চুপড়িঝাড়ার পরিচয় এখন ‘জামাই গ্রাম’

এক সময় চুপড়ি ভরা মাছ মিলত। তা থেকেই বোধহয় গ্রামের নাম হয়েছিল চুপড়িঝাড়া। এখন গ্রাম ভরা জামাই। চুপড়িঝাড়ার বদলে তাই ‘জামাই গ্রাম’ নামে চিনছে লোকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কুলতলি শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০১৫ ০১:৩৩
Share:

এক সময় চুপড়ি ভরা মাছ মিলত। তা থেকেই বোধহয় গ্রামের নাম হয়েছিল চুপড়িঝাড়া। এখন গ্রাম ভরা জামাই। চুপড়িঝাড়ার বদলে তাই ‘জামাই গ্রাম’ নামে চিনছে লোকে।

Advertisement

সুন্দরবনে ঠাকুরান ও সোনাটিকারি নদীর কোল ঘেঁষা এই গ্রামে শ’চারেক পরিবারের মধ্যে প্রায় একশো পরিবার জামাইদের। চুপড়িঝাড়া পঞ্চায়েতের সদস্য সনৎ বৈদ্য বলেন, “গ্রামে জামাই বসতির চল পুরনো। কিন্তু গত কুড়ি বছরে সেই সংখ্যা এতটাই বেড়েছে যে, আশপাশের লোক মজা করে জামাই গ্রাম বলে ডাকছে।”

বছর পঞ্চাশেক আগে পুরুলিয়া থেকে জামাই হয়ে গ্রামে এসেছিলেন শান্তারাম ও ভরত মুদির বাবা। এঁরা আবার গ্রামেরই দুই মেয়েকে বিয়ে করে ‘জামাই আবাদ’ বাড়িয়েছেন। প্রায় সমকাল আগে গিলারছাট গ্রাম থেকে জামাই হয়ে এসেছিলেন হাসেম বৈদ্য। বাঘের কবলে হাসেমের মৃত্যু হলেও তাঁর জামাই খলিল বৈদ্য কিন্তু এই গ্রামেই রয়ে গিয়েছেন। ঠাকুরান নদীর পাড়ে কুমিরমারি পাড়ায় বসতি ২৫টি পরিবারের। যার মধ্যে বাইশটি পরিবারই জামাইবাড়ির। পাশাপাশি বসবাস করেন রউফ আলির তিন ভগ্নীপতি—ভিন্ গ্রাম থেকে আসা ফয়জুল্লা মল্লিক, জয়নাল মোল্লা ও সাইদ গাজি। আর এক জামাই লতিফ শেখ বলেন, “আমিও বাড়ির পাশে দুই জামাইকে এনে বসিয়েছি। ওদের বাড়ির সামান্য জায়গা নিয়ে শরিকি অশান্তি চলছিল। এখানে শুধু শান্তি।” বিহার থেকে এসে এই গ্রামে জামাই হয়েছিলেন সিরাজ খান। মথুরাপুর থেকে আসা তাঁর জামাই সেলিম মোল্লাও এই গ্রামেই বাসা বেঁধেছেন।

Advertisement

যত মধু কী চুপড়িঝাড়ায়—জামাই সংখ‌্যা নিয়ে চলে কৌতুক। অথচ এই গ্রাম থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে মাধবপুর গ্রামে আজও রয়েছে ‘জামাইবলি থান’। জনশ্রুতি আছে, সপ্তদশ শতকের শেষ ভাগে সেখানে সম্পদপ্রাপ্তির দৈববাণী শুনে জামাই বলি দেওয়ার ঘটনা ঘটেছিল।

এ হেন এলাকায় ‘জামাই গ্রাম’ গড়ে উঠল কী ভাবে?

এই জেলার আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষক দেবীশঙ্কর মিদ্যা বলেছেন, “জঙ্গল হাসিল হলে ইজারাদারদের কাছ থেকে জমিপ্রাপ্তির পর স্থানীয় বাসিন্দাদের অগ্রাধিকার ছিল বসতি বাড়ানো। সেই সূত্রে জামাই বসতির চল। তাছাড়া, কৌম জনজাতি গোষ্ঠীর মধ্যে প্রাচীনকাল থেকেই নিজেদের নিরাপত্তা ও প্রভাব বৃদ্ধির জন্য গোষ্ঠী বৃদ্ধি করার প্রবণতা লক্ষ করা যায়। গবেষণায় পাওয়া যায়, নানা কারণে এক সময় ধর্মান্তরিত মুসলিমদের অনেকে কৌম সমাজের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। গোষ্ঠী বৃদ্ধির প্রবণতা অন্যত্র বিক্ষিপ্ত ভাবে থাকলেও নানা কারণে এই গ্রামে বেশি দেখা গিয়েছে।”

গ্রামের উন্নয়নের অন্যতম রূপকার প্রাক্তন শিক্ষক গোবিন্দ হালদারের মতে, ‘‘জঙ্গল হাসিলের পর ইজারাদারদের হাত ধরে যাঁরা এখানে বসতি শুরু করেন তাঁদের হাতে জমি ছিল বেশি। জনবসতি বাড়াতে তাঁরা গরিব জামাই-সহ আত্মীয়দের এনে জমি-বাড়ি দিয়ে বসিয়েছিলেন গ্রামে। কিন্তু এখন জামাই বসতির চরিত্র বদল হয়েছে। শ্বশুররা জামাইদের বসাচ্ছেন সরকারি খাস জমিতে বা নদী পাড়ের সেচ দফতরের জমিতে।’’

এক সময়ে এ পঞ্চায়েতে টানা কুড়ি বছর প্রধান পদে থাকা প্রাক্তন শিক্ষক বসুদেব পুরকাইত বলেন, “মেয়েদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক নিরাপত্তা অটুট রাখতে অনেকে সরাসরি পণের পরিবর্তে জমি দিয়ে জামাই বসতি বাড়িয়েছেন। এতে সম্পত্তি থাকে সুরক্ষিত। তবে বেশির ভাগ জামাই বসতি গড়েছেন সহজ কর্মসংস্থানের সুযোগ দেখে। নদীর কোলে তিন থানার সীমানা আবার নিরাপদ আশ্রয় সমাজবিরোধী জামাইয়ের কাছেও।”

কারণ যাই হোক, জামাই সংখ‌্যা বাড়ছে দিন দিন।

মগরাহাট থেকে জামাই হয়ে এই গ্রামে এসে ত্রিশ বছর ধরে বাস সইদুল শেখের। তাঁর মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছে অন্য গ্রামে। নতুন জামাই কি ঘর বাঁধবে শ্বশুরপাড়ায়? মুচকি হেসে সইদুল বলেন, “দেখা যাক। মেয়েকে কাছছাড়া করতে কি আর ইচ্ছা হয়।”

দলবদল। দলীয় প্রধান এসমাতারা বিবি-সহ চার সদস্য তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় সিপিএমের হাতছাড়া হতে চলেছে বসিরহাট ২ ব্লকের বেগমপুর-বিবিপুর পঞ্চায়েত। ১৭টি আসনের মধ্যে সিপিএম ১২টি পেয়েছিল। ৫টি তৃণমূল। এখন তৃণমূলের সদস্য সংখ্যা ৯। দু-এক দিনের মধ্যে অনাস্থা ডেকে পঞ্চায়েত দখল করবে তৃণমূল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন