ঘুম-গুলির বিষেই কি চিরঘুমে গন্ডার

গুলির ক্ষত মেলেনি, আশপাশ থেকে বুলেটের খোলও উদ্ধার হয়নি। তাই তদন্তে নেমে সিআইডি ও বন দফতরের এই সন্দেহ বদ্ধমূল হয়েছে যে, চিরাচরিত কার্তুজ নয়, ঘুমপাড়ানি গুলিতে বিষ মিশিয়েই খুন করা হয়েছে গরুমারার গন্ডারটিকে।

Advertisement

শিবাজী দে সরকার  ও কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:২৬
Share:

—প্রতীকী ছবি।

গুলির ক্ষত মেলেনি, আশপাশ থেকে বুলেটের খোলও উদ্ধার হয়নি। তাই তদন্তে নেমে সিআইডি ও বন দফতরের এই সন্দেহ বদ্ধমূল হয়েছে যে, চিরাচরিত কার্তুজ নয়, ঘুমপাড়ানি গুলিতে বিষ মিশিয়েই খুন করা হয়েছে গরুমারার গন্ডারটিকে।

Advertisement

তদন্তকারীদের বক্তব্য, এর আগে একাধিক ঘটনায় গুলি করে গন্ডার মারার প্রমাণ মিলেছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে বুলেটের ক্ষত বা খোল না-পাওয়ায় বিষতত্ত্ব জোরদার হচ্ছে। এই গন্ডার নিধন নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকারের কাছে রিপোর্ট চেয়েছে কেন্দ্রীয় বন মন্ত্রকের ওয়াইল্ডলাইফ ক্রাইম কন্ট্রোল বুরো (ডব্লিউসিসিবি)। সিআইডি-র তরফে যোগাযোগ করা হয়েছে অসম, মেঘালয়, মণিপুর, অরুণাচল প্রদেশের পুলিশের সঙ্গে।

২৫ ডিসেম্বর ভোরে মূর্তি নদীর পূর্ব দিকে জলঢাকা নদীর চরে একটি গন্ডারের দেহ পাওয়া যায়। তাঁর খড়্গটি কাটা ছিল। গরুমারা জাতীয় উদ্যানের ডিভিশনাল ফরেস্ট অফিসার নিশা গোস্বামী বলেন, ‘‘ময়না-তদন্তকারী পশু-চিকিৎসক জানিয়েছেন, গুলি করে গন্ডারটিকে মারা হয়নি। বিষ দিয়ে, নাকি অন্য কোনও উপায়ে মারা হয়েছে— ময়না-তদন্তের সবিস্তার রিপোর্ট পেলে সেটা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব।’’ তবে বন দফতরের একটি সূত্র বলছে, গুলি করা হলে গন্ডারটি ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়ত। এ ক্ষেত্রে মনে হয়েছে, সে টলমল করতে করতে বেশ কিছুটা পথ চলেছিল।

Advertisement

গন্ডারটিকে যেখানে মারা হয়েছে, তা গরুমারা জাতীয় উদ্যানের অন্তর্গত। কী ভাবে চোরাশিকারিরা সেখানে ঢুকল, তা এখনও স্পষ্ট হয়নি। ইতিমধ্যে স্থানীয় তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে আছে এক জন প্রাক্তন চোরাশিকারি। তবে ডব্লিউসিসিবি সূত্রে উত্তরবঙ্গের জঙ্গলে চোরাশিকারিদের গন্ডার নিধনের পিছনে অন্য একটি কারণের কথাও বলা হচ্ছে। অসমের কাজিরাঙা-সহ প্রতিটি অভয়ারণ্যে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। তাতে অসুবিধা হচ্ছে চোরাশিকারিদের। কয়েক বছর আগেও যেখানে প্রতি বছর গড়ে ২৫টি গন্ডার মারা পড়ত, তা ধাপে ধাপে এ বার ছ’টিতে নেমেছে। উল্টো দিকে উত্তরবঙ্গের জলদাপাড়া ও গরুমারায় গন্ডারের সংখ্যা বাড়লেও নিরাপত্তা কিন্তু অনেকটাই ঢিলেঢালা। তাই উত্তর-পূর্বাঞ্চলের চোরাশিকারিরা বেশি এ দিকে ঢুকে পড়তে পারছে।

উত্তরবঙ্গে বন্যপ্রাণ অপরাধ দমনে বন দফতর একটি বিশেষ দল তৈরি করেছিল। কিন্তু চোরাশিকারিরা গন্ডার মারার পরে সেই দল কী করছে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বন দফতরের এক শীর্ষ কর্তা মেনে নিচ্ছেন, নজরদারিতে খামতি তো ছিলই। এ ব্যাপারে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেওয়া হবে। পুলিশ সূত্রের খবর, সিআইডির একটি দলও গরুমারায় রয়েছে। শীঘ্রই এ ব্যাপারে কিছু সূত্র মিলতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন