডেঙ্গিও। জেলা প্রশাসনের তৎপরতার মধ্যেই ডেঙ্গি ও অন্য জ্বরের প্রকোপ চলছে দেগঙ্গায়। আক্রান্ত হয়েছেন অনেকেই। ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে বারাসত জেলা হাসপাতালে আইসিইউ-এ ভর্তি হয়েছেন তৃণমূলের দেগঙ্গা ব্লক সভাপতি মফিদুল হক সাহাজি (মিন্টু)। চার দিন জ্বরের পরে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। জ্বর না-কমায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। রক্তপরীক্ষায় ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে। হাসপাতালের সুপার সুব্রত মণ্ডল জানান, তাঁর প্লেটলেট বা অণুচক্রিকা ২২ হাজারে নেমে গিয়েছিল। ডেঙ্গি ও জ্বরের প্রকোপ শুরু হয়েছে দেগঙ্গার ১৩টি অঞ্চলে। দেগঙ্গা ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে জ্বরে আক্রান্তের ভিড় বাড়ছে। তাঁদের রক্তপরীক্ষার সঙ্গে সঙ্গে ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। দেগঙ্গার বিডিও অনিন্দ্য ভট্টাচার্য জানান, প্রতিটি বুথে ১০ জনের কমিটি গড়া হয়েছে। কোথায় কী ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, তার দেখাশোনা করছে ওই সব কমিটিই। মশা মারার স্প্রে ছড়ানোর পাশাপাশি ধোঁয়া দেওয়ার কাজও চলছে।