প্রশ্নপত্র ফাঁসের উৎস খুঁজতে হন্যে সিআইডি

ধরা পড়েছে তিন অভিযুক্ত। কিন্তু আইটিআই প্রবেশিকা পরীক্ষা প্রক্রিয়ার ঠিক কোন পর্যায়ে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে, ১০ দিনেও সেটা নিশ্চিত ভাবে জানতে পারলেন না সিআইডি-র গোয়েন্দারা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৫ ০৩:২৩
Share:

প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে ধৃত তুহিন দাস এবং বাপ্পা পাইন। বারাসত আদালতে। —নিজস্ব চিত্র

ধরা পড়েছে তিন অভিযুক্ত। কিন্তু আইটিআই প্রবেশিকা পরীক্ষা প্রক্রিয়ার ঠিক কোন পর্যায়ে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে, ১০ দিনেও সেটা নিশ্চিত ভাবে জানতে পারলেন না সিআইডি-র গোয়েন্দারা। সিআইডি-র এক অফিসার মঙ্গলবার বলেন, ‘‘রাজ্যে প্রশ্নপত্র বিলি করার ৪০টি কেন্দ্র রয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করে বিষয়টি জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। ডাকা হচ্ছে প্রশ্ন তৈরির দায়িত্বে থাকা শিক্ষক এবং প্রশ্নপত্রের মুদ্রণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ছাপাখানার কর্মীদেরও।’’

Advertisement

গত ২৮ জুন আইটিআই পরীক্ষার ঠিক আগের মুহূর্তে জানানো হয়, প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে গিয়েছে। যদিও পরে জানা যায়, প্রশ্ন ফাঁসের ব্যাপারটা তার আগের রাতেই টের পেয়ে গিয়েছিল পুলিশ। অভিযুক্ত দু’জনকে কল্যাণী থানায় নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছিল। ওই দুই অভিযুক্ত প্রশ্ন ফাঁসের কথা কবুলও করেছিল বলে পুলিশেরই একটি সূত্রের খবর। তার পরেও ওই দু’জনকে ছেড়ে দেওয়ায় এই মামলায় পুলিশও এখন কাঠগড়ায়।

পরীক্ষা বাতিলের দিনেই খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশ্ন ফাঁসের তদন্তের দায়িত্ব দেন সিআইডি-কে। ওই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে অর্জিত দাস, তুহিন দাস ও বাপ্পা পাইন নামে তিন জনকে গ্রেফতারও করেছে সিআইডি। এ দিন তুহিন ও বাপ্পাকে বারাসত আদালতে তোলা হয়। তাদের সাত দিন পুলিশি হাজতে রাখার নির্দেশ দেন ওই আদালতের মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট দেবকুমার সুকুল। সরকারি কৌঁসুলি বিকাশরঞ্জন দে জানান, এ দিন আদালতে অভিযুক্তদের হয়ে কোনও আইনজীবী সওয়াল করেননি। সিআইডি সোমবারেই অর্জিতকে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছিল।

Advertisement

প্রশ্ন উঠছে, তিন অভিযুক্তকে নিজেগের হেফাজতে পেয়েও গোয়েন্দারা প্রশ্ন ফাঁসের উৎসে পৌঁছতে পারছেন না কেন? তদন্তে তা হলে অগ্রগতি হয়েছে কতটুকু?

প্রথম প্রশ্নের সরাসরি জবাব মিলছে না। তবে অগ্রগতির প্রশ্নে সিআইডি সূত্রেই জানা গিয়েছে, সম্ভাব্য যে-সব পর্যায় থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে পারে, তার সম্ভাব্য একটি তালিকা তৈরি করেছেন গোয়েন্দারা। তার মধ্যে রয়েছে প্রশ্নপত্রের কয়েকটি ‘সেট’ থেকে চূড়ান্ত প্রশ্নপত্র তৈরি, ছাপাখানায় ছাপাই পর্ব, ছাপার ভুল সংশোধনের প্রক্রিয়া, প্রশ্নপত্র বিলির বিভিন্ন কেন্দ্র ইত্যাদি। এই সব পর্যায়ের সঙ্গে যাঁরা যুক্ত ছিলেন, তাঁদের মোবাইলের ‘কল ডিটেলস’ও জোগাড় করছেন সিআইডি-কর্তারা। সেগুলোর বিচার-বিশ্লেষণ চলছে। তবে গোয়েন্দাদের প্রাথমিক ধারণা, প্রশ্ন ফাঁস হয়েছিল কল্যাণীরই কোনও কেন্দ্র থেকে। এবং সেখান থেকে কিছু প্রশ্নপত্র যায় উত্তর ২৪ পরগনায়। এই সন্দেহের মূলে আছে ধৃতদের স্বীকারোক্তি। ধৃত দুই ছাত্র জেরার মুখে জানায়, মূলত নদিয়া জেলার পরীক্ষার্থীদের কাছে প্রশ্নপত্র পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বে ছিল তারা। অর্জিত কল্যাণী আইটিআইয়ের প্রথম বর্ষের পড়ুয়া। সব মিলিয়ে কল্যাণীর দিকে বিশেষ নজর রাখছেন গোয়েন্দারা। এর আগে রেলের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছিল নদিয়া থেকেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন