Calcutta High Court

শুধু মা-বাবা কেন, দাদু-ঠাকুমার কাছেও থাকুক বাচ্চারা, রূপকথা শুনুক! আট বছরের মেয়ের কথা শুনে বলল কলকাতা হাই কোর্ট

আট বছরের শিশুকন্যাটি দিন সাতেক বাবার কাছে থাকতে পারবে কি না, সেই সংক্রান্ত একটি মামলার বিচারে বসে এ কথাই বললেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্য।

Advertisement

ভাস্কর মান্না

শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০২৫ ২০:০১
Share:

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

কেন শুধু মা-বাবার কাছেই থাকবে বাচ্চারা? দাদু-ঠাকুমার সঙ্গেও তো ওদের থাকতে ইচ্ছে করতে পারে। নাতিনাতনিদেরও ইচ্ছে হতে পারে দাদু-ঠাকুমার সঙ্গে সময় কাটাতে। দাদু-ঠাকুমার সঙ্গে নাতিনাতনিদের সম্পর্ক বেশ মজবুত হয়। তাঁরা তাদের রূপকথার গল্প শোনাতে পারেন। এতে দু’পক্ষই আনন্দ পায়। শিশুর বেড়ে ওঠাও সুন্দর হয়। একটি আট বছরের শিশুকন্যার মনের কথা শুনে এ কথাই বলল কলকাতা হাই কোর্ট।

Advertisement

ওই শিশুকন্যা দিন সাতেক বাবার কাছে থাকতে পারবে কি না, সেই সংক্রান্ত একটি মামলার বিচারে বসে বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের পর্যবেক্ষণ, ‘‘দাদু-ঠাকুমারা নিজেদের জীবনের গল্প নাতিনাতনিদের সঙ্গে ভাগ করে নেন। ওদের রূপকথার দেশের গল্প শোনান। এগুলি একটা শিশুর বেড়ে ওঠার জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ এবং মূল্যবান। এটা অন্তর থেকে আসে। দাদু-ঠাকুমার সঙ্গে সুসম্পর্ক শিশুমনে সব সময় ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। এটা বাবা-মায়েদের মাথায় রাখা উচিত।’’

মেয়েকে কয়েক দিন নিজের কাছে রাখতে চেয়ে আলিপুর আদালতে আবেদন করেছিলেন তার বাবা। মেয়েটির বাবা-মা আলাদা থাকেন। তাঁরা দু’জনেই চিকিৎসক। দু’জনে আলাদা থাকার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর মেয়েটি তার মায়ের কাছেই থাকে। আদালতের নির্দেশমতো মেয়ের সঙ্গে সপ্তাহে তিন দিন ভিডিয়ো কনফারেন্সে কথা বলার সুযোগ পান বাবা। সপ্তাহে এক দিন মেয়ের সঙ্গে দেখাও করতে পারেন তিনি। এখন গরমের ছুটি পড়ায় বাবা চেয়েছিলেন মেয়েকে ১৫ দিন নিজের কাছে রাখতে। চলতি মাসের ১৫-৩০ তারিখ পর্যন্ত মেয়ে যাতে তাঁর কাছে থাকতে পারে, সেই মর্মে আদালতে আবেদন করেছিলেন বাবা। আপত্তি করেছিলেন মেয়েটির মা। যদিও আলিপুরের অতিরিক্ত জেলা বিচারক জানিয়ে দেন, ২২-২৮ মে পর্যন্ত মেয়েটি তার বাবার সঙ্গে থাকতে পারে। নিম্ন আদালতের এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করেই মেয়েটির মা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন।

Advertisement

গত শুক্রবার ওই মামলার শুনানি হয় হাই কোর্টে। আদালতে মেয়েটির বাবার আইনজীবী কল্লোল বসু জানান, মেয়েটির যত দিন তার বাবার সঙ্গে থাকার কথা, তত দিন তাদের সঙ্গে দাদু-ঠাকুমাও থাকবেন। ফলে কোনও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। এর পরেই দাদু-ঠাকুমার সঙ্গে নাতিনাতনিদের ইতিবাচক সম্পর্কের গুরুত্ব বোঝান বিচারপতি।

এর আগে আলিপুর আদালতের বিচারক মেয়েটির সঙ্গে দীর্ঘ ক্ষণ কথা বলেছিলেন আলাদা করে। তার ইচ্ছার কথা শুনেছিলেন। তার প্রেক্ষিতে পরে হাই কোর্টও জানায়, শিশুকন্যাটি বুদ্ধিমতি। এর আগেও সে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে বাবার সঙ্গে তিন দিন থেকেছিল। বিচারপতি এ-ও জানতে পেরেছেন, মেয়েটির তার বাবার সঙ্গে ১৫ দিন থাকতে কোনও অসুবিধা নেই। তবে মা থাকলে সে আরও বেশি খুশি হবে। এই অবস্থায় আদালত মনে করছে, মাকে ছেড়ে ১৫ দিন বাবার কাছে মেয়েকে না রাখাই ভাল। তাই মেয়েকে দিন সাতেক নিজের কাছে রাখতে পারবেন বাবা।

আদালতের পর্যবেক্ষণ, প্রত্যেক শিশুরই তার বাবার সঙ্গে সময় কাটানোর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। সেটি তার বিকাশের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। এতে মানসিক ভাবে উপকৃত হয় শিশু। সেই কারণেই মেয়েটিকে বাবার সঙ্গে সাত দিন কাটানোর অনুমতি দিয়েছে আদালত। তবে যখনই মেয়েটি তার মায়ের সঙ্গে কথা বলতে চাইবে, কথা বলতে দিতে হবে। এর মধ্যে মেয়েকে কলকাতার বাইরে নিয়ে যেতে পারবেন না বাবা। শিশুর সঙ্গে কথা বলে আদালত মনে করছে, বাবা-মাকে ভীষণই ভালবাসে মেয়েটি। সে চায়, তাঁরা একসঙ্গে থাকুন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement