পরিবারকে আর্থিক সাহায্যেরও আশ্বাস

মিতার মৃত্যুর সিআইডি তদন্তের নির্দেশ মমতার

দিন সাতেক আগে অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছিল উলুবেড়িয়ার কুশবেড়িয়ার বধূ মিতা মণ্ডলের। খুনের অভিযোগ দায়ের হওয়ায় তাঁর স্বামী ও শ্বশুরকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। পলাতক ছিলেন শাশুড়ি ও দেওর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

উলুবেড়িয়া ও কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০১৬ ০৪:১২
Share:

মিতা মণ্ডলের জন্য সুবিচার চেয়ে মিছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের। সোমবারের সেই মিছিলে পা মিলিয়েছেন সাধারম মানুষও। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

দিন সাতেক আগে অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছিল উলুবেড়িয়ার কুশবেড়িয়ার বধূ মিতা মণ্ডলের। খুনের অভিযোগ দায়ের হওয়ায় তাঁর স্বামী ও শ্বশুরকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। পলাতক ছিলেন শাশুড়ি ও দেওর। সোমবার ঘটনার তদন্তভার সিআইডিকে দেওয়ার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিনই রাতে কোলাঘাটে এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে দেওর রাহুল মণ্ডল গ্রেফতার হয়।

Advertisement

সোমবার নবান্নে মিতার বাপের বাড়ির লোকজন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। মুখ্যমন্ত্রী তাঁর এক ছেলেকে চাকরি-সহ সব রকম সাহায্যের আশ্বাস দেন বলে জানান মিতার বাবা, পেশায় রাজমিস্ত্রি সহদেব দাস। তিনি বলেন, ‘‘মেয়ের বিয়ের জন্য যে ৭০ হাজার টাকা ধার হয়েছিল, নিজের ত্রাণ তহবিল থেকে তা-ও মিটিয়ে দেওয়ার কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।’’

সহদেববাবুরা নবান্নে যাওয়ার আগেই সাংবাদিকদের ডেকে রাজ্যের মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে মিতার অস্বাভাবিক মৃত্যুর তদন্ত সিআইডি-র হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। রাজ্য সরকার নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে। সন্ধ্যায় সিআইডি-র একটি বিশেষ দল কুশবেড়িয়ায় মিতার শ্বশুরবাড়িতে যায়। সিআইডি অফিসাররা মিতার ঘর, জিনিসপত্র দেখে উলুবেড়িয়া থানাতেও যান। তদন্তে এ পর্যন্ত যা পাওয়া গিয়েছে, সব সিআইডি-র হাতে তুলে দেওয়া হবে বলে জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান।

Advertisement

এ দিনই মিতার দেহের ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট পুলিশের হাতে আসে। পুলিশ জানায়, রিপোর্টে জানানো হয়েছে, মিতার মৃত্যু হয়েছে ঝুলন্ত অবস্থায়। ময়না-তদন্তের সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসকেরা জানান, ঝুলন্ত অবস্থায় কারও মৃত্যু হলে দেহে কিছু লক্ষণ (মল বেরিয়ে আসা, কান থেকে রক্ত বেরিয়ে আসা ইত্যাদি) ফুটে ওঠে। এই ধরনের মৃত্যুকে সাধারণ ভাবে আত্মহত্যাই ধরা হয়। ময়না-তদন্তের রিপোর্টে মিতার দেহেও সেই সব লক্ষণ মিলেছে। একই সঙ্গে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে এ-ও জানানো হয়, এটি ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট। চূড়ান্ত রিপোর্ট মিলবে ভিসেরা পরীক্ষার পরেই। এটা আত্মহত্যা না হত্যা— তখনই পরিষ্কার হবে। তদন্তকারীদের একটি সূত্র জানাচ্ছে, ঘটনার রাতে মিতার স্বামী, অভিযুক্ত রানা স্ত্রীকে প্রচণ্ড মারধর করেছিল বলে প্রাথমিক ভাবে মনে হয়েছে। তার পরে মৃতপ্রায় স্ত্রীকে সে ঝুলিয়ে দেয়, নাকি মারধরের জেরে মিতা আত্মঘাতী হন, তাতে ধোঁয়াশা রয়েছে। ঘটনা যা-ই হোক, এই মৃত্যুর দায় রানা বা তার পরিবার কখনওই এড়াতে পারে না।

মিতার দেওর ও নিখোঁজ শাশুড়ি। নিজস্ব চিত্র

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী, গড়িয়ার শান্তিনগরের মেয়ে বছর চব্বিশের মিতার বিয়ে হয় মাসছয়েক আগে। বিজয়া দশমীর ভোরে ফুলেশ্বরের একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে তাঁর দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মৃত অবস্থায় তাঁকে ওই হাসপাতালে আনা হয়েছিল। বাপের বাড়ির পক্ষ থেকে খুনের অভিযোগ দায়ের হওয়ায় ওই রাতেই পুলিশ মিতার স্বামী রানা এবং শ্বশুর বিজেন্দ্রকে গ্রেফতার করে। রানা খুনের অভিযোগ উড়িয়ে পুলিশের কাছে দাবি করেছিল, নবমীতে রাত ১১টা পর্যন্ত সে স্ত্রীকে ঠাকুর দেখায়। বাড়ি ফিরে স্ত্রী ফের ঠাকুর দেখার বায়না করেন। স্ত্রীকে ফের ঠাকুর দেখাতে নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা মারতে চলে যায়। সাড়ে তিনটে নাগাদ বাড়ি ফিরে দেখে, সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ওড়নার ফাঁসে মিতা ঝুলছে। দরজা ভেঙে সে স্ত্রীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু প্রথম থেকেই মিতার বাপের বাড়ির লোকজন রানার দেওয়া এই ‘আত্মহত্যার তত্ত্ব’ মানেনি। মিতার কাকা রঞ্জিতবাবু বলেন, ‘‘জামাই নেশাগ্রস্ত ছিল। প্রায়ই ভাইঝিকে মারধর করত। মিতা মাঝেমধ্যেই ওর মায়ের কাছে টাকা চাইত। ওকে খুন করা হয়েছে।’’ মুখ্যমন্ত্রী সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দেওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন রানার জেঠা জয়দেববাবু। তিনি বলেন, ‘‘এর ফলে সত্য উদ্ঘাটিত হবে বলে আশা করি। উলুবেড়িয়া থানার তদন্ত কেউ প্রভাবিত করতেই পারে। সিআইডি-তদন্ত করলে সেই সম্ভাবনা কম। ওটা দুর্ঘটনাই।’’

মিতার অস্বাভাবিক মৃত্যুর প্রতিবাদে এ দিন বিকেলে যাদবপুরে মিছিল করেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান পড়ুয়ারা। পা মেলান সাধারণ মানুষও। পারিবারিক হিংসা বন্ধের ডাক দেন তাঁরা। ৯০ দিনের মধ্যে দোষীদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল-সহ কয়েকটি দাবিতে উলুবেড়িয়া থানায় স্মারকলিপি দেন মিতার দাদা খোকন দাস এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল ছাত্রছাত্রী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন