ডিএসপি-তে শক্তি বাড়িয়ে জিতল সিটু

সঙ্ঘবদ্ধ প্রতিরোধে শিলিগুড়িতে সাফল্য এসেছে। এ বার দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টের (ডিএসপি) কর্মী সংগঠনের ভোটেও একই ভাবে বড় জয় পেল সিটু অনুমোদিত হিন্দুস্তান স্টিল এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন।

Advertisement

সুব্রত সীট

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০১৫ ০৪:০০
Share:

জয়ের রং। ডিএসপি-র ভোটে জিতে সিটু কর্মীদের উচ্ছ্বাস। ছবি: বিকাশ মশান।

সঙ্ঘবদ্ধ প্রতিরোধে শিলিগুড়িতে সাফল্য এসেছে। এ বার দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টের (ডিএসপি) কর্মী সংগঠনের ভোটেও একই ভাবে বড় জয় পেল সিটু অনুমোদিত হিন্দুস্তান স্টিল এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন। আর টানা হুমকি-সন্ত্রাসের অভিযোগ ছিল যাদের বিরুদ্ধে, সেই আইএনটিটিইউসি কার্যত আগের জায়গাতেই আটকে রইল। তবে শাসক দলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের শক্তি হিসেবে কংগ্রেস প্রভাবিত আইএনটিইউসি-র বদলে বামপন্থী সিটুকেই বেছে নিয়েছেন শ্রমিকেরা। ফলে আইএনটিইউসির ভোট অনেক কমে লক্ষ্যনীয় ভাবে বেড়েছে সিটুর ভোট।

Advertisement

ডিএসপি সূত্রের খবর, কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কর্মীদের দাবিদাওয়া নিয়ে কথা বলার জন্য এই ভোটের মাধ্যমে কমিটি গড়া হয়। আগে ভোটের হার অনুযায়ী কমিটিতে প্রতিনিধিত্ব ঠিক হত। এ বার থেকে নিয়ম হয়েছে, একক ভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ সংগঠনের হাতেই থাকবে কমিটি। কিন্তু বুধবার সিটু জানিয়ে দিয়েছে, তারা সকলের মতামত নিয়েই চলবে। অর্থাৎ জয়ের পরেও একজোট থাকার রাস্তা থেকে সরছেন না বাম নেতৃত্ব।

২০১১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরেই ভোট হয়েছিল ডিএসপি-তে। সে বার সিটু ৩৮.৯, আইএনটিটিইউসি ৩৮.২ এবং আইএনটিইউসি ২২ শতাংশ ভোট পায়। চার বছর পরে মঙ্গলবার সংস্থার প্রায় সাড়ে আট হাজার কর্মী ভোট দেন। গভীর রাতে গণনা শেষ হয়। দেখা যায়, প্রায় চার শতাংশ ভোট বাড়িয়েছে সিপিএম প্রভাবিত সিটু। ৪২.৭ শতাংশ ভোট তাদের ঝুলিতে। আইএনটিটিইউসি ৩৮.৫ শতাংশে আটকে আছে, আইএনটিইউসি কমে দাঁড়িয়েছে ১৩ শতাংশে।

Advertisement

ঘটনা হল, গত কিছু দিন ধরে প্রয়োজনে আইএনটিইউসি-র পাশেও গিয়ে দাঁড়িয়েছেন সিটু নেতারা। জোর দিয়েছেন সঙ্ঘবদ্ধ প্রতিরোধে। সিটুর বর্ধমান জেলা সভাপতি বিনয়েন্দ্রকিশোর চক্রবর্তী বলেন, ‘‘কে কাকে ভোট দেবেন, সেটা তাঁর ব্যাপার। কিন্তু, সকলে যেন নিজের ভোট দিতে পারেন, সেই সুযোগ করে দেওয়ার দিকে নজর দিয়েছিলাম আমরা।’’

তবে শুধু এই দুই কারণেই যে জয় আসেনি, সেটাও পরিষ্কার। গত কিছু দিন ধরেই দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের নানা কারখানায় হৃতজমি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে আসছিল সিটু। এ বছরের গোড়ায় দুর্গাপুর থেকে বার্নপুর পর্যন্ত তিন দিনের পদযাত্রার আয়োজন করে তারা। তাতে ভাল সাড়াও মেলে। সিটু সূত্রের খবর, মার্চে সংগঠনের জেলা সম্মেলনে নেতৃত্বে বদলের দাবিতে সরব হন সদস্যেরা। শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক-কর্মীদের বড় অংশ এখনও পাশে থাকলেও উপযুক্ত নেতৃত্বের অভাবে আন্দোলন দিশা হারাচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠে। এর পরেই সংগঠনে বড়সড় রদবদল করা হয়। প্রবীণ অজিত মুখোপাধ্যায়কে সরিয়ে জেলা সম্পাদক করা হয় তুলনায় কমবয়সী, সিপিএম রাজ্য কমিটির সদস্য বংশগোপাল চৌধুরীকে। কার্যকরী কমিটি থেকে অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের সরিয়ে বেশ কয়েক জন নবীন মুখকেও আনা হয়। সম্পাদকমণ্ডলীর গড় বয়স নামিয়ে আনা হয় ৫০ বছরের নীচে।

এর পরে সিটুর বড় চ্যালেঞ্জ ছিল, ভোট যাতে নির্বিঘ্নে হয় তা নিশ্চিত করা। কিছু দিন আগে থেকেই তৃণমূল তথা আইএনটিটিইউসি-র বিরুদ্ধে সন্ত্রাস ও হুমকির অভিযোগ উঠছিল। দিন চারেক আগে ইস্পাতনগরীতে প্রতিরোধের ডাক দিয়ে বড় মিছিল করে সিটু। শাসক দলকে রুখতে আইএনটিইউসি-র সঙ্গে তারা হাতও মেলায়। রবিবার এক আইএনটিইউসি কর্মীকে মারধরের অভিযোগ ওঠায় গভীর রাত পর্যন্ত দুই সংগঠন কারখানায় বিক্ষোভ দেখায়। নির্বিঘ্নে ভোট করানোর দাবিতে দীর্ঘ ক্ষণ সংস্থার কর্তাদের ঘেরাও করা হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন