আজ মহাষষ্ঠী, দেবীর আগেই ভিড়ের বোধন

পুলিশ কমিশনার ভেবেছিলেন, বিকেল গড়ালেই সামলে দেবেন পরিস্থিতি। কিন্তু পঞ্চমীর সন্ধ্যাতেই তাঁকে কার্যত ঘোল খাওয়াল মানুষের ঢল! উৎসব কাপে ক্লাব বনাম ক্লাবের লড়াই তো রয়েইছে, এ দিন থেকে যেন লড়াই শুরু হল ভিড় আর পুলিশেও!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:৪৮
Share:

অস্ত্র ধরো...। উত্তর কলকাতার এক বাড়ির পুজোয়। বৃহস্পতিবার সুমন বল্লভের তোলা ছবি।

পুলিশ কমিশনার ভেবেছিলেন, বিকেল গড়ালেই সামলে দেবেন পরিস্থিতি। কিন্তু পঞ্চমীর সন্ধ্যাতেই তাঁকে কার্যত ঘোল খাওয়াল মানুষের ঢল!

Advertisement

উৎসব কাপে ক্লাব বনাম ক্লাবের লড়াই তো রয়েইছে, এ দিন থেকে যেন লড়াই শুরু হল ভিড় আর পুলিশেও!

বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই উত্তর-দক্ষিণে শুরু হয়েছিল যানজট। রীতিমতো নাকাল হচ্ছিলেন মানুষজন। কিন্তু পুলিশের আশা ছিল, বিকেলে অতিরিক্ত বাহিনী নামলেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। দুপুরে নবান্নে দাঁড়িয়ে একই দাবি করেছিলেন কলকাতার সিপি রাজীব কুমার। শেষমেশ তেমন যে হল না তার জন্য দায়ী কিন্তু উৎসবের উন্মাদনাই।

Advertisement

বোধনের আগে ভিড় জমবে না, এটাই ছিল দীর্ঘ দিনের পরিচিত ছবি। সপ্তমী থেকে শুরু হতো জনজোয়ার। পঞ্চমীর গভীর রাতে অনেকে গাড়ি নিয়ে ঠাকুর দেখতে বেরোতেন ঠিকই। কিন্তু তা সামলাতে তেমন একটা বেগ পেতে হতো না পুলিশকে।

কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে যেন উৎসব ক্রমশ এগিয়ে আসছে। দ্বিতীয়া, তৃতীয়া থেকেই পুজো শুরু হচ্ছে শহরে। এ বছর তো মহালয়াতেই উদ্বোধন হয়েছে বহু পুজোর। তৃতীয়াতেই ঢাকে কাঠি! চতুর্থী থেকেই মণ্ডপে মণ্ডপে আছড়ে পড়েছে জনজোয়ার। বুধবার চতুর্থীর সন্ধ্যায় ভিড় শুরু হয়েছিল। তালগোল পাকিয়ে গিয়েছিল শহরের ট্র্যাফিক ব্যবস্থা। গভীর রাতেও তা স্বাভাবিক হয়নি। গাড়িতে চেপে, পায়ে হেঁটে এক মণ্ডপ থেকে অন্য মণ্ডপে ভিড়ের আনাগোনা লেগেই ছিল।

জনজোয়ার দক্ষিণ কলকাতায়। ছবি:শুভাশিস ভট্টাচার্য।

বদলে যাওয়া ভিড়ের চরিত্রের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বদলেছে পুলিশের পঞ্জিকাও। চতুর্থী থেকেই পথে নেমেছে পুলিশ। তবু পরিস্থিতি আয়ত্তে আনতে পারছে না তারা। কেন? পুলিশ সূত্রের ব্যাখ্যা, অফিস-কলেজ এখনও খোলা রয়েছে। গাড়িঘোড়া কমেনি। পুজোর বাজার তুঙ্গে, সঙ্গে মণ্ডপের ভিড়ও। পঞ্চমী যেন কাজের দিনে উৎসবের চেহারা নিয়েছে! ফলে দুপুরে যাঁরা কাজে বেরিয়েছেন, তাঁদের সামান্য পথ যেতেই দম বেরিয়ে গিয়েছে।

রাজডাঙার বাসিন্দা সুমন্ত বসুর অভিজ্ঞতা বলছে, বাড়ির সামনে থেকে কালীঘাট মেট্রোয় যাওয়ার জন্য বাসে চেপেছিলেন তিনি। সময় লেগেছে প্রায় দেড় ঘণ্টা। বিকেলে ধর্মতলা থেকে বাসে বেহালা পৌঁছতে কালঘাম ছুটেছে। লালবাজারের খবর, এ দিন সকাল থেকে দফায় দফায় যানজটে থমকে গিয়েছে হাতিবাগান, বিধান সরণি, বিবেকানন্দ রোড, অরবিন্দ সরণি। দক্ষিণে একই পরিস্থিতি গড়িয়াহাট, রাসবিহারী অ্যাভিনিউ, শরৎ বসু রোড, এজেসি বসু রোড, টালিগঞ্জ সার্কুলার রোড, ভবানীপুরে। যানজট সামলাতে পরমা উড়ালপুলও এক সময় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। রাসবিহারী অ্যাভিনিউতেও দুপুরের পর বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। সন্ধ্যাতেও ইএম বাইপাসে টানা দাঁড়িয়ে ছিল গাড়ি। চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউতেও থমকে থমকে চলেছে।

তবে সিপি-র আশ্বাস একেবারে ফলেনি, এ কথা মানতে নারাজ অনেকে। তাঁরা বলছেন, বৃহস্পতিবার রাত গড়ানোর পর ধীরে ধীরে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছেন পুলিশকর্মীরা। কিন্তু বিকেলেই কেন সামলানো গেল না?

আজ বোধন রায়চৌধুরী বাড়ির ৩৩৩ বছরের পুরনো পুজো।

হাওড়ার শিবপুরে প্রদীপ আদকের তোলা ছবি।

লালবাজারের কর্তারা বলছেন, এ দিন একটি ধর্মীয় মিছিলের জেরে সৈয়দ আমির আলি অ্যাভিনিউ তিন ঘণ্টার জন্য বন্ধ রাখতে হয়েছিল। তার ফলেই কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকা আটকে গিয়েছিল। পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাওয়ায় আর পেরে ওঠেনি পুলিশ। লালবাজারের এক পদস্থ কর্তা বলছেন, ‘‘মিছিল শেষ হতেই অতিরিক্ত বাহিনী রাস্তায় নামানো হয়। কিন্তু ওই মিছিলের জেরে তৈরি হওয়া যানজট কাটাতে রাত গড়িয়ে গিয়েছে।’’

পুলিশের কেউ আবার বলছেন, চতুর্থী থেকে বাহিনী পথে নেমেছে ঠিকই, তবে পুরোটা বুঝতে একটু সময় লাগবেই। তা হলে কি দ্বিতীয়া থেকেই পুলিশ নামালে ভাল হতো? মানতে নারাজ পুলিশ কমিশনার বলছেন, তা হলে অষ্টমীর সন্ধ্যায় পুলিশের দক্ষতা কমে যেত। অর্থাৎ, লাগাতার রাত জেগে হাঁপিয়ে পড়তেন পুলিশকর্মীরা। অষ্টমী-নবমীর ভিড় সামলানোর ক্ষমতা থাকত না তাঁদের।

আজ, শুক্রবার ষষ্ঠী। আরও অনেকটাই বাড়বে ভিড়। তার উপরে উত্তর কলকাতায় একটি ধর্মীয় মিছিল রয়েছে। বৃহস্পতিবার সৈয়দ আমির আলি অ্যাভিনিউয়ের যা দশা হয়েছিল, তা আজ হতে পারে উত্তরে। বোধনে তাই পুলিশের ‘বড়’ পরীক্ষা!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন