জামুড়িয়ায় বহিরাগতকে বের করে দিচ্ছে সিভিক পুলিশ। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ।
লোকসভা ভোটে বড় ধাক্কা দিয়েছিল বিজেপি। পুরভোটে তার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে মরিয়া ছিল তৃণমূল। পাল্টা প্রস্তুতি ছিল বিজেপির, এমনকী বামেদেরও। ফলে বিধাননগরের মতো পুরোপুরি একতরফা ভোট দখল হল না আসানসোলে। সন্ত্রাস পাল্টা সন্ত্রাসের অভিযোগ উঠেছে শাসক, বিরোধী দু’তরফ থেকেই।
ভোটের শুরু থেকেই নানা এলাকায় বুথ দখল, মারধরের অভিযোগ আসতে থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অবশ্য অভিযুক্ত শাসক দল। সকালে আসানসোলের বিসি কলেজে তিনটি বুথ তৃণমূলের লোকজন দখল করে নেয় বলে অভিযোগ। কংগ্রেস ও বিজেপি কর্মীদের মারধর করে বের করে দেওয়া হয়। গোলমালে বেশ কিছুক্ষণ স্থগিত ছিল ভোটগ্রহণ।
আসানসোলের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে সিপিএম প্রার্থী মানিক রুইদাস ও তাঁর তিন সঙ্গীকে মারধর করে বের করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। মানিকবাবুর পা ভেঙে যায়। গুরুতর আহত হন বাকিরাও। বার্নপুর বয়েজ ও গার্লস স্কুলের বুথগুলি সকাল থেকে তৃণমূল আশ্রিত বহিরাগতেরা দখল করে নেয় বলে অভিযোগ। শহর জুড়ে মোটরবাইক-বাহিনী সকাল থেকেই দাপিয়ে বেড়িয়েছে।
জামুড়িয়াতেও সকাল থেকে গোলমাল শুরু হয়। ৫ নম্বর ওয়ার্ডে সিপিএমের এজেন্টদের বুথ থেকে বের করে দেওয়া নিয়ে অশান্তির সূত্রপাত। সিপিএম কর্মী-সমর্থকেরা প্রতিবাদ-বিক্ষোভ শুরু করেন। পুলিশের সঙ্গেও বচসা বাধে। এর খানিক পরে জামুড়িয়ায় ১১ নম্বর ওয়ার্ডেও গণ্ডগোল হয়। অভিযোগ, তৃণমূলের লোকজন একটি বুথের সামনে বোমাবাজি করে। জড়ো হওয়া সিপিএম এবং বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা পুলিশ হঠাতে গেলে ইট-পাটকেল ছোড়ে তারা। পুলিশের একটি গাড়ির কাচ ভাঙে।
দুপুরে জামুড়িয়ার নানা এলাকায় সংঘর্ষ শুরু হয়। স্থানীয় নেতা কাজল মাজি-সহ তৃণমূলের বেশ কয়েক জন আহত হন। দলের আসানসোল জেলা সভাপতি ভি শিবদাসনকেও সিপিএমের লোকজন হেনস্থা করে বলে অভিযোগ। নিঘায় সিপিএম সমর্থকদের হঠাতে গেলে পুলিশের উপরে হামলা হয়।
বিকেল ৩টে নাগাদ আসানসোলের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে কাল্লা এলাকায় বুথের বাইরে গাড়িতে করে এসে গুলি চালিয়ে পালায় এক দল দুষ্কৃতী। গুলিবিদ্ধ হন তিন বিজেপি কর্মী। অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তিন জনকে আসানসোল হাসপাতালে পাঠানো হয়। এক জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
দুপুরে আসানসোলের ধ্রুবডাঙা এলাকায় তৃণমূল কর্মী বৈজু ঠাকুরকে বেধড়ক মারধর করা হয়। অভিযোগ, তিনি বহিরাগতদের নিয়ে ওই এলাকার একটি বুথ দখল করতে গিয়েছিলেন। সিপিএম এবং বিজেপি কর্মীরা এক জোট হয়ে ইট-পাটকেল ছুড়তে শুরু করে। বাকিরা পালিয়ে গেলেও বৈজুবাবু পালাতে পারেননি। তাঁকে ধরে লাঠি, রড দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে আসানসোল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বিকেল সাড়ে ৩টে নাগাদ আসানসোলের হাটন রোডে ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডে রব্বানিয়া হাইস্কুলের বুথে ইভিএম ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে।
কুলটিতে ৬৫ নম্বর ওয়ার্ডে নির্দল প্রার্থী আখতার হুসেনের সঙ্গে বুথ চত্বরে বচসা বাধে তৃণমূল প্রার্থী সেলিম আখতার আনসারির। তাঁদের মধ্যে হাতাহাতিও শুরু হয়। তা থেকে দু’পক্ষের লোকজনের সংঘর্ষ বেধে যায়। আখতার হুসেনের অনুগামীদের ছোড়া ইটে সেলিম আখতার আনসারি ও তাঁর এক অনুগামী কানে চোট পান।