আলিমুদ্দিনে খবর সেরে সাংবাদিক নিজের দফতরে ফিরে আসার পরে ল্যান্ডলাইনে ফোন। পরিচয় দিয়ে ও’প্রান্ত থেকে দাবি করা হচ্ছে, জ্যোতি বসু ওই কথা মোটেও বলেননি। সে কী! বললেন যে! সাংবাদিকের পাল্টা প্রশ্নে অপ্রতিভ না হয়েই জবাব, ‘‘আপনারা কী বলেন, উনি ঠিকমতো শুনতে পান না। জানেন তো ওঁর কানের সমস্যা আছে।’’
একে বলে ‘ছায়াসঙ্গী’! বাংলার রাজনৈতিক সংসারে এই পরিভাষা যাঁর জন্য দরকার হয়েছিল, সেই জয়কৃষ্ণ ঘোষের ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই থেমে গেল বুধবার বিকেলে। নিউটাউনের বেসরকারি হাসপাতালে। প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতিবাবুর জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত টানা ৩৩ বছরের ছায়াসঙ্গী। মহাকরণে ১৯৭৭ সালে প্রথম বামফ্রন্ট সরকার আসার কয়েক মাসের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতিবাবুর আপ্ত সহায়ক পদে যোগ দিয়েছিলেন। জ্যোতিবাবু যে দিন প্রয়াত হলেন, সে দিনও হাসপাতালে বিছানার পাশে জয়কৃষ্ণ। জ্যোতিবাবু আর জয়কৃষ্ণ, দু’জনকে আলাদা করে ভাবাই যেত না।
জয়বাবুর (৬৯) মৃত্যু সংবাদ পেয়ে হাসপাতালে দৌড়েছিলেন গৌতম দেব, রমলা চক্রবর্তীরা। দেহ দান করে গিয়েছেন, সেই আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হবে শুক্রবার। চোখ দেওয়া হয়ে গিয়েছে এ দিনই। জ্যোতিবাবুর মন্ত্রিসভার সহকর্মী শ্যামল চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘জ্যোতিবাবুর জন্য জয় আক্ষরিক অর্থেই ছায়াসঙ্গী ছিল।’’ প্রথম জীবনে এনভিএফে চাকরির সুবাদে অস্ত্র-প্রশিক্ষণ ছিল। জ্যোতিবাবু বাইরে গেলে জয়কৃষ্ণের কোমরে ছোট্ট বিদেশি অস্ত্রটার খোঁজ অনেকেই রাখতেন না। তবে জ্যোতিবাবুর নির্দেশে বিরোধী নেতাদের আপ্যায়নে চোস্ত ছিলেন। কংগ্রেসের বর্ষীয়ান বিধায়ক মানস ভুঁইয়া যে কারণে বলছেন, ‘‘জ্যোতিবাবুর কাছে গেলেই ওঁর সঙ্গে দেখা হতো। জয়কে জ্যোতিবাবু তো পুত্রস্নেহে দেখতেন।’’
জ্যোতিবাবু ক্ষমতায় থাকাকালীন পুলিশকর্তাদের বদলিতে হস্তক্ষেপ করতেন বলে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যদের খুব পছন্দের লোক ছিলেন না জয়কৃষ্ণ। জ্যোতিবাবুর জীবদ্দশাতেই বিধাননগরের বুথে ভোটের দিন পুলিশের লাঠিতে মাথা ফেটেছিল তাঁর। তবে এমন নিষ্ঠাবান পার্টিকর্মীর মৃত্যুতে আনুষ্ঠানিক ভাবেই শোকপ্রকাশ করেছে আলিমুদ্দিন।