মক্কেল-স্বার্থ শিকেয় তুলে কর্মবিরতি

হাওড়ার ঘটনা নিয়ে বিচার বিভাগীয় ও প্রশাসনিক রিপোর্ট তলব করেছেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৯ ০১:১৮
Share:

প্রতীকী ছবি।

ওকালতি পেশা হিসেবে স্বাধীন। কিন্তু তার মানে কি এই যে, মক্কেলের প্রতি উকিলদের কোনও দায়বদ্ধতা থাকবে না? রাজ্য জুড়ে আইনজীবীদের কর্মবিরতির প্রেক্ষিতে এই প্রশ্ন উঠছে।

Advertisement

হাওড়া আদালতে আইনজীবীদের উপরে হামলার প্রতিবাদে রাজ্য জুড়ে কর্মবিরতির ‘অনুরোধ’ জানিয়েছে রাজ্য বার কাউন্সিল। সেই ‘অনুরোধ’-এ সাড়া দিয়ে বৃহস্পতিবার থেকে সব আদালতে কাজ শিকেয় তুলে দিয়েছেন আইনজীবীরা। তার ফলে আদালতে এসে বিচার না-পেয়েই ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন অসংখ্য মানুষ। কর্মবিরতির ফলে শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চে বিমল গুরুংয়ের জামিন সংক্রান্ত মামলারও শুনানি হয়নি।

হাওড়ার ঘটনা নিয়ে বিচার বিভাগীয় ও প্রশাসনিক রিপোর্ট তলব করেছেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি। সোম-মঙ্গল বারের মধ্যে সন্তোষজনক রিপোর্ট না-পেলে তিনি নিজেই ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন। তার পরেও কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হল না কেন? আলিপুর আদালতের বিশেষ সরকারি আইনজীবী পার্থসারথি মুখোপাধ্যায়ের মতো অনেকেই বলছেন, প্রধান বিচারপতি বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করার পরে অভিযুক্ত ও সাক্ষীদের হয়রানির বিষয়টি বিবেচনা করে বিচার ব্যবস্থা চালু রাখার প্রয়োজন আছে।

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

রাজ্য বার কাউন্সিলের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান প্রসূন দত্ত অবশ্য বলেন, ‘‘আইনজীবীদের উপরে হামলার জেরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক নেই। বেশির ভাগ সদস্য চান, আগে দোষীদের গ্রেফতার করা হোক। তার পরে কাজ শুরু হবে।’’ যদিও এই বক্তব্য নিয়ে ভিন্ন মতও আছে। মামলায় যুক্ত অনেকেরই বক্তব্য, প্রতিবাদে আদালতে না-হয় কর্মবিরতি চলবে। আইনজীবীরা নিজেদের চেম্বারেও কর্মবিরতি পালন করছেন তো? এই প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি আইনজীবী-নেতারা।

কারও কারও কটাক্ষ, আইনজীবীদের কর্মবিরতি তো এ রাজ্যের ‘ঐতিহ্য’! তাঁরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, গত বছরেও বিচারপতি নেই বলে দু’মাসেরও বেশি সময় ধরে হাইকোর্টে কাজ শিকেয় তুলে রাখা হয়েছিল। অবসরপ্রাপ্ত এক বিচারকের প্রশ্ন, ‘‘দোষীরা যদি পাঁচ মাস ধরে পালিয়ে বেড়ায়, তা হলে কি সেই পাঁচ মাসই আদালতে কাজ হবে না?’’ হাইকোর্টের অন্য এক অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির প্রশ্ন, ‘‘২৯ এপ্রিল দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় পুরোদমে ভোট শুরু হচ্ছে। তা হলে কি রাজনৈতিক কাজে সময় দেওয়ার জন্যই এই কর্মবিরতি?’’ কলকাতা হাইকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি উত্তম মজুমদারের মন্তব্য, ‘‘উনি মনগড়া কথা বলেছেন। এ রাজ্যে মন্ত্রীর জুতো হারালেও দু’দিনের মধ্যে পুলিশ তা খুঁজে এনে দেয়। এই ঘটনায় দোষীদের ধরতে পাঁচ মাস লাগলে বুঝতে হবে প্রশাসন ব্যর্থ।’’

আইনজীবীরা বারবার বলেন, জামিন অভিযুক্তের আইনি অধিকার। তা হলে তাঁদের কর্মবিরতিতে বহু অভিযুক্ত যে জামিনের সুযোগ হারাচ্ছেন, তার কী হবে? উত্তমবাবুর যুক্তি, ‘‘আইনজীবীরা জোর করে আদালত বন্ধ করেননি। কোনও বিচারপ্রার্থী নিজেই তাঁর জামিনের আবেদন করতে পারেন।’’ প্রশ্ন উঠছে, এ রাজ্যের ক’জন বিচারপ্রার্থী এজলাসে দাঁড়িয়ে নিজের পক্ষে যুক্তি সাজিয়ে সওয়াল করতে পারেন? এই প্রশ্নের উত্তরে মুখে কুলুপ এঁটেছেন হাইকোর্টের প্রবীণ আইনজীবীরা।

হাইকোর্টের ছবিরই প্রতিফলন ঘটে অন্যত্র। শুক্রবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা বিচারক রবীন্দ্রনাথ সামন্ত আলিপুর আদালতের আইনজীবীদের সঙ্গে বৈঠকে বসলেও কোনও লাভ হয়নি। আলিপুর আদালতের বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সুদীপ ভৌমিক বলেন, ‘‘সোমবার হাইকোর্টে এই বিষয়ে শুনানির পরে কর্মবিরতি চালু রাখা হবে কি না, সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।’’ বিধাননগর আদালতেও কাজ হয়নি। এ দিন কাজ হয়নি জেলার আদালতগুলিতেও। আলিপুরদুয়ার, মালদহের একাধিক আদালতে বিচার চাইতে এসে বিফল হয়ে ফিরে গিয়েছেন মানুষজন। হুগলি জেলার কোনও আদালতেও কাজ হয়নি। আদালতগুলি কার্যত ফাঁকা ছিল। বাঁকুড়ার বিভিন্ন আদালতে বিচারপ্রার্থীরা এসে ফিরে গিয়েছেন। একই ছবি পুরুলিয়া ও পশ্চিম বর্ধমানে। কর্মবিরতির ফলে বিচারপ্রার্থীদের অসুবিধার কথা মেনে নিয়ে পুরুলিয়ার বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক অতুল মাহাতো বলেন, ‘‘এই কর্মবিরতিতে মক্কেলরা আমাদের পাশে রয়েছেন।’’ বর্ধমান ও হলদিয়া আদালতের আইনজীবীরা এ দিন হাওড়ার ঘটনার প্রতিবাদে মিছিল করেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন