অনাস্থার শেষ কোথায়, রাজ্য জুড়ে চিকিৎসা জগতে আপাতত প্রশ্ন এটাই। মুনাফা বাড়াতে কিছু বেসরকারি হাসপাতালের অতিরিক্ত বিল, এক শ্রেণির চিকিৎসকের অপ্রয়োজনে হাজারো পরীক্ষানিরীক্ষা করানোর প্রবণতায় রাশ টানতে বিল পাশ হয়েছে বিধানসভায়। প্রতিদিনই সামনে আসছে হাসপাতালগুলির গাফিলতির নতুন নতুন অভিযোগ। হাসপাতালগুলিও তটস্থ। অতি সাবধানী হতে গিয়ে তাদের কেউ কেউ এখন উল্টো বিপদ ডাকছে। সব মিলিয়ে রাজ্যে এই মুহূর্তে চিকিৎসক-রোগী সম্পর্কের সমীকরণ যেখানে দাঁড়িয়েছে, তাতে একটাই কথা সামনে আসছে— এর পর কী?
স্বাস্থ্যকর্তাদের একটা বড় অংশ মানছেন, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ছাড়া শুধু সরকারের পক্ষে স্বাস্থ্য পরিষেবার জোগান দেওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু যে ভাবে বেসরকারি হাসপাতালগুলির ওপরে সাধারণ মানুষের ভরসা কমছে, তাতে আগামী দিনে কী অপেক্ষা করছে, সেটাই প্রশ্ন। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন হাসপাতালে যে ভাবে মাঝেমধ্যেই রোগীর পরিবারের লোকেরা হুমকি দিচ্ছেন, পুরনো চিকিৎসার বিল দেখিয়ে টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন, সেগুলো সরকার আটকাবে কী ভাবে? রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথীর মতে, বেসরকারি সহায়তা জরুরি ঠিকই। কিন্তু যা চলছিল, মানুষের আস্থা হারানোটা অস্বাভাবিক নয়। তিনি বলেন, ‘‘কিছু হাসপাতাল ও এক শ্রেণির চিকিৎসকের স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে। সেটা তাদেরই ফেরাতে হবে। মানুষের আস্থা এক দিনে হারায়নি। সেটা ফিরতে কিছুটা সময় তো লাগবে।’’ তবে কেউ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে হাসপাতালের কাছ থেকে টাকা আদায়ের চেষ্টা করলে সরকার সেটাও বরদাস্ত করবে না বলে তিনি জানান।
আরও পড়ুন: ডাক্তার সেজে হাসপাতালে আইএস-হানা
মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন, জেলার বেসরকারি হাসপাতালেও এ বার থেকে নজরদারি চলবে। সেই অনুযায়ী বিভিন্ন জেলায় হাসপাতাল-নার্সিংহোমগুলির কাজকর্ম খতিয়ে দেখছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। খুঁটিয়ে দেখা হচ্ছে চিকিৎসার বিল। কোথাও সন্দেহ দেখা দিলে হাসপাতাল থেকে ঠিকানা জোগাড় করে রোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হচ্ছে।
জেলা স্তরের সরকারি হাসপাতালগুলি বরাবরই সামান্য জটিলতা দেখলে রোগীদের কলকাতায় রেফার করে দায় এড়াত। বেসরকারি হাসপাতালকে ঘিরে ডামাডোলের মধ্যে এ বার জেলার ছোট নার্সিংহোমগুলিও অতিরিক্ত সতর্ক হতে গিয়ে বহু ক্ষেত্রে সেই পথে হাঁটছে। বিষ্ণুপুর থানার কন্যানগরের সোমবারের ঘটনায় সেই প্রবণতা ফের সামনে এসেছে। চক এনায়েতপুরের বাসিন্দা সালিনা বিবি এলাকার একটি নার্সিংহোমে ভর্তি হন। অভিযোগ, অস্ত্রোপচারের পরে তাঁর রক্তক্ষরণ শুরু হলে চিকিৎসার ব্যবস্থা না করে তড়িঘড়ি তাঁকে কলকাতায় রেফার করে ওই নার্সিংহোম। কলকাতার বাঙুর হাসপাতালে আনা হলে শয্যা জোটেনি। শেষে আরেকটি নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানকার চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
স্বাস্থ্যকর্তারা জানিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট নার্সিংহোমের কর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। শহর হোক বা জেলা, অকারণ রেফার করলে তার পরিণতিও যে ভাল হবে না, সে বিষয়েও স্বাস্থ্য দফতর থেকে স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।